০৯:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

সুইপড’ আসল গল্প: হুলুর লিলি জেমস অভিনীত চলচ্চিত্র কতটা সত্যি?

হুলুর নতুন সিনেমা ও প্রযুক্তি জগতে নারীদের গল্প

হুলুতে সম্প্রচার শুরু হওয়া নতুন সিনেমা সুইপড দেখে সহজেই বোঝা যায় কেন প্রযুক্তি খাতে নারী সিইও এত কম। লিলি জেমস অভিনীত এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন রেচেল লি গোল্ডেনবার্গ। তিনিই বিল পার্কার এবং কিম কারামেলোর সঙ্গে মিলে চিত্রনাট্যও লিখেছেন।

সিনেমাটি বাম্বল প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হুইটনি উল্ফ হার্ডের সত্য কাহিনির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। বাম্বল এমন একটি ডেটিং অ্যাপ যেখানে নারী প্রথমে বার্তা না পাঠালে পুরুষরা বার্তা পাঠাতে পারে না। কিন্তু তার আগে তিনি টিন্ডারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন—একটি অ্যাপ যেখানে হয়রানি ও অনাকাঙ্ক্ষিত বার্তার অভিযোগ ছিল প্রায়শই।

সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন ড্যান স্টিভেন্স, মাইহালা ও জ্যাকসন হোয়াইট। এতে তুলে ধরা হয়েছে বাম্বলের জন্মের অজানা ও নাটকীয় গল্প, যা গোপন রাখা হয়েছিল উল্ফের আইনি চুক্তির কারণে। তবে মনে রাখতে হবে, এটি কোনো প্রামাণ্যচিত্র নয়—সব কিছু পুরোপুরি সত্য নয়।


সিনেমাটি আসল কাহিনির ভিত্তিতে কতটা তৈরি?

হ্যাঁ, সুইপড আসল কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত। লিলি জেমস এখানে অভিনয় করেছেন হুইটনি উল্ফের চরিত্রে। তিনি টিন্ডারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং পরে বাম্বল চালু করেন। ২০১৪ সালে উল্ফ যৌন হয়রানির মামলা করেছিলেন এবং প্রায় এক মিলিয়ন ডলারের বেশি সমঝোতা পান বলে জানা যায়।

চলচ্চিত্রে বাস্তব কিছু চরিত্রও দেখানো হয়েছে—উল্ফের স্বামী মাইকেল হার্ড, টিন্ডারের সিইও শন র‍্যাড, সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাস্টিন মাটিন এবং রুশ টেক উদ্যোক্তা ও বাম্বলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রে আন্দ্রিভ।


আসল ঘটনার সঙ্গে সিনেমার পার্থক্য

সিনেমার শেষে একটি স্পষ্ট ঘোষণা আছে—আসল হুইটনি উল্ফ এতে কোনো ভূমিকা রাখেননি এবং গল্প নাটকীয় করার জন্য কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশেষ করে টিন্ডারে কাজ করার সময় উল্ফের প্রতি বৈষম্য ও মামলার ঘটনাগুলো অনুমানভিত্তিক।

তবে কিছু সত্য ঘটনা সরাসরি সিনেমায় এসেছে। যেমন: জাস্টিন মাটিনের পাঠানো অশালীন ও হুমকি-মূলক বার্তা, যা মামলার নথিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব বার্তায় মাটিন উল্ফকে অপমান করেছিলেন, যা সিনেমায় দেখানো হয়েছে। একইভাবে শন র‍্যাডের সঙ্গে উল্ফের টেক্সট বিনিময়ও হুবহু রাখা হয়েছে।

এছাড়া টিন্ডারের প্রচারণার জন্য উল্ফের কলেজে সোরোরিটি মিটিংয়ে গিয়ে মেয়েদের সাইন-আপ করানো এবং ছেলেদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্র্যাটারনিটি সংগঠনে যাওয়া—এসব ঘটনাও সত্যি। রুশ উদ্যোক্তা আন্দ্রিভের কাছে নতুন অ্যাপের প্রস্তাব দেওয়া, ‘বাম্বল’ নামটি প্রথমে অপছন্দ করা ইত্যাদিও বাস্তব ঘটনা।


