০১:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহযোগিতায় নতুন দিগন্ত মার্ক উড আশ্বাস দিলেন, অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ার কটাক্ষ সত্ত্বেও আত্মবিশ্বাসী ইংল্যান্ড দল তাপ থেরাপিতে রক্তচাপ কমানোর আশার আলো: নতুন গবেষণায় চমকপ্রদ ফলাফল জাকার্তার মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: আতঙ্কে শহর, আহত ৫৫ জন গাজায় বর্জ্য সংকট: দূষণে ডুবে স্বাস্থ্য বিপর্যয় তানজানিয়ায় রক্তে রাঙানো দমন-পীড়ন: এক ভয়াবহ নতুন বাস্তবতা ভারতের অদ্ভুত স্থিতিশীলতা একক জীবন: বৈশ্বিক এককতা বৃদ্ধির কারণ এবং প্রভাব স্ট্র্যাটেজিক অজ্ঞতা: ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভ্রান্তি মানসিক স্বাস্থ্য: আমেরিকার মডেল মোবাইল সংকট সেবার উত্থান ও পতন

‘বেবি স্টেপস’: বিদ্রুপে ভরা এক খেলাচ্ছলে পদচারণা

গেমটির মূল ধারণা

‘বেবি স্টেপস’ একটি ভিডিও গেম, যেখানে ৩৫ বছর বয়সী নেট নামের এক ব্যক্তিকে দেখা যায়। তিনি এক নোংরা ওয়ানসিতে মোড়ানো, জীবন নিয়ে অনুপ্রেরণা হারানো মানুষ। হঠাৎ জাদুর মতো তাকে সোফা থেকে টেনে বের করে আনা হয় একটি আধুনিক ওপেন-ওয়ার্ল্ড ভিডিও গেমের ভেতরে। এই গেম একইসঙ্গে আধুনিক গেম ডিজাইনের প্রতি বিদ্রুপ এবং শ্রদ্ধা জানায়।

গেমটি তৈরি করেছেন বেনেট ফডি, যিনি আগে ‘QWOP’ ও ‘Getting Over It’ এর মতো গেম বানিয়ে পরিচিত হয়েছেন। এবার তার সঙ্গে আছেন ম্যাক্সি বোচ ও গেব কাজ্জিলো। তাদের যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই গেমটি প্লেস্টেশন ৫ ও পিসির জন্য প্রকাশিত হয়েছে। ফডি একে মজার ছলে বলেছেন “এএএ কসপ্লে।”


খেলার জটিলতা ও চ্যালেঞ্জ

গেমের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো হাঁটা। খেলোয়াড়কে কন্ট্রোলারের বাম-ডান ট্রিগার দিয়ে নেটের পা সরাতে হয় এবং ডান পাশের অ্যানালগ স্টিক দিয়ে তার পায়ের অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সহজ শোনালেও বাস্তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

নেট শুধু হাঁটতেই কষ্ট পায় না, সে সামাজিক দিক থেকেও দুর্বল। অন্যদের সাহায্য নিতে চায় না, এমনকি বিনা দামে দেওয়া জুতোও প্রত্যাখ্যান করে। তার অনিরাপত্তা ও ব্যর্থতার ভয় চরিত্রটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।


গল্প ও চরিত্র নির্মাণ

ফডির ভাষায়, নেট আসলে এক ধরনের ব্যর্থ চরিত্র: যাকে বলা যায় ‘ফেলসন’। তিনি নায়ক নন, বরং এমন একজন মানুষ যিনি জীবনের জন্য তৈরি নন। এভাবেই গেমটি প্রচলিত নায়ককেন্দ্রিক ভিডিও গেমগুলোর প্রতি ব্যঙ্গ করেছে।

ফডি বলেন, “আমরা যখন গেম খেলি, তখন আমরা অনেক সময় নির্দেশনা এড়িয়ে যাই, টিউটোরিয়াল দেখি না। এই চরিত্রও তেমনই—অতিরিক্ত গর্বিত, সাহায্য নিতে চায় না।”


