খরচ কমাতে ছাঁটাই হচ্ছে খাবার ও উপহার
এ বছরের ছুটির মৌসুমে মার্কিন ভোক্তারা আগের চেয়ে কম খরচ করার পরিকল্পনা করছেন। কয়েক বছরের দীর্ঘমেয়াদি মুদ্রাস্ফীতি, বাণিজ্য যুদ্ধের বাড়তি শুল্ক এবং অনিশ্চিত অর্থনীতির প্রভাব মিলিয়ে অনেক পরিবার এখন বাজেট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। কোয়ার্টজের প্রতিবেদন বলছে, ওয়ালমার্ট থেকে শুরু করে টার্গেট—বড় বড় খুচরা চেইনগুলো কম দামের থ্যাঙ্কসগিভিং মিল প্যাকেজ ও হাজারো পণ্যে ছাড় দিচ্ছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই ‘সাশ্রয়’ আসছে পরিমাণ ও আইটেম কমিয়ে, অর্থাৎ আগে যে খাবার বা উপহার প্যাকেজে যেসব উপকরণ ছিল, এখন তার কিছু বাদ দেওয়া হয়েছে।
একটি উদাহরণ হিসেবে ওয়ালমার্টের থ্যাঙ্কসগিভিং মেল বাস্কেটকে সামনে আনা হচ্ছে। এবার প্রতি ব্যক্তির হিসাবে দাম আগের তুলনায় কম, কিন্তু মিষ্টি আলু, মার্শম্যালো, কর্ন মাফিন মিক্স, এমনকি কিছু তাজা সবজি তালিকা থেকে বাদ গেছে। অর্থনীতিবিদদের ভাষ্যে, এটি “কম পরিমাণকে সাশ্রয়ের পোশাকে উপস্থাপন”—দেখতে সস্তা, কিন্তু বাস্তবে টেবিলে খাবারও কম। একই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে উপহার বাজারেও; অনেকেই বড় দামের আইটেমের বদলে ছোট, ব্যবহারিক পণ্য বেছে নিচ্ছেন কিংবা পরিবারে উপহারের সংখ্যা সীমিত করছেন।
গবেষণা সংস্থাগুলোর জরিপে ভোক্তাদের মানসিকতা আরও স্পষ্ট হয়েছে। ডেলয়েটের এক সমীক্ষায় অংশ নেওয়া বেশির ভাগ মার্কিনি বলেছেন, তারা আগামী ১২ মাসে অর্থনীতি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন—১৯৯৭ সাল থেকে পরিচালিত বার্ষিক এই জরিপে এত হতাশা আগে দেখা যায়নি। একই সমীক্ষায় উত্তরদাতারা জানিয়েছেন, তারা গড়ে গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম খরচ করার পরিকল্পনা করছেন। উপহার, ভ্রমণ, পারিবারিক খাবার—সব ক্ষেত্রেই একটু একটু করে কাটছাঁট করে অনেকেই নিজেদের ভবিষ্যৎ ব্যয়ের ধাক্কা থেকে বাঁচাতে চাইছেন।
বিক্রেতাদের দিকে পাল্টা চাপ
অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে আছেন তিন দিকের চাপের মুখে—উচ্চতর পণ্য আমদানি খরচ, শ্রম ও পরিবহন ব্যয়, আর ক্রেতাদের কমে যাওয়া ক্রয়ক্ষমতা। চীন থেকে আমদানি করা খেলনা, ডেকোরেশন ও ইলেকট্রনিক পণ্যে বাড়তি শুল্কের ফলে স্মার্টফোন, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে গেম কনসোল পর্যন্ত অনেক পণ্যের খুচরা দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। একই সময়ে মজুরি ও লজিস্টিকস ব্যয়ও আগের চেয়ে বেশি, ফলে বড় ছাড় দেওয়া মানে সরাসরি লাভের মার্জিনে আঘাত।
এই পরিস্থিতিতে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রচারের কৌশল বদলাচ্ছে। কেউ কেউ কম দামের পাশাপাশি ভিন্নধর্মী ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে—যেমন জে-সি পেনি ছাড়ের মজা নিয়ে কমেডিয়ানদের দিয়ে বিজ্ঞাপন করাচ্ছে, আবার নর্ডস্ট্রম নিউ ইয়র্কের ফ্ল্যাগশিপ স্টোরে ১০০ ডলারের নিচে শত শত পণ্যের বিশেষ প্রদর্শনী করেছে। গ্রোসারি চেইনগুলো কম দামের বান্ডল মিল অফারের মাধ্যমে ক্রেতাকে টানতে চাইছে, আশা করছে—সস্তা টার্কি কিনতে এসে গ্রাহক ঝুড়িতে কিছু উচ্চ-মার্জিন পণ্যও তুলে নেবে। কিন্তু সব চেষ্টা সত্ত্বেও, প্রতি ক্রেতার গড় ব্যয় কমে গেলে মোট বিক্রির ওপর তার প্রভাব পড়বেই।
