এশিয়া কাপ ২০২৫-এর ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে ভারত। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে বৃহস্পতিবারের সুপার ফোরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচের বিজয়ী দল। ইতোমধ্যেই শিরোপা দৌড় থেকে ছিটকে গেছে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশকে ৪১ রানে হারিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত।
জয়টা ভারতের জন্য যেমন সহজ ছিল, তেমনি কিছু জায়গায় অস্বস্তিও ছিল।
বাংলাদেশের ১৬৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করার সময় এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছে।
ভারতের বোলিং আক্রমণের গভীরতা ও বৈচিত্র্য বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সীমাবদ্ধতাকে স্পষ্ট করে তুলেছে।
তবে বাংলাদেশের আফসোস থাকবে–– কারণ রিশাদ, তানজিম সাকিব, মুস্তাফিজরা দারুণভাবে ভারতকে চেপে ধরেছিল।
যখন অভিষেক শর্মার ব্যাটে ভারতের স্কোর ২০০’রও বেশি হওয়ার ইঙ্গিত মিলছিল, কিন্তু অভিষেক ৩৭ বলে ৭৫ করে আউট হওয়ার পর ভারতের রানের গতি কমে আসে।
যে কারণে ১১ ওভারে ১১২ করা ভারত, শেষ ৯ ওভারে রান তোলে ৫৬।
ভালো শুরুর পরে খেই হারিয়েছে বাংলাদেশ
বল ও ব্যাট হাতে উভয় ক্ষেত্রেই ভালো একটা শুরু পেয়েও খেই হারিয়েছে বাংলাদেশ দল।
তৃতীয় ওভারে মাত্র ৭ রানে থাকা অভিষেক শর্মাকে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। তানজিম হাসান সাকিবের বলে ব্যাটের কানায় লেগে বল গিয়েছিল উইকেটকিপারের হাতে, কিন্তু তিনি সেটি ধরে রাখতে পারেননি।
চারটি পরিবর্তন নিয়ে নামা বাংলাদেশ দলে জায়গা পাওয়া তানজিম নতুন বলে দুর্দান্ত বোলিং করেন, বলকে সুইং করানোর পাশাপাশি জোরে বাউন্সও করাচ্ছিলেন।
পাঁজরের চোটে ছিটকে যাওয়া লিটন দাসের জায়গায় অধিনায়কের ভূমিকা পালন করেছেন জাকের আলি অনিক।
যদিও প্রথম প্রচেষ্টায় অভিষেক শর্মা ও শুভমান গিলকে আউট করতে পারেনি বাংলাদেশ।
ইনিংসের প্রথম ওভারেই তানজিম দু’বার গিলের ব্যাটে বল লাগতে দেননি।
আর বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ দ্বিতীয় ওভারে দক্ষতার সঙ্গে সুইং করা আর্ম বল ব্যবহার করে অভিষেককে চাপে রাখেন।
তৃতীয় ওভার শেষে ভারতের রান রেট তখনও ছিল ওভারপ্রতি ৬-এরও কম।
তবে ভারত ধীরে ধীরে খেলায় ফেরে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে, ১ ওভারে ৩, ২ ওভারে ৭ ও ৩ ওভারে ১৭ তোলা ভারত, ৪ ওভারে রান তোলে ৩৮।
ব্যাট হাতেও বাংলাদেশ ম্যাচের বেশ খানিকটা সময় জুড়ে ইতিবাচক একটা অবস্থানে ছিল।
ক্যাচ মিসের মাশুল দিয়েছে বাংলাদেশ
তানজিম সাকিবের বলে উইকেটের পেছনে জাকের আলির হাতে জীবন পেয়েছিলেন অভিষেক শর্মা। তখন তার সংগ্রহ মাত্র ৮ বলে ৭ রান।
সেই জীবন পেয়ে আরও ৬৮ রান যোগ করেন তিনি। এই ধরনের সুযোগ হাতছাড়া করলে যে ভোগান্তি পোহাতে হয়, তার প্রমাণ মিলেছে এই ম্যাচেই।
পাওয়ারপ্লেতে কোনো উইকেট না পেয়ে ৭২ রান খরচ করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভারতকে ১৬৮ রানে থামিয়ে দেওয়া সত্যিই উল্লেখযোগ্য প্রত্যাবর্তন।