পুরোপুরি কাল্পনিক অংশ

কিছু চরিত্র ও ঘটনা সম্পূর্ণ কল্পিত। যেমন, মাইহালা অভিনীত ‘তিশা’ চরিত্রটি বাস্তবে ছিল না। প্রকৃতপক্ষে উল্ফের প্রাথমিক বাম্বল টিমে সাদা নারী সদস্যরাই ছিলেন। পরিচালক রেচেল লি গোল্ডেনবার্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি আনার জন্য চরিত্রটি যুক্ত করেন।

সবচেয়ে বড় কাল্পনিক দৃশ্য হলো সিনেমার শেষে উল্ফের দেওয়া জোরালো বক্তৃতা, যেখানে তিনি আন্দ্রিভের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। বাস্তবে ২০১৯ সালের ফোর্বস রিপোর্টে আন্দ্রিভের অফিসে যৌন হয়রানি ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশের পর তিনি তার শেয়ার বিক্রি করেন। প্রথমে উল্ফ তাকে রক্ষা করেছিলেন, পরে অবস্থান বদলান। তবে সিনেমার মতো নাটকীয় বক্তব্য তিনি দেননি। বরং টেক ক্রাঞ্চে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বিষয়টিকে এড়িয়ে যান।

ফোর্বস অবশ্য নিজেদের প্রতিবেদনের পক্ষে দৃঢ় থাকে এবং উল্ফের বক্তব্যকে বিভ্রান্তিমূলক আখ্যা দেয়।


আসল হুইটনি উল্ফ বনাম সিনেমার উল্ফ

সিনেমায় উল্ফকে নারীবাদী নায়িকা হিসেবে দেখানো হয়েছে, যিনি দৃঢ়ভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। বাস্তব উল্ফের অবস্থান আরও জটিল। তিনি একদিকে সফল নারী উদ্যোক্তা, অন্যদিকে জটিল পরিস্থিতিতে প্রায়শই সমঝোতার পথে হেঁটেছেন।

অতএব, সুইপড বিনোদনমূলক হলেও এটিকে হুইটনি উল্ফ হার্ডের আসল জীবনের নির্ভুল প্রতিচ্ছবি ভাবা যাবে না। এটি সত্য ও কল্পনার মিশ্রণ, যা দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পুরান ঢাকার অতীত দিনের কথা ( কিস্তি-১১০)

সুইপড’ আসল গল্প: হুলুর লিলি জেমস অভিনীত চলচ্চিত্র কতটা সত্যি?

০৩:৪৯:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

হুলুর নতুন সিনেমা ও প্রযুক্তি জগতে নারীদের গল্প

হুলুতে সম্প্রচার শুরু হওয়া নতুন সিনেমা সুইপড দেখে সহজেই বোঝা যায় কেন প্রযুক্তি খাতে নারী সিইও এত কম। লিলি জেমস অভিনীত এই সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন রেচেল লি গোল্ডেনবার্গ। তিনিই বিল পার্কার এবং কিম কারামেলোর সঙ্গে মিলে চিত্রনাট্যও লিখেছেন।

সিনেমাটি বাম্বল প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও হুইটনি উল্ফ হার্ডের সত্য কাহিনির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। বাম্বল এমন একটি ডেটিং অ্যাপ যেখানে নারী প্রথমে বার্তা না পাঠালে পুরুষরা বার্তা পাঠাতে পারে না। কিন্তু তার আগে তিনি টিন্ডারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন—একটি অ্যাপ যেখানে হয়রানি ও অনাকাঙ্ক্ষিত বার্তার অভিযোগ ছিল প্রায়শই।

সিনেমাটিতে আরও অভিনয় করেছেন ড্যান স্টিভেন্স, মাইহালা ও জ্যাকসন হোয়াইট। এতে তুলে ধরা হয়েছে বাম্বলের জন্মের অজানা ও নাটকীয় গল্প, যা গোপন রাখা হয়েছিল উল্ফের আইনি চুক্তির কারণে। তবে মনে রাখতে হবে, এটি কোনো প্রামাণ্যচিত্র নয়—সব কিছু পুরোপুরি সত্য নয়।


সিনেমাটি আসল কাহিনির ভিত্তিতে কতটা তৈরি?

