সাবেক হন্ডুরাস প্রেসিডেন্ট হুয়ান অর্লান্দো হেরনান্দেজের মুক্তি
২০২৪ সালে আমেরিকান আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান অর্লান্দো হেরনান্দেজ, যিনি ‘নার্কো-রাজ্য’ হিসেবে হন্ডুরাস পরিচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত ছিলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ‘সম্পূর্ণ এবং শর্তহীন ক্ষমা’র ফলে মুক্তি পেয়েছেন। গত সোমবার তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার হেজেলটন পেনিটেনশারি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
অভিযোগ এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়া
হেরনান্দেজ, যিনি ২০১৪ থেকে ২০২২ পর্যন্ত হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তাকে ৪৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি হন্ডুরাস ও মেক্সিকোর মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলার ঘুষ নিয়ে, প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় ৪০০ টনেরও বেশি কোকেইন আমেরিকায় পাঠানোর কাজে সহায়তা করেছেন। এছাড়া, তিনি মাদক ব্যবসায়ীদেরকে আমেরিকায় অপরাধমূলক কার্যক্রম থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করেছিলেন।

ট্রাম্পের ক্ষমা এবং বিতর্ক
ট্রাম্প শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, হেরনান্দেজকে ‘খুব কঠিন ও অবিচারপূর্ণভাবে ট্রিট করা হয়েছে’ এবং তার জন্য তিনি ‘সম্পূর্ণ ও পূর্ণ ক্ষমা’ প্রদান করবেন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তারা বলেন, হেরনান্দেজের দোষী সাব্যস্ত হওয়া ছিল তার অপরাধের জন্য তার দায়িত্ব নেয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং এটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে কোনো মাদক ব্যবসায়ী, এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতিও, আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
হার্নান্দেজের পরিবার এবং রাজনৈতিক সমর্থন
হেরনান্দেজের স্ত্রীর অভিযোগ, তার বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলা করা হয়েছে। তার আইনজীবী রেনাটো স্টাবিলি জানান, হেরনান্দেজ এখন যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ জায়গায় আছেন এবং খুব শীঘ্রই তিনি হন্ডুরাসের জনগণের উদ্দেশে একটি বার্তা পাঠাবেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহায়কেরা, যেমন রজার স্টোন, হেরনান্দেজের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, এবং তার মামলা ‘বাইডেনের এক ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেছেন।
ভবিষ্যৎ ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি

হার্নান্দেজের ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। তার কাছে বর্তমানে আমেরিকার ভিসা বা নাগরিকত্ব নেই, তবে কোনো তথ্য নেই যে তাকে বহিষ্কার করা হতে পারে। তার আইনজীবী বলেন, তিনি শীঘ্রই তার পাসপোর্ট ফেরত পেতে চেষ্টা করবেন। এছাড়া, হন্ডুরাসে তাকে নতুন রাজনৈতিক মামলা এবং অভিযোগের মুখোমুখি হতে হতে পারে, যদিও সেখানে তার বিরুদ্ধে এখনও কোনো পুরনো মামলা নেই।
হন্ডুরাসে মাদক পাচারের জন্য দায়ী থাকার অভিযোগ
আমেরিকান বিচার বিভাগ জানিয়েছে যে, হেরনান্দেজ ২০০৪ সাল থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সহযোগিতা করে কোকেইন আমেরিকায় পাঠাতেন, যখন তিনি কংগ্রেসম্যান ছিলেন। তার প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তিনি আমেরিকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাদক পাচারের তথ্য দেননি এবং এর পরিবর্তে তিনি পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে মাদক পাচারের কাজ করতে সহায়তা করেছিলেন। ২০২৪ সালে তাকে ৪৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৮ মিলিয়ন ডলার জরিমানা দেওয়া হয়।
ক্ষমার পরবর্তী পরিস্থিতি
এখন হেরনান্দেজের উপর হন্ডুরাসের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল কর্মকর্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তার রাজনৈতিক সমর্থকরা দাবি করেছেন যে, হেরনান্দেজের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’প্রণোদিত। তিনি হন্ডুরাসে ফিরে আসতে চান, তবে তার আগমন তার দেশে চলমান নির্বাচনী পরিস্থিতির উপর নির্ভর করতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















