০৭:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
নাইজেরিয়ান ফটোগ্রাফার জে.ডি. ওজেইকিরে-এর অদেখা ছবি প্রকাশ বড় জয়, অস্বস্তিকর মুহূর্ত আর আবেগ—২০২৫ ARIA Awards ছিল টালমাটাল কিন্তু জীবন্ত  কমছে মার্কিনদের ছুটির কেনাকাটা, চাপের মুখে খুচরা বিক্রেতারা  অতিরিক্ত ক্ষমতা ও প্রযুক্তি বদলে বড় ধাক্কার মুখে ভারতের সোলার মডিউল শিল্প  জাপানের PAC-3 ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি, নিরাপত্তা নীতিতে নতুন ধাপ পুলিশের মনোবল ভাঙলে আবার নিজেকে নিজেই পাহারা দিতে হবে: ডিএমপি কমিশনার ঢাকার আদালতে ভারতের সখিনা বেগম, জামিন হয়নি শুনে অঝোরে কাঁদলেন মেয়ে নির্বাচনের আগে ঢাকা-১০সহ তিন আসনে হঠাৎ বিশেষ বরাদ্দ, কী বলছেন উপদেষ্টা? ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত, হামাসের সতর্কতা: ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা’ বিশ্বব্যাপী অস্বাস্থ্যকর আল্ট্রাপ্রসেসড খাবারের বিপুল লাভ এবং তার ক্ষতিকর প্রভাব

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: আরসাসহ রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান: ভুল নীতির বোঝায় বাড়ছে সংকট

“খাবার নেই, স্বাস্থ্য নেই, শিক্ষা নেই, কাজ নেই। আছে কেবল অনিরাপত্তা আর অনিশ্চয়তা।” কক্সবাজারের কাছে শরণার্থী শিবিরের অবস্থাকে এভাবেই বর্ণনা করেন জামিলদা খাতুন। সেখানে ১০ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তার আট সদস্যের পরিবার ২০১৭ সাল থেকে সেখানেই থাকছে। তারা এসেছিলেন প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে, যখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বহুদিন ধরে নিপীড়নের শিকার মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে ।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জীবন—এবং যারা রাখাইনে রয়ে গেছেন তাদের জীবন—দীর্ঘদিন ধরেই অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু সাম্প্রতিক একের পর এক ভয়াবহ ধাক্কা পরিস্থিতিকে চরমে ঠেলে দিয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে “উচ্চপর্যায়ের” এক সম্মেলন করবে—তাদের দুর্দশা নিয়ে এ ধরনের এটিই প্রথম বৈঠক। কিন্তু দ্রুত পদক্ষেপ না হলে অবনতিশীল এই সংকট সমগ্র অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে।

সবচেয়ে তাৎক্ষণিক সমস্যা হলো কক্সবাজারের শিবিরগুলোর অর্থায়ন কমে যাওয়া। বহুদিন ধরে সবচেয়ে বড় অর্থদাতা আমেরিকা তার উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ভাঙার প্রক্রিয়ায় শিবিরগুলোর জন্য বরাদ্দ বড় আকারে ছাঁটাই করেছে। গত বছর তারা প্রায় ৩০ কোটি ডলার দিয়েছিল; ২০২৫ সালের জন্য সেই অঙ্ক আরও অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা। অথচ জাতিসংঘ বলছে, এ বছর রোহিঙ্গাদের সহায়তায় প্রায় ৯৩.৪ কোটি ডলার লাগবে, আর এখন পর্যন্ত সেই অঙ্কের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জোগাড় হয়েছে।

অর্থের এই ঘাটতির প্রভাব মাটিতে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে শিবিরগুলোর প্রায় ৪০% শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে; প্রায় ২৫% নারী রক্তাল্পতায় আক্রান্ত। তবু স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো, স্কুলগুলোর মতো, একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি—যা একমাত্র খাদ্য সহায়তা দেয়—বলছে, রান্নার জ্বালানি আগামী মাসেই শেষ হয়ে যাবে। তাদের সতর্কবার্তা, বছরের শেষে খাদ্য রেশনও ফুরিয়ে যেতে পারে। এদিকে টাকা শুকিয়ে গেলেও কক্সবাজারে আশ্রয় খুঁজতে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি নতুন মানুষ মিয়ানমার থেকে এসে এই টলমলে বাঁশের কুঁড়েঘরগুলোতে উঠেছেন—বছরের পর বছর এটাই সবচেয়ে বড় ঢল।

