অদ্ভুত এক দৃশ্য
কেরালা ও তামিলনাড়ুর সীমানার নেট্টা এলাকায় বিরল এক সাদা কাঠবিড়ালির দেখা মিলেছে। কাঠবিড়ালিটির শরীরে এই সাদা রঙের কারণ ‘লিউসিজম’ নামে পরিচিত এক জিনগত অবস্থা। এতে প্রাণীর শরীরের রঙ আংশিকভাবে হারিয়ে যায়, ফলে গায়ের রঙ ফ্যাকাশে, সাদা বা ছোপছাপ হয়। তবে আলবিনিজমের মতো চোখের রঙ পরিবর্তন হয় না।
আবিষ্কারক পাখিপ্রেমী
তিরুবনন্তপুরমের মুদাভানমুগল সরকারি স্কুলের শিক্ষক ও পাখি ফটোগ্রাফার সুমেশ ভেলারাদা প্রথম কাঠবিড়ালিটিকে দেখেন। তিনি পাখি পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে গেলে হঠাৎই এটি চোখে পড়ে। প্রথমদিকে তাঁর তোলা ছবিগুলো স্পষ্ট না হওয়ায় বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত হতে পারেননি। পরবর্তী দিনগুলোতে তিনি একই স্থানে ফিরে গিয়ে ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পরিষ্কার ছবি তুলতে সক্ষম হন।
বিশেষজ্ঞদের নিশ্চিতকরণ
শোলা নেচার সোসাইটির সদস্য সুমেশ ছবিগুলো জমা দেন। সেগুলো পর্যালোচনা করে খ্যাতনামা সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ ড. সন্দীপ দাস নিশ্চিত করেন যে এটি আংশিক লিউসিজম আক্রান্ত কাঠবিড়ালি। সুমেশ জানান, লিউসিজম আক্রান্ত প্রাণীরা সহজেই শিকারির চোখে পড়ে যায়। তারা সাধারণত গাছে বা খোলা জায়গায় দেখা যায় না, বরং শিকারির হাত থেকে বাঁচতে পাথরের নিচে বা আড়ালে লুকিয়ে থাকে।

লিউসিজম ও প্রাণীর টিকে থাকা
গবেষক আরকিয়ানাথান স্যামসনের এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, শিকারির হুমকির কারণে ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে লিউসিজম বিরল। কারণ এরা টিকে থাকার লড়াইয়ে সাধারণত পিছিয়ে পড়ে। ফলে দেশে এ ধরনের প্রাণীর দেখা মেলা খুবই কঠিন। সুমেশের মতে, খাবারের সন্ধানে বেরোতেই এই কাঠবিড়ালিটি ধরা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিবেশ ও জলবায়ুর প্রভাব
লিউসিজম সাধারণত বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও এর সঙ্গে পরিবেশ দূষণ ও মানুষের প্রভাবের সম্পর্ক রয়েছে। ২০২১ সালে আরকিয়ানাথান স্যামসন ও জে লিওনা প্রিন্সির প্রবন্ধে বলা হয়েছে, মানুষের বসতির কাছাকাছি থাকা প্রাণীদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ও আত্মীয়ের সঙ্গে মিলনে (inbreeding) লিউসিজমের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রবন্ধে বলা হয়, আবাসস্থল ভাঙন, নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশগত ক্ষতি ও লোমকূপের সমস্যা লিউসিজম বাড়ায়, আর এগুলো জলবায়ু পরিবর্তনে আরও তীব্র হচ্ছে।
পূর্বের একটি বিরল নজির
এর আগে ২০২১ সালে তিরুবনন্তপুরমের আরেক পাখিপ্রেমী অনুপ পালোডে আথিয়াঙ্গাল জলাভূমিতে সাদা রঙের এক ভারতীয় স্পট-বিল্ড হাঁস দেখতে পান।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