কর্মী, অটোমেশন ও খরচ বাঁচানোর হিসাব
লাভ বাঁচাতে অনেক খুচরা চেইন কর্মী নিয়োগ ও শিফট ব্যবস্থাপনায় কড়াকড়ি শুরু করেছে। আউটপ্লেসমেন্ট ফার্ম চ্যালেঞ্জার, গ্রে অ্যান্ড ক্রিসমাসের হিসাব, এ বছর শেষ ত্রৈমাসিকে মৌসুমি নিয়োগের সংখ্যা গত ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন থাকতে পারে, অর্থাৎ দোকানঘরে কম থাকবে অস্থায়ী সেলস স্টাফ ও ক্যাশিয়ার। একই সঙ্গে অনলাইন বিক্রিতে ঝোঁক বাড়ায় কোম্পানিগুলো গুদাম ও ফালফিলমেন্ট সেন্টারে বেশি এবং ফ্রন্টলাইন স্টোরে কম কর্মী দিয়ে কাজ চালানোর চেষ্টা করছে।

অটোমেশন এখানে বড় ভূমিকা রাখছে। উন্নত ইনভেন্টরি অ্যানালিটিক্স, সেল্ফ-চেকআউট, ওমনিচ্যানেল অর্ডার ম্যানেজমেন্ট—এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে “কম কর্মী দিয়ে বেশি কাজ” করাই এখন মূল লক্ষ্য। বাস্তবে এর মানে অনেক ক্ষেত্রে দোকানে কম লোক, বেশি কাজের চাপ এবং সূক্ষ্মভাবে কমে যাওয়া সেবা। কিছু চেইন আবার পণ্যের তালিকাও সংক্ষিপ্ত করছে, যাতে সরবরাহ শৃঙ্খল সহজ হয় এবং অচল পণ্য নিয়ে বছরের শেষ পর্যন্ত ঝুলে থাকতে না হয়।
তবু সবাই সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নয়। ডিসকাউন্ট রিটেলার এবং ওয়্যারহাউস ক্লাবগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে, কারণ সাশ্রয়ী পণ্য খুঁজতে সতর্ক ক্রেতারা সবার আগে সেখানেই যাচ্ছেন। উল্টো দিকে, প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড ও ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোকে দামি পণ্যের মূল্যমান বোঝাতে এবার আরও বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। টার্গেটের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে করপোরেট পর্যায়ে বড় চাকরি ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে, যা দেখায়—দুর্বল বিক্রির চাপ কত দ্রুত দোকানঘর থেকে বোর্ডরুমে পৌঁছাতে পারে।
এর মাঝেও সামগ্রিক ছবি পুরোপুরি অন্ধকার নয়। ন্যাশনাল রিটেইল ফেডারেশনের হিসাব অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়েও এ বছর মার্কিন ছুটির মৌসুমি বিক্রি প্রথমবারের মতো ১ ট্রিলিয়ন ডলার ছুঁতে পারে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন—এই সংখ্যা মূলত দামের বৃদ্ধিকে প্রতিফলিত করছে, বিক্রির প্রকৃত পরিমাণ ততটা বাড়বে না। অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০২৫ সাল তাই কোনো উৎসবমুখর ‘বুম’ বা গভীর ‘বস্ট’ নয়; বরং ধীরে ধীরে মানিয়ে নেওয়ার পরীক্ষা, যেখানে টিকে থাকবে তারা, যারা কম খরচে বেশি দক্ষতা দেখাতে পারবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















