পাঠ্যপুস্তকে নারীর অনুপস্থিতি
ইংল্যান্ডের স্কুলগুলোতে ইতিহাস শিক্ষায় নারীর অবদান প্রায় উপেক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণা অনুযায়ী, এলিজাবেথ প্রথম বা অ্যান বোলিন ছাড়া নারীদের উল্লেখ খুব কম পাওয়া যায়। মূলত রাজপরিবারের কিছু নারী ও ভোটাধিকার আন্দোলনের নেত্রী এমেলিন প্যাঙ্কহার্স্ট ও এমিলি ডেভিসন ছাড়া ইতিহাসে নারীর উপস্থিতি নেই বললেই চলে।
গবেষণার ফলাফল
নারীবাদী সংগঠন “End Sexism in Schools”-এর গবেষণায় দেখা গেছে, মাধ্যমিক শিক্ষার প্রথম তিন বছরে (Key Stage 3) শেখানো ইতিহাস পাঠের ৫৯ শতাংশে নারীদের একেবারেই উল্লেখ করা হয়নি। মাত্র ১২ শতাংশ পাঠ নারীদের নিয়ে ছিল, আর ২৯ শতাংশে নারীর নাম এসেছে অন্য প্রসঙ্গে।
যেসব ক্ষেত্রে নারীর কথা বলা হয়েছে, সেখানে তাদেরকে বেশিরভাগ সময় ভুক্তভোগী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, ‘জ্যাক দ্য রিপার’-এর হাতে নিহত নারীদের ইতিহাস পড়ানো হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্লেচলি পার্কের নারী কোড ভাঙা বিশেষজ্ঞদের সাফল্য উপেক্ষিত থেকেছে। গবেষকরা বলছেন, ইতিহাসে উপেক্ষিত নারীদের অবদান—যেমন ১৩৮১ সালের কৃষক বিদ্রোহের নেত্রী জোহানা ফেররের কথা—উল্লেখ করলে শিক্ষাঙ্গনে নারী বিদ্বেষ কমাতে সহায়তা করবে।
![]()
সমতার পাঠের প্রয়োজনীয়তা
সংগঠনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ডেবি ব্রাজিল বলেন, “নারীদের প্রতিনিধিত্বশীল ইতিহাস পাঠ শুধু অতিরিক্ত সংযোজন নয়, বরং এটি ইতিহাসের যথার্থতা ও ন্যায্য শিক্ষার বিষয়। যদি তা না হয়, তাহলে আমরা জনগোষ্ঠীর অর্ধেককে উপেক্ষা করছি এবং অতীতের বিকৃত চিত্র পড়াচ্ছি।”
তিনি আরও বলেন, “ফলে মেয়েরা ইতিহাসের সাথে নিজেদের মিল খুঁজে পায় না, ছেলেরা সহমর্মিতা ও ইতিবাচক রোল মডেল থেকে বঞ্চিত হয়, আর পুরো সমাজ একটি বিকৃত ঐতিহাসিক ধারণা উত্তরাধিকারসূত্রে পায় যা নারী বিদ্বেষকে বাড়িয়ে তোলে।”
লেখকদের মতামত
খ্যাতনামা লেখক কেট মোস, যিনি ‘উইমেনস প্রাইজ ফর ফিকশন’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা, বলেন, “আমাদের সেই সব নারী ও মেয়েদের ইতিহাসে ফিরিয়ে আনতে হবে যাদের অবদান কখনো লিপিবদ্ধ হয়নি। নারী ও পুরুষ মিলে পৃথিবী গড়েছে—জনসংখ্যার অর্ধেকের সাফল্যকে আমরা উপেক্ষা করতে পারি না।”

নীতি পরিবর্তনের দাবি
সংগঠনটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় পাঠ্যক্রমে নারীদের ভূমিকা বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে এবং পরীক্ষার বোর্ডগুলোকে বিভিন্ন যুগের আরও বেশি নারীর নাম প্রশ্নপত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে। বর্তমানে জাতীয় পাঠ্যক্রমে শুধু এলিজাবেথ প্রথম ও মেরি প্রথমের নাম রয়েছে। ২০২৩ সালে GCSE এবং A লেভেল ইতিহাস পরীক্ষার প্রশ্নে নারীর উপস্থিতি ছিল মাত্র ৬ শতাংশ।
এই গবেষণা পরিষ্কার করে দেখিয়েছে, ইতিহাস শিক্ষায় নারীর অবদানকে যথাযথভাবে উপস্থাপন না করলে শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, বরং পুরো সমাজ একটি অসম ও পক্ষপাতদুষ্ট ইতিহাস ধারণ করবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















