গ্যাগল ব্যবহারের সূচনা
কানসাসের লরেন্স হাই স্কুল ২০২৩ সালে গ্যাগল সেফটি ম্যানেজমেন্ট নামের একটি এআই টুল কিনে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ইমেইল, নথি ও স্কুল অ্যাকাউন্টে আপলোড করা ফাইলগুলো স্ক্যান করা হয়। উদ্দেশ্য হলো মাদক ব্যবহার, আত্মহত্যার ইঙ্গিত, সহিংসতার হুমকি বা অন্যান্য বিপজ্জনক আচরণের লক্ষণ ধরা। এসব বিষয় ধরা পড়লে টুলটি মুছে ফেলে বা স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানায়।
শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা ও অভিযোগ
শিক্ষার্থীরা বলছে, টুলটি অনেক সময় অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করছে। যেমন, এক আর্ট শিক্ষার্থীর পোর্টফোলিও থেকে ট্যাঙ্কটপ পরা মেয়েদের ছবি মুছে ফেলা হয়। ভুলভাবে এটিকে শিশু পর্নোগ্রাফি হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল। আরেক শিক্ষার্থী কেবল মজার ছলে “gonna die” লিখেছিল শারীরিক পরীক্ষায় ক্রক্স পরে দৌড়ানোর প্রসঙ্গে, কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
সাবেক ছাত্রী সুজানা কেনেডি স্কুলের কাছে তথ্য জানতে চাইলে গ্যাগল নিজেই সেই ইমেইল আটকে দেয়। ফলে তিনি উত্তর পাননি। শিক্ষার্থীদের মতে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলাও এখন ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়, কারণ শব্দ ব্যবহারের কারণে কাজ মুছে যাওয়া বা শিক্ষককে রিপোর্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

স্কুল কর্তৃপক্ষের অবস্থান
স্কুল বোর্ড বলছে, গ্যাগল ব্যবহার করে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আত্মহত্যা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট অ্যান্থনি লুইস জানান, এই টুল থেকে পাওয়া তথ্য সরাসরি জীবন রক্ষায় সহায়তা করেছে। স্কুলের ওয়েবসাইটে বলা আছে, আত্মহানি, হতাশা, সাইবার বুলিং, মাদক, সহিংসতা বা হুমকির মতো বিষয়গুলো শনাক্ত করাই এর লক্ষ্য।
মামলা ও আইনি বিতর্ক
২০২৪ সালে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থী মামলা করে, অভিযোগ আনে গ্যাগল নজরদারি শিক্ষার্থীদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। আর্ট ও সাংবাদিকতার কিছু শিক্ষার্থীকে “অশ্লীল ছবি” আপলোড করার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছিল। তবে পরে দেখা যায়, ছবিগুলো ছিল সাধারণ ফটোগ্রাফ।
ছাত্রী ওপাল মরিস জানান, তাকে নিরাপত্তাকর্মীরা ক্লাস থেকে বের করে আনেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ফেরত পাঠানো হলেও, তার পোর্টফোলিওর একটি ছবি গায়েব হয়ে যায়। ছাত্র সংবাদপত্র দ্য বাজেট অভিযোগ করে, শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতা নোট স্ক্যান করে গ্যাগল তাদের উৎস প্রকাশ করে দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
বিস্তৃত প্রভাব ও উদ্বেগ
২০২৩ সালের আগস্টে গ্যাগলের সঙ্গে তিন বছরের জন্য প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের চুক্তি হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য এ থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। এক শিক্ষার্থী কলেজ ভর্তি প্রবন্ধে “mental health” শব্দ ব্যবহারের কারণে গ্যাগলের নজরে আসে, যদিও প্রবন্ধটি তার বন্ধুর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ছিল।
সুজানা কেনেডির সংগ্রহ করা নথি অনুযায়ী, নভেম্বর ২০২৩ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত গ্যাগল প্রায় ১২০০ কনটেন্টকে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ১৮টি ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো হয়। প্রায় ৮০০টি ঘটনা পরে “গুরুত্বহীন” হিসেবে ধরা হয়। উদাহরণস্বরূপ, এক শিক্ষার্থী “I wanted to kill” লিখেছিল—আসলে সে দাদিকে একটি মাছি মারতে বলছিল।

সমালোচনা ও ঝুঁকি
এক অনুসন্ধানে উঠে আসে, গ্যাগল সিস্টেমে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে। পাসওয়ার্ড ছাড়া শিক্ষার্থীদের ফ্ল্যাগ করা স্ক্রিনশট দেখা যাচ্ছিল। উত্তর ক্যারোলাইনা ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় কয়েকজন এলজিবিটি-কিউ শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য পরিবার বা স্কুল কর্মকর্তাদের কাছে ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
শিক্ষা নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আমান্ডা ক্লিঙ্গার মনে করেন, এসব এআই টুল শিক্ষকদের সহায়তা করতে পারে, তবে ভুল প্রয়োগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অতিরিক্ত নজরদারির ভয় তৈরি করছে। তার মতে, “শিক্ষকদের অবস্থান কঠিন, কিন্তু আমাদের এসব টুলের সীমাবদ্ধতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল স্পষ্টভাবে দেখতে হবে।”
গ্যাগল কোম্পানি বলছে, তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারেও যত্নশীল। তবে শিক্ষার্থীরা মনে করছে, এটি তাদের সৃজনশীলতা ও স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর নজরদারি। ফলে নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার টানাপোড়েনকে ঘিরে বিতর্ক ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