হ্যাঁ, সুইপড আসল কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত। লিলি জেমস এখানে অভিনয় করেছেন হুইটনি উল্ফের চরিত্রে। তিনি টিন্ডারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং পরে বাম্বল চালু করেন। ২০১৪ সালে উল্ফ যৌন হয়রানির মামলা করেছিলেন এবং প্রায় এক মিলিয়ন ডলারের বেশি সমঝোতা পান বলে জানা যায়।

চলচ্চিত্রে বাস্তব কিছু চরিত্রও দেখানো হয়েছে—উল্ফের স্বামী মাইকেল হার্ড, টিন্ডারের সিইও শন র‍্যাড, সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাস্টিন মাটিন এবং রুশ টেক উদ্যোক্তা ও বাম্বলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আন্দ্রে আন্দ্রিভ।


আসল ঘটনার সঙ্গে সিনেমার পার্থক্য

সিনেমার শেষে একটি স্পষ্ট ঘোষণা আছে—আসল হুইটনি উল্ফ এতে কোনো ভূমিকা রাখেননি এবং গল্প নাটকীয় করার জন্য কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশেষ করে টিন্ডারে কাজ করার সময় উল্ফের প্রতি বৈষম্য ও মামলার ঘটনাগুলো অনুমানভিত্তিক।

তবে কিছু সত্য ঘটনা সরাসরি সিনেমায় এসেছে। যেমন: জাস্টিন মাটিনের পাঠানো অশালীন ও হুমকি-মূলক বার্তা, যা মামলার নথিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এসব বার্তায় মাটিন উল্ফকে অপমান করেছিলেন, যা সিনেমায় দেখানো হয়েছে। একইভাবে শন র‍্যাডের সঙ্গে উল্ফের টেক্সট বিনিময়ও হুবহু রাখা হয়েছে।

এছাড়া টিন্ডারের প্রচারণার জন্য উল্ফের কলেজে সোরোরিটি মিটিংয়ে গিয়ে মেয়েদের সাইন-আপ করানো এবং ছেলেদের আকৃষ্ট করার জন্য ফ্র্যাটারনিটি সংগঠনে যাওয়া—এসব ঘটনাও সত্যি। রুশ উদ্যোক্তা আন্দ্রিভের কাছে নতুন অ্যাপের প্রস্তাব দেওয়া, ‘বাম্বল’ নামটি প্রথমে অপছন্দ করা ইত্যাদিও বাস্তব ঘটনা।


পুরোপুরি কাল্পনিক অংশ

কিছু চরিত্র ও ঘটনা সম্পূর্ণ কল্পিত। যেমন, মাইহালা অভিনীত ‘তিশা’ চরিত্রটি বাস্তবে ছিল না। প্রকৃতপক্ষে উল্ফের প্রাথমিক বাম্বল টিমে সাদা নারী সদস্যরাই ছিলেন। পরিচালক রেচেল লি গোল্ডেনবার্গ অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি আনার জন্য চরিত্রটি যুক্ত করেন।

সবচেয়ে বড় কাল্পনিক দৃশ্য হলো সিনেমার শেষে উল্ফের দেওয়া জোরালো বক্তৃতা, যেখানে তিনি আন্দ্রিভের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। বাস্তবে ২০১৯ সালের ফোর্বস রিপোর্টে আন্দ্রিভের অফিসে যৌন হয়রানি ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশের পর তিনি তার শেয়ার বিক্রি করেন। প্রথমে উল্ফ তাকে রক্ষা করেছিলেন, পরে অবস্থান বদলান। তবে সিনেমার মতো নাটকীয় বক্তব্য তিনি দেননি। বরং টেক ক্রাঞ্চে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বিষয়টিকে এড়িয়ে যান।

ফোর্বস অবশ্য নিজেদের প্রতিবেদনের পক্ষে দৃঢ় থাকে এবং উল্ফের বক্তব্যকে বিভ্রান্তিমূলক আখ্যা দেয়।


আসল হুইটনি উল্ফ বনাম সিনেমার উল্ফ

সিনেমায় উল্ফকে নারীবাদী নায়িকা হিসেবে দেখানো হয়েছে, যিনি দৃঢ়ভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান। বাস্তব উল্ফের অবস্থান আরও জটিল। তিনি একদিকে সফল নারী উদ্যোক্তা, অন্যদিকে জটিল পরিস্থিতিতে প্রায়শই সমঝোতার পথে হেঁটেছেন।

অতএব, সুইপড বিনোদনমূলক হলেও এটিকে হুইটনি উল্ফ হার্ডের আসল জীবনের নির্ভুল প্রতিচ্ছবি ভাবা যাবে না। এটি সত্য ও কল্পনার মিশ্রণ, যা দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা হয়েছে।