ফেডারেল সীমান্তরক্ষা বাহিনী বুধবার থেকে নিউ অরলিন্স মেট্রো এলাকায় ব্যাপক ইমিগ্রেশন অভিযানের উদ্বোধন করেছে। অভিযানের লক্ষ্য দক্ষিণ লুইজিয়ানার বিভিন্ন শহর — শপিং মল পার্কিং, গৃহসংস্কার দোকান ও কাজশ্রেণি এলাকা যেনেই— যেখানে অচল বা সন্দেহভাজন অনুপ্রবেশকারীদেরকে ধরে রাখা হয়েছে। সাধারণ লোকজন, অধিকারকর্মী ও গণমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে দেখা যায় কাজ খুঁজতে দাঁড়িয়ে থাকা দিনের মজুরদের একটি দলকে কনর অঞ্চলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অভিযানের নেতৃত্বে এসেছেন বর্ডার প্যাট্রোল কমান্ডার গ্রেগরি Bovino, এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয় এই অভিযানের নাম দিয়েছেন ‘‘কাটাহুলা ক্রাঞ্চ’’।
অভিযানের আয়তন ও ধরন
ফেডারেল সূত্রে জানা গেছে অভিযান অনির্দিষ্টকালের জন্য চালানো হবে। চিহ্নিত নথি অনুযায়ী এ বছর শিকাগো ও নর্থ ক্যারোলিনায় পরিচালিত যৌথ বর্ডার প্যাট্রোল অভিযানের ধারাবাহিকতাতেই লুইজিয়ানা মোতায়েন। অভ্যন্তরীণ কাগজপত্রে লক্ষ করা হয়েছে প্রায় ২৫০ জন এজেন্ট দিয়ে চার্লসটন-শিকাগোতে আটককৃত সংখ্যার থেকে বড় আকারের অভিযান পরিচালনা করে অঞ্চলজুড়ে অন্তত ৫ হাজার লোককে আটক করার পরিকল্পনা রয়েছে—নর্থ ক্যারোলিনা ও শিকাগোতে যে ধরণের গ্রেপ্তার হয়েছিল তার চেয়ে এ সংখ্যা বেশি।
দৃশ্যমান গ্রেপ্তার ও সাক্ষীরা যা বলে
সাক্ষীদের বর্ণনা ও স্থানীয় অধিকারকর্মী সংঘঠনগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী লো’স ও হোম ডিপো’র পার্কিং লট, গাড়ি ধোয়ার স্থানে এবং নির্মাণ কার্যস্থলে এজেন্টরা অবস্থান করে লোকদের জিজ্ঞাসা করেছেন—“তারা কি আইনি?”—এরকম প্রশ্ন করে ভূমিকা নিয়েছেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী বললেন ইলিসিয়ান ফিল্ডস রোডের লো’স-এর বাইরে কাজ খোঁজার জন্য অপেক্ষা করা একদল মানুষের মধ্যে প্রায় ২৫ জনকে দ্রুত আটক করা হয়। কন্নার এলাকার একটি নির্মাণ সাইটে উপরের তাঁকে ঘেরাও করে গ্রেপ্তারের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যায় এজেন্টরা ট্যাক্টিক্যাল পোশাক পরিহিত, কেউ-কেউ মুখোশে, এবং গ্রেপ্তারকৃতদের হ্যান্ডকাফ পরাচ্ছিল।

ফেডারেল বক্তব্য ও লক্ষ্যবস্তু
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন অভিযান প্রধানত “গুরুতর অপরাধমূলক রেকর্ড” থাকা ব্যক্তিদের আটককাজে মনোযোগী হবে। তবে শিকাগো ও নর্থ ক্যারোলিনার পূর্ববর্তী অভিযানে বেশিরভাগ আটককৃতদের কোনো গুরুতর অপরাধমূলক ইতিহাস ছিল না বলে স্থানীয় প্রতিবেদনে এসেছে। এদিকে এফবিআই ও লুইজিয়ানা স্টেট পুলিশও জানিয়েছে তারা অভিযানে অংশ নিচ্ছে এবং কোনো জোরপূর্বক আক্রমণ, ফেডারেল আইন প্রয়োগে বাধা বা সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও গ্রেপ্তার কার্যক্রম চালাবে। এফবিআই নিউজ রিলিজে ভিডিও বা অডিওর জন্য অনলাইন টিপ লাইন খোলা হয়েছে।
রাজনীতিক ও স্থানীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া বিভক্তি
