এশিয়া কাপ ২০২৫-এর ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। কিন্তু ম্যাচশেষের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এক অভূতপূর্ব বিতর্কের জন্ম দেয়। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এএসসি) প্রধান মোহসিন নাকভির হাত থেকে ট্রফি ও মেডেল নিতে অস্বীকৃতি জানায় ভারতীয় দল। ফলে দর্শকদের চোখের সামনে এক নজিরবিহীন নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়।
পুরস্কার বিতরণীকে ঘিরে নাটক
ম্যাচশেষে প্রায় এক ঘণ্টা কোনো অনুষ্ঠান শুরু হয়নি। কারণ পাকিস্তান দল পরাজয়ের পর ড্রেসিংরুম ছাড়তে চাইছিল না। এসময় ক্ষুব্ধ নাকভিকে মঞ্চের পাশে ফোনে ব্যস্ত দেখা যায়। অবশেষে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আঘা, কোচ মাইক হেসন ও টিম ম্যানেজার মাঠে আসেন, তবে প্রবল বোয়ায় ভেসে যান। খেলোয়াড়দের মধ্যে কেউ কেউ তখনও ফ্লিপ-ফ্লপ পরে ছিলেন।
নাকভি মঞ্চে উঠতেই ভারতীয় দর্শকদের মধ্যে দেশাত্মবোধক স্লোগান শুরু হয়—“ভারত মাতা কি জয়”—এবং তাঁকে পুরোটা সময়ই কটূক্তি সহ্য করতে হয়। এর মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু করেন নিউজিল্যান্ডের ধারাভাষ্যকার সাইমন ডুল।
ব্যক্তিগত পুরস্কার বিতরণ হলেও থেমে যায় ট্রফি
তিলক বর্মা ম্যাচসেরা হয়ে পুরস্কার নেন অপরাজিত ৬৯ রানের জন্য। কুলদীপ যাদব চার উইকেট এবং শিভম দুবে ২১ বলে ৩৩ রানের জন্য আলাদা সম্মান পান। টুর্নামেন্টসেরা হন ওপেনার অভিষেক শর্মা। পাকিস্তান দল রানার্সআপ মেডেল সংগ্রহ করে।
সবাই যখন ভারতীয় দলের ট্রফি গ্রহণের অপেক্ষায়, তখন হঠাৎ সাইমন ডুল ঘোষণা দেন—“এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল জানিয়েছে, ভারতীয় দল আজ রাতে পুরস্কার নেবে না। এখানেই অনুষ্ঠান শেষ।” এরপর এক সংগঠক নীরবে ট্রফি সরাসরি ভারতীয় ড্রেসিংরুমে নিয়ে যান।
অস্বীকৃতির পেছনের প্রেক্ষাপট
এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ নেওয়া হয়নি। ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে ভারত–পাকিস্তান গ্রুপ ম্যাচে ‘হ্যান্ডশেক’ না করা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। নাকভি তখন প্রকাশ্যে ভারতীয় খেলোয়াড়দের সমালোচনা করেন এবং আইসিসির হস্তক্ষেপ চান। এর পর থেকেই ভারতীয় দল সিদ্ধান্ত নেয় যে ফাইনালে জয়ী হলে তারা নাকভির হাত থেকে ট্রফি নেবে না।
পিটিআই জানায়, ম্যাচের আগেই ভারতীয় ম্যানেজমেন্ট জানতে চেয়েছিল কে ট্রফি প্রদান করবেন। যখন নিশ্চিত হয় নাকভিই দিচ্ছেন, তখন ভারতীয়রা আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে।
তাৎপর্য ও বিশ্লেষণ
এই ঘটনা শুধু একটি ট্রফি গ্রহণ না করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি ভারত–পাকিস্তান ক্রিকেট দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায় তৈরি করল। দীর্ঘদিন ধরেই দুই দেশের ক্রিকেট সম্পর্ক রাজনৈতিক টানাপোড়েনে ভুগছে। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল যেহেতু আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতীক, সেখানে ভারতীয় দলের এমন পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আরও উত্তেজনা বাড়াতে পারে।
একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠছে—একটি বহুজাতিক টুর্নামেন্টে সভাপতির নিরপেক্ষতা কোথায়? নাকভির পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড প্রধান হিসেবে ভূমিকা কি এএসসি সভাপতির দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? ভারতীয় দলের অস্বীকৃতি যেন সেই প্রশ্নকেই নতুনভাবে সামনে নিয়ে এলো।
দুবাইয়ের সেই রাত ক্রিকেট ভক্তদের মনে থাকবে শুধু রোমাঞ্চকর ফাইনালের জন্য নয়, বরং বিতর্কিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের জন্যও। ভারতীয় দলের দৃঢ় অবস্থান ভবিষ্যতের ক্রিকেট কূটনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এএসসি এবং আইসিসি এই অচলাবস্থা দূর করতে কী পদক্ষেপ নেয়।