অতিরিক্ত কারখানা, কম প্রকল্প
ভারতের দ্রুত বেড়ে ওঠা সোলার মডিউল শিল্প এখন এক জটিল বাস্তবতার মুখোমুখি—কারখানা হচ্ছে বেশি, কিন্তু প্রকল্প হচ্ছে তুলনামূলক কম। রেটিং সংস্থা ICRA-র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সরকারের অনুমোদিত তালিকায় মডিউল উৎপাদনের মোট ক্ষমতা প্রায় ১১০ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে। কিন্তু এ সক্ষমতার মাত্র ৭০-৭৫ শতাংশই নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি—TOPCon বা bifacial মডিউল—তৈরি করতে সক্ষম। অন্যদিকে, বছরে নতুন সৌর প্রকল্প স্থাপনের হার ৪৫-৫০ গিগাওয়াটের বেশি হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে কিছু কারখানা পুরো ক্ষমতায় চালানো সম্ভব নয়, বাজারে তৈরি হচ্ছে প্রকট অতিরিক্ত সরবরাহ।
এই অতিরিক্ত সক্ষমতার মধ্যে আবার বিশ্ববাজারের দাম কমছে ক্রমাগত। চীন এখনো সোলার ভ্যালু চেইনের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং কম খরচে প্রচুর মডিউল বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। ভারতের নির্মাতাদের জন্য তাই শুধু দেশীয় সুরক্ষা শুল্কের ভরসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। বড়, সমন্বিত এবং প্রযুক্তিগতভাবে আপডেটেড কোম্পানি না হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ক্রমেই কঠিন হবে—এমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে ICRA-র সতর্কতা।

প্রযুক্তি বদলের চাপ
TOPCon ও bifacial প্রযুক্তি এখন Utility-scale সৌর প্রকল্পে দ্রুত স্ট্যান্ডার্ড হয়ে উঠছে। Bifacial প্যানেল দুই দিক থেকেই আলো শোষণ করতে পারে, আর TOPCon সেলের নকশা এমনভাবে করা হয় যাতে ইলেকট্রন প্রবাহ আরও দক্ষ হয় এবং শক্তির অপচয় কমে। যেসব কারখানা এসব প্রযুক্তিতে আপগ্রেড করতে পারবে না, তারা অচিরেই পুরনো প্রজন্মের পণ্য নিয়ে আটকে যাবে। এ ধরনের আপগ্রেড করতে বিনিয়োগের পরিমাণও কম নয়; শুধু মডিউল অ্যাসেম্বলি নয়, ওয়েফার, ইনগট এবং সেল পর্যন্ত পুরো চেইনে উপস্থিতি চাই।
ICRA-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গিরিশকুমার কদম মনে করেন, সোলার ম্যানুফ্যাকচারিং এখন এমন এক ধাপে পৌঁছেছে যেখানে স্কেল এবং ভ্যালু চেইন জুড়ে ইন্টিগ্রেশন ছাড়া টিকে থাকা সম্ভব নয়। ফলে যেসব প্রতিষ্ঠান কেবল মডিউল অ্যাসেম্বলি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ এবং পুরনো প্রযুক্তিতে আটকে আছে, তারাই আগে আঘাত পাবে। অন্যদিকে ভারী বিনিয়োগ করতে সক্ষম বৃহৎ গোষ্ঠীগুলো ধীরে ধীরে বাজারের বড় অংশ দখল করবে।
নীতি বনাম বাজারের বাস্তবতা
ভারত সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে কৌশলগত অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন প্রণোদনা স্কিম, শুল্ক ও নন-ট্যারিফ ব্যবস্থার মাধ্যমে স্থানীয় উৎপাদন বাড়াতে চায়। লক্ষ্য হলো—চীনসহ বাইরে থেকে আমদানি কমিয়ে দেশীয় শিল্পকে শক্তিশালী করা এবং এক সময় রপ্তানিকারক হয়ে ওঠা। সেই কৌশলের অংশ হিসেবে সেল নির্মাতাদের ওয়েফার ও ইনগট উৎপাদনে যেতে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যাতে পুরো ভ্যালু চেইনে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ অংশ বাড়ানো যায়।

কিন্তু বাজারের সামগ্রিক ছবি নীতিনির্ধারকদের জন্য সহজ নয়। একদিকে অতিরিক্ত কারখানা এবং প্রযুক্তি বদলের চাপ, অন্যদিকে বিশ্ববাজারে দাম আরও কমে যাওয়ার ঝুঁকি—সব মিলিয়ে মাঝারি ও ছোট নির্মাতাদের জন্য সামনে পথ বেশ কঠিন। অনেকে বড় গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যেতে বাধ্য হতে পারে, আবার কেউ কেউ ঋণের চাপ সামলাতে না পেরে কার্যক্রম বন্ধ করতেও বাধ্য হতে পারে। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পোর্টফোলিওতেও নতুন ধরনের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে ইতিবাচক দিকও আছে। বেশি প্রতিযোগিতা ও কম দাম মানে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন আরও সস্তা হতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে নবায়নযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক। এখন প্রশ্ন হলো, এই রূপান্তর কোন মাত্রায় এবং কী গতিতে ঘটবে, আর নীতিনির্ধারকরা কি তা সামাল দিতে প্রস্তুত। নিশ্চিত শুধু এতটুকু—আগামী কয়েক বছরে ভারতের সোলার মডিউল শিল্প নিজেকে পুনর্গঠন করবে, আর সেই প্রক্রিয়ায় টিকে থাকবে কেবল প্রযুক্তি, পুঁজি ও স্কেলে এগিয়ে থাকা সীমিতসংখ্যক খেলোয়াড়।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