রাজ্য পর্যায়ের রিপাবলিকান নেতারা—গভর্নর ও অ্যাটর্নি জেনারেল সহ—এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের আইনি বাধা দিলে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। রাজ্য আইনসভায় এমন বিধানও পাস হয়েছে যা অনুপ্রবেশ কার্যক্রমে বাধা দেয়া লোকাল কর্মকর্তাদের দণ্ডে আনার বিধান করে। বিপরীতে শহর পর্যায়ের কিছু নেতারা, যেমন নিউ অরলিন্সের মেয়র-নির্বাচিত হেলেনা মোরেনো, অভিযান প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন; বিশেষ করে মুখঢাকা ও অস্বচ্ছ পরিচয়ে গ্রেপ্তারকরণে জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়া এবং সহিংস ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি সতর্ক করেছেন। দুই পক্ষের বক্তব্য মিলিয়ে শহরে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া স্পষ্টভাবে দ্বিধাযুক্ত।
অভিযানের প্রেক্ষাপট ও ইতিহাস
সরকারি নীতিতে বর্তমান ব্যবস্থার আওতায় বর্ডার প্যাট্রোলের শহরতলিতে বা অভ্যন্তরীণ নগর কেন্দ্রে মোতায়েনের একটি নতুন পর্যায় দেখা যাচ্ছে; ঐতিহ্যগতভাবে এই সংস্থা সীমান্ত শহর, বন্দরের আশপাশ ও সীমানায় কাজ করত। তবে সাম্প্রতিক অভিযানে এজেন্টরা বড় শহরগুলোতে আঞ্চলিক আকারে ব্যাপক উপস্থিতি দেখিয়েছে—এমনকি পূর্ববর্তী শিকাগো অভিযানে প্রায় ৪০০০ জনকে আটক করা হয়েছিল। শিকাগোর অভিযানে বিচারক Bovino’র কৃত কর্মপদ্ধতির সমালোচনা ও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কেমিক্যাল ইরিট্যান্ট ব্যবহারের অভিযোগও উত্থাপিত হয়েছিল। শিকাগো ও চার্লটের পর নিউ অরলিন্সে অভিযানের কৌশল ও ধরন বেশ মিল রয়েছে—সাধারণত পাবলিক স্থানে, বড় স্টোরের পার্কিং লটে গ্রেপ্তার বেশি দেখা গেছে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব — ছোট ব্যবসা ও সম্প্রদায়
নিউ অরলিন্সে ল্যাটিনো সম্প্রদায়ের উপর উদ্বেগ আগে থেকেই ছড়িয়ে পড়ে—কিছু রেস্তোরাঁ ও দোকান অস্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। যে ব্যবসাগুলো হারিকেন কাটিয়ে উঠতে আগত বৈদেশিক শ্রমিকদের উপর নির্ভর করে ক্রমবর্ধমান সম্প্রদায় গড়ে তুলেছিল, তারা এবার আতঙ্কে বন্ধপােষ্ট দিয়েছে। একটি টাকেরিয়া ও অন্যান্য খাবার দোকানে গ্রাহক ও সমর্থকের ঢেউয়ের চিত্রও পাওয়া গেছে—অনেকেই দোকানপাট থেকে খাবার কিনে সমর্থন জানায়। স্থানীয়রা ভয় পাচ্ছে গ্রেপ্তার ও নির্বিচারে অভিযান তাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটাবে।
স্থানীয় প্রশাসনের সমস্যাগ্রস্ত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
অপারেশন শুরু হওয়ার সময় হিসেব করে দেখা গেছে বর্তমান মেয়র লাটোয়া ক্যানট্রেলকে কেন্দ্র করে ফেডারেল করাপশন মামলার প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে আছে; ক্যানট্রেল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তিনি শাস্তিমূলক অভিযোগের তীব্রতা মোকাবেলা করছেন। প্রশাসনিক উত্তেজনা ও অভিযানের সমন্বয় স্থানীয় রাজনীতি ও ফেডারেল অভিসন্ধিকে জটিল করে তুলছে।
নোট ও পরবর্তী প্রভাব
অভিযান চলাকালে অধিকারকর্মী, আইনজীবী ও স্থানীয় নেতারা বাসিন্দাদের তাদের অধিকারসমূহ সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলেছেন এবং যে কেউ পুলিশি বা ফেডারেল সংস্থার সঙ্গে মুখোমুখি হলে কী কী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় সে সম্পর্কে পরামর্শ দিচ্ছেন। অভিযান থেকে সৃষ্ট উদ্বেগ ও সমাজে ছড়ানো অনিশ্চয়তা স্থানীয় অর্থনীতি, শ্রমবাজার এবং বহু সম্প্রদায়ের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করছে—এবং এসব বিষয়ের উপর করণীয় ও প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যৎ আলোচ্য হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