অনেকেই রাখাইনে সামরিক জান্তা আর আরাকান আর্মির (এএ) লড়াইয়ের মধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এএ—যা রাখাইনের বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করে এবং এখন রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে—রোহিঙ্গাদের ওপরও হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত, যার মধ্যে গত বছর একটি গ্রামে শত শত মানুষকে হত্যার ঘটনাও রয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, এ গোষ্ঠী “অসংখ্য নির্যাতন ও লঙ্ঘন” করেছে। (এএ দাবি করে, তারা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে না, কেবল সশস্ত্র জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তু বানায়।)

রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছুক আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ ধীরে ধীরে সহায়তার আগ্রহ হারাচ্ছে। দেশটির নিজস্ব রাজনীতি গত বছর এক বিপ্লবে এলোমেলো হয়ে গেছে। ২০২৬ সালে নির্বাচন আয়োজন করার কথা বলেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আর সেই নির্বাচনের আগে রাজনীতিকরা প্রভাব বাড়াতে হুড়োহুড়ি করছেন। ভোটারদের কাছে তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উপায় তারা বের করবেন—যদিও শরণার্থীদের ঢল থামছে না।

বাংলাদেশে কেউ কেউ মনে করছেন, শিবিরভিত্তিক সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোকে উৎসাহ দিলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ত্বরান্বিত হতে পারে। বহুদিন ধরেই এসব মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে কক্সবাজারে অপহরণ, চাঁদাবাজির মতো সংগঠিত অপরাধ চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে হামলাও চালাচ্ছে, লক্ষ্য আরাকান আর্মি। শিবিরের অস্বাস্থ্যকর ও বঞ্চিত জীবন এসব গোষ্ঠীর জন্য নতুন সদস্য জোগাড় সহজ করছে। তাদের একটির আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এক মুখপাত্র বলছেন, মানুষ যোগ দিচ্ছে কারণ তাদের “রোহিঙ্গাদের ভাগ্যের দায়িত্ব নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় রাখা হয়নি”। কিন্তু আরও সহিংসতা কোনো সমাধান নয়। ব্রাসেলসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টমাস কিয়ানের মতে, সশস্ত্র রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষ রাখাইনের পরিস্থিতি আরও শোচনীয় করে তুলবে এবং আরও বেশি মানুষকে বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য করবে।

অবনতিশীল এই পরিস্থিতির ঢেউ গোটা অঞ্চলে ছড়াতে পারে। কক্সবাজার থেকে প্রাণ হাতে করে পালানোর মরিয়া চেষ্টাগুলো আরও তীব্র হয়ে উঠছে। মে মাসে বঙ্গোপসাগরে শরণার্থী বোঝাই একটি নৌকা ডুবে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়। অথচ কোনো দেশই রোহিঙ্গাদের নিতে আগ্রহী নয়। জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন ২০২২ সাল থেকে প্রায় ১৬ হাজার রোহিঙ্গার আমেরিকায় পুনর্বাসনের যে শরণার্থী কর্মসূচি ছিল সেটি বন্ধ করে দেয়—বৈধ পুনর্বাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ সেখানেই থেমে যায়। মে মাসে জাতিসংঘ জানায়, তাদের কাছে “বিশ্বাসযোগ্য” তথ্য আছে যে, দিল্লি থেকে রোহিঙ্গাদের বহিষ্কার করতে গিয়ে একটি ভারতীয় নৌযান মিয়ানমারের প্রায় ৮০০ দ্বীপের একটির কাছাকাছি সমুদ্রে তাদের নামিয়ে দিয়ে সাঁতরে তীরে উঠতে বাধ্য করেছে।

এখন কী করা যেতে পারে? অগ্রাধিকার হওয়া উচিত কক্সবাজারে মানবিক সহায়তার প্রবাহ অব্যাহত রাখা। ন্যূনতম পর্যায়ে এর অর্থ আরও বেশি খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। আদর্শভাবে এর সঙ্গে থাকা দরকার উন্নত আশ্রয়ব্যবস্থা। বর্তমানে বাংলাদেশ এমন কোনো স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যা স্থায়ী বলে গণ্য হতে পারে; রোহিঙ্গাদের কাজ করাও নিষিদ্ধ। এই দুই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও সহনশীল হওয়া উচিত।

শিবিরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে সক্ষম রোহিঙ্গা রাজনীতিকদের বিকাশের পথ কিছুটা হলেও সুগম হবে। সরকারগুলো রাখাইনে কার্যত শাসনের দায়িত্বে থাকা আরাকান আর্মির ওপরও চাপ বাড়াতে পারে, যাতে তারা সেখানকার পরিস্থিতি উন্নত করে। চীন—যার রাখাইনে বিনিয়োগ আছে এবং এএ-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক—চাইলে এতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবু অশুভ আশঙ্কা রয়ে যায়: এই বিস্মৃত সংকটটি হয়তো আরও দীর্ঘদিন বিশ্বদৃষ্টি এড়িয়েই থেকে যাবে। ■

জনপ্রিয় সংবাদ

নাইজেরিয়ান ফটোগ্রাফার জে.ডি. ওজেইকিরে-এর অদেখা ছবি প্রকাশ

ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন: আরসাসহ রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান: ভুল নীতির বোঝায় বাড়ছে সংকট

১২:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

“খাবার নেই, স্বাস্থ্য নেই, শিক্ষা নেই, কাজ নেই। আছে কেবল অনিরাপত্তা আর অনিশ্চয়তা।” কক্সবাজারের কাছে শরণার্থী শিবিরের অবস্থাকে এভাবেই বর্ণনা করেন জামিলদা খাতুন। সেখানে ১০ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তার আট সদস্যের পরিবার ২০১৭ সাল থেকে সেখানেই থাকছে। তারা এসেছিলেন প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে, যখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বহুদিন ধরে নিপীড়নের শিকার মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ শুরু করে ।

বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জীবন—এবং যারা রাখাইনে রয়ে গেছেন তাদের জীবন—দীর্ঘদিন ধরেই অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু সাম্প্রতিক একের পর এক ভয়াবহ ধাক্কা পরিস্থিতিকে চরমে ঠেলে দিয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে “উচ্চপর্যায়ের” এক সম্মেলন করবে—তাদের দুর্দশা নিয়ে এ ধরনের এটিই প্রথম বৈঠক। কিন্তু দ্রুত পদক্ষেপ না হলে অবনতিশীল এই সংকট সমগ্র অঞ্চলে প্রভাব ফেলতে পারে।

সবচেয়ে তাৎক্ষণিক সমস্যা হলো কক্সবাজারের শিবিরগুলোর অর্থায়ন কমে যাওয়া। বহুদিন ধরে সবচেয়ে বড় অর্থদাতা আমেরিকা তার উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ভাঙার প্রক্রিয়ায় শিবিরগুলোর জন্য বরাদ্দ বড় আকারে ছাঁটাই করেছে। গত বছর তারা প্রায় ৩০ কোটি ডলার দিয়েছিল; ২০২৫ সালের জন্য সেই অঙ্ক আরও অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা। অথচ জাতিসংঘ বলছে, এ বছর রোহিঙ্গাদের সহায়তায় প্রায় ৯৩.৪ কোটি ডলার লাগবে, আর এখন পর্যন্ত সেই অঙ্কের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জোগাড় হয়েছে।

অর্থের এই ঘাটতির প্রভাব মাটিতে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে শিবিরগুলোর প্রায় ৪০% শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে; প্রায় ২৫% নারী রক্তাল্পতায় আক্রান্ত। তবু স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো, স্কুলগুলোর মতো, একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি—যা একমাত্র খাদ্য সহায়তা দেয়—বলছে, রান্নার জ্বালানি আগামী মাসেই শেষ হয়ে যাবে। তাদের সতর্কবার্তা, বছরের শেষে খাদ্য রেশনও ফুরিয়ে যেতে পারে। এদিকে টাকা শুকিয়ে গেলেও কক্সবাজারে আশ্রয় খুঁজতে আসা রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৪ সালের শুরু থেকে ১ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি নতুন মানুষ মিয়ানমার থেকে এসে এই টলমলে বাঁশের কুঁড়েঘরগুলোতে উঠেছেন—বছরের পর বছর এটাই সবচেয়ে বড় ঢল।

অনেকেই রাখাইনে সামরিক জান্তা আর আরাকান আর্মির (এএ) লড়াইয়ের মধ্যে বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এএ—যা রাখাইনের বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধিত্ব করে এবং এখন রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে—রোহিঙ্গাদের ওপরও হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত, যার মধ্যে গত বছর একটি গ্রামে শত শত মানুষকে হত্যার ঘটনাও রয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, এ গোষ্ঠী “অসংখ্য নির্যাতন ও লঙ্ঘন” করেছে। (এএ দাবি করে, তারা রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে না, কেবল সশস্ত্র জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তু বানায়।)

রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছুক আশ্রয়দাতা বাংলাদেশ ধীরে ধীরে সহায়তার আগ্রহ হারাচ্ছে। দেশটির নিজস্ব রাজনীতি গত বছর এক বিপ্লবে এলোমেলো হয়ে গেছে। ২০২৬ সালে নির্বাচন আয়োজন করার কথা বলেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আর সেই নির্বাচনের আগে রাজনীতিকরা প্রভাব বাড়াতে হুড়োহুড়ি করছেন। ভোটারদের কাছে তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উপায় তারা বের করবেন—যদিও শরণার্থীদের ঢল থামছে না।

বাংলাদেশে কেউ কেউ মনে করছেন, শিবিরভিত্তিক সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠীগুলোকে উৎসাহ দিলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ত্বরান্বিত হতে পারে। বহুদিন ধরেই এসব মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে কক্সবাজারে অপহরণ, চাঁদাবাজির মতো সংগঠিত অপরাধ চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তারা সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে হামলাও চালাচ্ছে, লক্ষ্য আরাকান আর্মি। শিবিরের অস্বাস্থ্যকর ও বঞ্চিত জীবন এসব গোষ্ঠীর জন্য নতুন সদস্য জোগাড় সহজ করছে। তাদের একটির আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এক মুখপাত্র বলছেন, মানুষ যোগ দিচ্ছে কারণ তাদের “রোহিঙ্গাদের ভাগ্যের দায়িত্ব নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় রাখা হয়নি”। কিন্তু আরও সহিংসতা কোনো সমাধান নয়। ব্রাসেলসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের টমাস কিয়ানের মতে, সশস্ত্র রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির সংঘর্ষ রাখাইনের পরিস্থিতি আরও শোচনীয় করে তুলবে এবং আরও বেশি মানুষকে বাংলাদেশে পালাতে বাধ্য করবে।

অবনতিশীল এই পরিস্থিতির ঢেউ গোটা অঞ্চলে ছড়াতে পারে। কক্সবাজার থেকে প্রাণ হাতে করে পালানোর মরিয়া চেষ্টাগুলো আরও তীব্র হয়ে উঠছে। মে মাসে বঙ্গোপসাগরে শরণার্থী বোঝাই একটি নৌকা ডুবে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়। অথচ কোনো দেশই রোহিঙ্গাদের নিতে আগ্রহী নয়। জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসন ২০২২ সাল থেকে প্রায় ১৬ হাজার রোহিঙ্গার আমেরিকায় পুনর্বাসনের যে শরণার্থী কর্মসূচি ছিল সেটি বন্ধ করে দেয়—বৈধ পুনর্বাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ সেখানেই থেমে যায়। মে মাসে জাতিসংঘ জানায়, তাদের কাছে “বিশ্বাসযোগ্য” তথ্য আছে যে, দিল্লি থেকে রোহিঙ্গাদের বহিষ্কার করতে গিয়ে একটি ভারতীয় নৌযান মিয়ানমারের প্রায় ৮০০ দ্বীপের একটির কাছাকাছি সমুদ্রে তাদের নামিয়ে দিয়ে সাঁতরে তীরে উঠতে বাধ্য করেছে।

এখন কী করা যেতে পারে? অগ্রাধিকার হওয়া উচিত কক্সবাজারে মানবিক সহায়তার প্রবাহ অব্যাহত রাখা। ন্যূনতম পর্যায়ে এর অর্থ আরও বেশি খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। আদর্শভাবে এর সঙ্গে থাকা দরকার উন্নত আশ্রয়ব্যবস্থা। বর্তমানে বাংলাদেশ এমন কোনো স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যা স্থায়ী বলে গণ্য হতে পারে; রোহিঙ্গাদের কাজ করাও নিষিদ্ধ। এই দুই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও সহনশীল হওয়া উচিত।

শিবিরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলে সক্ষম রোহিঙ্গা রাজনীতিকদের বিকাশের পথ কিছুটা হলেও সুগম হবে। সরকারগুলো রাখাইনে কার্যত শাসনের দায়িত্বে থাকা আরাকান আর্মির ওপরও চাপ বাড়াতে পারে, যাতে তারা সেখানকার পরিস্থিতি উন্নত করে। চীন—যার রাখাইনে বিনিয়োগ আছে এবং এএ-এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক—চাইলে এতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবু অশুভ আশঙ্কা রয়ে যায়: এই বিস্মৃত সংকটটি হয়তো আরও দীর্ঘদিন বিশ্বদৃষ্টি এড়িয়েই থেকে যাবে। ■