শেষ পাঁচ ওভারে এসেছে মাত্র ৩৬ রান, আর শেষ দশ ওভারে ৭২, এটা নিঃসন্দেহে অসাধারণ বোলিংয়েরই দৃষ্টান্ত।
বিশেষভাবে চোখে পড়েছে রিশাদের দুর্দান্ত ফিল্ডিং। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে তার দারুণ থ্রোয়ে মুস্তাফিজুরের হাতে অভিষেককে রানআউট করা ছিল এক কথায় অবিশ্বাস্য। সেখান থেকেই ভারতের রান রেট কমতে থাকে।
বল হাতে নিজেদের দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই পালন করেছে বাংলাদেশের বোলাররা। ভারতের ব্যাটারদের প্রত্যাশিত বড় সংগ্রহে পৌঁছাতে দেয়নি তারা।
তবে অভিষেকের ক্যাচ মিস শেষ পর্যন্ত বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে দুই দলের মাঝে।
ভারতীয় স্পিনারদের দাপট
মাঝের ওভারগুলোতে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন ভারতের স্পিনাররা। ষষ্ঠ ওভারেই পারভেজ হোসেন আউট হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের রানের গতি একেবারে আটকে যায়।
এরপর ভরুণ চক্রবর্তী বোল্ড করেন শামীম হোসেনকে। আর ১৩তম ওভারে রান আউট হয়ে ফেরেন অধিনায়ক জাকের আলি। তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৮৭/৫।
তবে অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাইফ হাসান, যিনি লড়াই চালিয়ে যান। ছক্কা হাঁকিয়ে তিনি পূর্ণ করেন নিজের অর্ধশতক এবং একই ওভারে আরও একটি ছক্কা মারেন। ১৪তম ওভারে আসে ১৫ রান।
অর্ধেক ওভার শেষে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ ম্যাচে টিকে আছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় রানরেট ধীরে ধীরে নাগালের বাইরে যেতে থাকে।
পাওয়ারপ্লেতে আবারও তিন ওভার বল করে জসপ্রিত বুমরাহ প্রথম ওভারেই সাফল্য পান।
নতুন বলে দারুণ সুইং করাচ্ছিলেন তিনি, আর এক পর্যায়ে পরপর আট বলে ছয়বার পরাজিত করেন পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাট।
যদিও শুরুতে সেই লড়াই সামলে নিয়ে ইমন এক ছক্কা মারেন বুমরাহকে, আর ভরুণ চক্রবর্তীর বিপক্ষে দুটি সুইপ করে চার আনেন।
কিন্তু সপ্তম ওভারে কুলদীপ যাদবের প্রথম বলেই ভুল শট খেলে আউট হন তিনি।
এরপর খেলা দুই প্রান্তে ভাগ হয়ে যায়, এক প্রান্তে সাইফ নিজের শট খেলার ক্ষমতা দেখাচ্ছিলেন, বিশেষ করে অক্ষর প্যাটেলের বিপক্ষে মেরেছেন তিনটি ছক্কা।
অন্য প্রান্তে উইকেট আসা-যাওয়া চলছিল, আর ১৩তম ওভারে দ্রুত সিঙ্গেল নিতে গিয়ে জাকের রানআউট হলে কার্যত বাংলাদেশের লড়াইয়ের শেষ হয়, তখন সাইফের পঞ্চাশও পূর্ণ হয়নি।
শেষ পর্যন্ত কুলদীপ তার স্বভাবসুলভ ভেলকিতে টানা দুই বলে দুই উইকেট নিলেন, ভারতের ফিল্ডাররা কয়েকটি ক্যাচ ফেলায় সাইফের ইনিংস টেনে নিল ১৮তম ওভার পর্যন্ত, বুমরাহ ফিরে এসে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নিলেন, আর পার্ট টাইমার তিলক শেষ উইকেট নিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশের আসলে এখন আর বিশ্রামের সময় নেই, ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের ব্যবধানে তাদের খেলতে হবে পাকিস্তানের বিপক্ষে, যা কার্যত একপ্রকার সেমি-ফাইনালের মতো লড়াই।
BBC News বাংলা