উন্নয়ন প্রক্রিয়া

গেমটির কাজ শুরু হয়েছিল মহামারীর আগেই। ফডি, কাজ্জিলো এবং বোচ মিলে নিউইয়র্কে ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্ট থেকে এর মূল কাজ সম্পন্ন করেন। বোচের ব্লকবাস্টার মিউজিক ও নাচের গেম তৈরির অভিজ্ঞতা এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

খেলোয়াড় যখন ভুলবশত কাদা বা পাথরের স্তূপে পড়ে গেলে, তখনও তাকে পুরস্কার দেওয়া হয় মজার কথোপকথনের মাধ্যমে। এই ব্যর্থতাকেও গেমটি আনন্দের অংশ করে তুলেছে।


খেলার অভিজ্ঞতা

গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার এই গেমটিতে খেলোয়াড়কে বারবার নতুন মানসিক অবস্থায় যেতে হয়। কখনো শান্ত ধ্যানমগ্নভাবে খেলতে হয়, আবার কখনো যুক্তি প্রয়োগ করে সাবধানে এগোতে হয়। ফডির মতে, এই মানসিক ওঠানামাই গেম খেলার প্রকৃত আনন্দ।

গেমটির তুলনা টানা হয়েছে ২০১৯ সালে হিদেও কোজিমার ‘ডেথ স্ট্র্যান্ডিং’-এর সঙ্গে, যেটি অনেকের কাছে “ওয়াকিং সিমুলেটর” নামে পরিচিত। তবে ফডি বলেন, তারা সেই প্রচলিত ধারা ভাঙতে চেয়েছেন।


ইন্ডি গেম বনাম বড় বাজেটের গেম

‘বেবি স্টেপস’-এর প্রকাশের তারিখ বদলানো হয় ‘হলো নাইট: সিল্কসঙ’-এর ভিড় এড়াতে। ফডি বিশ্বাস করেন, বড় কোম্পানির ফর্মুলাভিত্তিক গেমগুলোর বাইরে ছোট টিমের তৈরি গেমই নতুন ধারার পথ দেখাচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘মাইনক্রাফ্ট’-এর সাফল্য গেম ইন্ডাস্ট্রির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ছোট টিমের গেম তৈরি এখন মূলধারায় জায়গা করে নিয়েছে।


সব মিলিয়ে, ‘বেবি স্টেপস’ হলো ভিডিও গেমের এক খেলাচ্ছলে তৈরি পরীক্ষা—যেখানে প্রতিটি অদ্ভুত, অস্থির পদক্ষেপও আশার প্রতীক। গেমটি প্রমাণ করে, ভিডিও গেম নামক তরুণ মাধ্যমটি এখনও প্রতিটি ধাপে নিজস্ব পথ খুঁজে নিচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সহযোগিতায় নতুন দিগন্ত

‘বেবি স্টেপস’: বিদ্রুপে ভরা এক খেলাচ্ছলে পদচারণা

০৩:৫৭:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গেমটির মূল ধারণা

‘বেবি স্টেপস’ একটি ভিডিও গেম, যেখানে ৩৫ বছর বয়সী নেট নামের এক ব্যক্তিকে দেখা যায়। তিনি এক নোংরা ওয়ানসিতে মোড়ানো, জীবন নিয়ে অনুপ্রেরণা হারানো মানুষ। হঠাৎ জাদুর মতো তাকে সোফা থেকে টেনে বের করে আনা হয় একটি আধুনিক ওপেন-ওয়ার্ল্ড ভিডিও গেমের ভেতরে। এই গেম একইসঙ্গে আধুনিক গেম ডিজাইনের প্রতি বিদ্রুপ এবং শ্রদ্ধা জানায়।

গেমটি তৈরি করেছেন বেনেট ফডি, যিনি আগে ‘QWOP’ ও ‘Getting Over It’ এর মতো গেম বানিয়ে পরিচিত হয়েছেন। এবার তার সঙ্গে আছেন ম্যাক্সি বোচ ও গেব কাজ্জিলো। তাদের যৌথ উদ্যোগে তৈরি এই গেমটি প্লেস্টেশন ৫ ও পিসির জন্য প্রকাশিত হয়েছে। ফডি একে মজার ছলে বলেছেন “এএএ কসপ্লে।”


