বিতর্ক আর নাটক পেরিয়ে অবশেষে ক্রিকেটই মঞ্চে প্রধান আসনে বসেছে দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় লড়াইয়ে।
এশিয়া কাপ শুরু হওয়ার আগেই প্রায় সবাই ধরে নিয়েছিল, টুর্নামেন্টের ফরম্যাট অনুযায়ী ভারত-পাকিস্তান তিনটি রবিবারে তিনবার মুখোমুখি হবে। ভক্তদের সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয়েছে। আজ দুবাইতে তারা ফাইনালে প্রথমবারের মতো একে অপরের বিপক্ষে নামছে।
এর আগে এই আসরে দুইবার মুখোমুখি হয়ে দুবারই ভারত জিতেছে। তবে এবারের ফাইনাল নিয়ে গুঞ্জন ভিন্ন—পাকিস্তান ভক্তরা এবং নিরপেক্ষ দর্শকরা মনে করছেন এবার বড় কোনো অঘটন ঘটতে পারে। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে ভারত শ্রীলঙ্কাকে সুপার ওভারে হারালেও ফাইনালে তারা অপরাজিত দল হিসেবেই উঠেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান যেন ঠিক সময়ে ফর্মে ফিরছে।
বিতর্কও কম হয়নি—করমর্দন এড়ানো থেকে ম্যাচ রেফারি বদলের চেষ্টা, কিংবা অতিরিক্ত উদযাপন—সবই আলোচনায় ছিল। মাঠের খেলাতেও দুই দল দিয়েছে রোমাঞ্চকর পারফরম্যান্স। তাই তৃতীয় ও চূড়ান্তবারের মতো যখন তারা ফাইনালে নামছে, তখন আলোচনার কয়েকটি মূল দিক হলো:
ক্যাচ ধরা নিয়ে সংকট
‘ক্যাচই ম্যাচ জেতায়’—প্রবাদটি এখানে আবার আলোচনায়। ভারত এ পর্যন্ত ১২টি ক্যাচ ফেলেছে এবং ফিল্ডিংয়ে অনেক সময় ঢিলেমি দেখিয়েছে। যদিও তা এখনো বড় ক্ষতি ডেকে আনেনি, কিন্তু ফাইনালে যদি একই ভুল হয় তবে তা মারাত্মক হতে পারে। অন্যদিকে পাকিস্তান বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ ফিল্ডিং করেছে, ক্যাচ ধরা হোক বা গ্রাউন্ড ফিল্ডিং—সবই নিখুঁত। সালমান আলি আঘার দল প্রমাণ করেছে তারা প্রয়োজনে নিজেদের উঁচুতে তুলতে জানে।
সবচেয়ে বড় টার্গেট
এই আসরে ভারতীয় ওপেনার অভিষেক শর্মার মতো প্রভাবশালী কেউ নেই। ছয় ম্যাচে ৩০৯ রান, তিনটি হাফসেঞ্চুরি, গড় ৫১.৫০ এবং স্ট্রাইক রেট ২০৪.৬৩—প্রতিপক্ষের জন্য তিনি আতঙ্ক। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনি প্রথম ম্যাচে ১৩ বলে ৩১ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৩৯ বলে ৭৪ রান করেছেন। তাই শাহীন শাহ আফ্রিদির প্রথম লক্ষ্য থাকবে তাকে দ্রুত আউট করা। পাওয়ারপ্লের ছয় ওভার তিনি কাটিয়ে উঠলে পাকিস্তানের জন্য ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।
আফ্রিদিও আলোচনায় আছেন। দু’টি ম্যাচসেরা পুরস্কার জিতেছেন তিনি। শুধু বলেই নয়, ব্যাট হাতেও অবদান রেখেছেন। টুর্নামেন্টের শেষ পর্যায়ে এসে তিনি আবার প্রমাণ করেছেন কেন তাকে আক্রমণের প্রধান অস্ত্র বলা হয়। শর্মা বনাম আফ্রিদি লড়াইটাই হতে পারে ফাইনালের আসল আকর্ষণ।
মিডল অর্ডারের পরীক্ষা
এখন পর্যন্ত শর্মা প্রতিটি ম্যাচে রান করেছেন। তাই ভারতের মিডল অর্ডার বড় পরীক্ষার মুখে পড়েনি। কিন্তু ফাইনালে যদি তিনি ব্যর্থ হন, তবে সেটাই ভারতের সবচেয়ে বড় অজানা পরিস্থিতি। অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ব্যাট হাতে ব্যর্থ, শর্মার সঙ্গী শুভমান গিলও কেবল পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বিপক্ষে জ্বলে উঠেছেন। সঞ্জু স্যামসন রান পেলেও সেগুলো ছিল অপ্রয়োজনীয় ম্যাচে। তবু ভারতের পক্ষে ইতিবাচক দিক হলো—প্রায় সবাই ব্যাট হাতে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন।
পাকিস্তানের দিকে তাকালে সাইম আয়ুব এখনো রান পাননি—টানা চার ম্যাচে শূন্য। তবে বল হাতে তিনি কার্যকর। হ্যারিস রউফ উইকেট নিয়ে আগুন ঝরাচ্ছেন, তাই পাকিস্তানের বোলিং এখন বেশ গোছানো। সাহেবজাদা ফারহান ও ফখর জামান সর্বোচ্চ রান করেছেন, আর ভারতের বিপক্ষে শুরুতে জসপ্রিত বুমরাহ হুমকি হলেও পরে মোহাম্মদ হারিস ও মোহাম্মদ নওয়াজদের থেকে রান আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। অধিনায়ক সালমান আলি আঘাকেও এবার রান করতে হবে।
স্পিনে ভাগ্য নির্ধারণ
ভারতের বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদবের চার ওভারই হতে পারে ম্যাচের চাবিকাঠি। তিনি এখন পর্যন্ত ১৩ উইকেট নিয়েছেন মাত্র ছয় ইকোনমি রেটে। পাকিস্তানের ভরসা থাকবে আয়ুবের ওপর—তিনি আট উইকেট নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু দিয়েছেন। তার সঙ্গে আবরার আহমেদও আছেন, যারা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বিপদে ফেলতে পারেন।
এর আগে দু’বার দুবাইতে ভারত রান তাড়া করে সহজে জিতেছে। এবার পাকিস্তান যদি টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। বড় ম্যাচে শুরুতেই বড় স্কোর গড়ে তোলাই ট্রফি আর হতাশার মধ্যে পার্থক্য তৈরি করতে পারে।
শেষ পর্যন্ত টসই জানাবে ভাগ্য কোনদিকে যাবে।