খেলার জটিলতা ও চ্যালেঞ্জ

গেমের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো হাঁটা। খেলোয়াড়কে কন্ট্রোলারের বাম-ডান ট্রিগার দিয়ে নেটের পা সরাতে হয় এবং ডান পাশের অ্যানালগ স্টিক দিয়ে তার পায়ের অবস্থান নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। সহজ শোনালেও বাস্তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

নেট শুধু হাঁটতেই কষ্ট পায় না, সে সামাজিক দিক থেকেও দুর্বল। অন্যদের সাহায্য নিতে চায় না, এমনকি বিনা দামে দেওয়া জুতোও প্রত্যাখ্যান করে। তার অনিরাপত্তা ও ব্যর্থতার ভয় চরিত্রটিকে আরও জটিল করে তুলেছে।


গল্প ও চরিত্র নির্মাণ

ফডির ভাষায়, নেট আসলে এক ধরনের ব্যর্থ চরিত্র: যাকে বলা যায় ‘ফেলসন’। তিনি নায়ক নন, বরং এমন একজন মানুষ যিনি জীবনের জন্য তৈরি নন। এভাবেই গেমটি প্রচলিত নায়ককেন্দ্রিক ভিডিও গেমগুলোর প্রতি ব্যঙ্গ করেছে।

ফডি বলেন, “আমরা যখন গেম খেলি, তখন আমরা অনেক সময় নির্দেশনা এড়িয়ে যাই, টিউটোরিয়াল দেখি না। এই চরিত্রও তেমনই—অতিরিক্ত গর্বিত, সাহায্য নিতে চায় না।”


উন্নয়ন প্রক্রিয়া

গেমটির কাজ শুরু হয়েছিল মহামারীর আগেই। ফডি, কাজ্জিলো এবং বোচ মিলে নিউইয়র্কে ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্ট থেকে এর মূল কাজ সম্পন্ন করেন। বোচের ব্লকবাস্টার মিউজিক ও নাচের গেম তৈরির অভিজ্ঞতা এতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

খেলোয়াড় যখন ভুলবশত কাদা বা পাথরের স্তূপে পড়ে গেলে, তখনও তাকে পুরস্কার দেওয়া হয় মজার কথোপকথনের মাধ্যমে। এই ব্যর্থতাকেও গেমটি আনন্দের অংশ করে তুলেছে।


খেলার অভিজ্ঞতা

গড়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার এই গেমটিতে খেলোয়াড়কে বারবার নতুন মানসিক অবস্থায় যেতে হয়। কখনো শান্ত ধ্যানমগ্নভাবে খেলতে হয়, আবার কখনো যুক্তি প্রয়োগ করে সাবধানে এগোতে হয়। ফডির মতে, এই মানসিক ওঠানামাই গেম খেলার প্রকৃত আনন্দ।

গেমটির তুলনা টানা হয়েছে ২০১৯ সালে হিদেও কোজিমার ‘ডেথ স্ট্র্যান্ডিং’-এর সঙ্গে, যেটি অনেকের কাছে “ওয়াকিং সিমুলেটর” নামে পরিচিত। তবে ফডি বলেন, তারা সেই প্রচলিত ধারা ভাঙতে চেয়েছেন।


ইন্ডি গেম বনাম বড় বাজেটের গেম

‘বেবি স্টেপস’-এর প্রকাশের তারিখ বদলানো হয় ‘হলো নাইট: সিল্কসঙ’-এর ভিড় এড়াতে। ফডি বিশ্বাস করেন, বড় কোম্পানির ফর্মুলাভিত্তিক গেমগুলোর বাইরে ছোট টিমের তৈরি গেমই নতুন ধারার পথ দেখাচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, ‘মাইনক্রাফ্ট’-এর সাফল্য গেম ইন্ডাস্ট্রির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। ছোট টিমের গেম তৈরি এখন মূলধারায় জায়গা করে নিয়েছে।


সব মিলিয়ে, ‘বেবি স্টেপস’ হলো ভিডিও গেমের এক খেলাচ্ছলে তৈরি পরীক্ষা—যেখানে প্রতিটি অদ্ভুত, অস্থির পদক্ষেপও আশার প্রতীক। গেমটি প্রমাণ করে, ভিডিও গেম নামক তরুণ মাধ্যমটি এখনও প্রতিটি ধাপে নিজস্ব পথ খুঁজে নিচ্ছে।