১২:২১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
মধ্যযুগে ব্রিটেনে রুটি বিক্রিতে কঠোর শাস্তি—‘আসাইজ’ আইন কীভাবে রক্ষা করেছিল ক্রেতার অধিকার ইংল্যান্ডের অভিজাত ভোজসভায় ছুরি-চামচ ছিল সামাজিক মর্যাদার প্রতীক রাজেশপুর শালবন: কুমিল্লার সবুজ হৃদয়ে প্রকৃতির নিঃশব্দ সিম্ফনি রাশিয়ার হুমকির মুখে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষা জোরদার — সামরিক ব্যয়ে জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছেছে ওয়ারশ সৌদি আইনপ্রণয়ন: স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৬) আনন্যা পান্ডের সোনালি আভা: মানিশ মলহোত্রার উৎসব-রূপ আরামকো: সৌদি আরবের রত্ন এখন জনগণের হাতে এইচএসসি ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন ১৭ অক্টোবর থেকে মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্য সিএমএইচে

ট্রফি বিতরণী বিতর্কে নাকভি: এশিয়া কাপের ফাইনাল ঘিরে তীব্র সমালোচনা

ভারতের ঐতিহাসিক জয়

এশিয়া কাপ ২০২৫–এর ফাইনালে পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে রেকর্ড নবমবারের মতো শিরোপা জিতেছে ভারত। শুরুর থেকেই ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে ভারতীয় দল। ব্যাটে-বলে সবার সমন্বয়ে জয় নিশ্চিত হয়, আর শেষ মুহূর্তে রিঙ্কু সিংয়ের ব্যাট থেকে আসে জয়সূচক রান। ভারতীয় শিবিরে তখন খুশির ঝলকানি, খেলোয়াড়দের মুখে উচ্ছ্বাস—সবকিছুই এক অনন্য অর্জনের ইঙ্গিত দিচ্ছিল।
কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর যে দৃশ্য ফুটে উঠল, তা ক্রিকেট ইতিহাসের এক বিব্রতকর ও হতাশাজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।

ট্রফি ছাড়া হোটেলে ফিরল বিজয়ীরা

ম্যাচ-পরবর্তী নিয়মিত সাক্ষাৎকার ও সম্প্রচার শেষে সবাই অপেক্ষায় ছিলেন চূড়ান্ত মুহূর্তের—অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার দৃশ্যের। কিন্তু সময় গড়িয়ে রাত ১২টা পার হলেও শুরু হয়নি পুরস্কার বিতরণী। অবশেষে এক ঘণ্টা বিলম্বে অনুষ্ঠান শুরু হলেও ঘোষণা দেওয়া হয়—ভারত আজ ট্রফি গ্রহণ করবে না।
এরপর এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহসিন নাকভি ট্রফি হাতে নিয়ে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন। ফলত, ভারতীয় দলের বিজয়ের আনন্দ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

বিতর্কিত পরিস্থিতির সূচনা

ঘটনার সূত্রপাত ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই। ভারতীয় খেলোয়াড়রা মঞ্চে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। নাকভিও ছিলেন সেখানে। কিন্তু পাকিস্তান দল তখনও ড্রেসিং রুমে। নাকভি বারবার ফোনে কথা বলছিলেন, যেন সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যেই সময় কাটাচ্ছেন। পরে পাকিস্তানের কিছু খেলোয়াড় চপ্পল পায়ে আর উদাসীন ভঙ্গিতে মাঠে এলে দর্শকদের থেকে শুরু হয় প্রবল দুয়ো। শোনা যায় “ভারত মাতা কি জয়” স্লোগানও।
এরপর গুঞ্জন ওঠে, ভারত নাকভির হাত থেকে ট্রফি নিতে চাইছে না। সমাধান হিসেবে ঠিক হয়, এমিরেটস্ ক্রিকেট বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান খালিদ আল জারুনি ট্রফি দেবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বদলে যায়। পাকিস্তান দল প্রথমে মেডেল নিতে মঞ্চে ওঠে। তাদের অধিনায়ক সালমান আলি আঘা মঞ্চে দাঁড়িয়ে নাকভির সামনেই রানার্স-আপ চেক ছুড়ে দেন।
সবশেষে প্রেজেন্টার সাইমন ডুল্ল ঘোষণা করেন—ভারত ট্রফি গ্রহণ করছে না। এরপর নাকভি ট্রফি হাতে নিয়ে বেরিয়ে যান। অনেকে মনে করছেন, নাকভি ইচ্ছাকৃতভাবেই ভারতকে ট্রফি হাতে ছবি তুলতে দিতে চাননি।

দর্শক ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া

মাঠে উপস্থিত দর্শকদের একাংশের কাছে এই দৃশ্য ছিল ‘লজ্জাজনক’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভ। অনেকেই লিখেছেন, “এমন ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি।” ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে একটি বড় টুর্নামেন্টের সমাপ্তি কেবল খেলাধুলার মর্যাদাকেই ক্ষুণ্ন করে না, বরং ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করে তোলে।

অতীতের সঙ্গে তুলনা

ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব ক্রিকেট মাঠে নতুন নয়। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ খেলতে হয়েছিল কারগিল যুদ্ধের সময়। ২০০৩ আসরেও ছিল প্রবল উত্তেজনা। কিন্তু এবারের এশিয়া কাপ ২০২৫ যেভাবে তিন সপ্তাহ ধরে দ্বন্দ্ব, বিতর্ক ও উত্তেজনায় ভরপুর ছিল, তা অনেককেই অতীতের ঘটনাকেও ছাপিয়ে গেছে বলে মনে করিয়েছে।
প্রথমদিকে করমর্দন না করার কাণ্ড, পরে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ইশারায় ভারতকে বিদ্রূপ—সবকিছু মিলিয়ে এশিয়া কাপ যেন ক্রিকেটের চেয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়ায়। আর ফাইনালের পর ট্রফি বিতরণী ঘিরে বিশৃঙ্খলা সেই নাটককে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিল।

ক্রিকেটের ভাবমূর্তির সংকট

একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট যেখানে কোটি দর্শক চোখ রাখেন, সেখানে শিষ্টাচার ভঙ্গ ও শাসকগোষ্ঠীর এমন আচরণ পুরো এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এশিয়ান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ টিকে থাকবে ক্রীড়াসুলভ মনোভাব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর—যা আজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

ভারত রেকর্ড নবমবারের মতো এশিয়া কাপ জয় করে ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখল। কিন্তু শিরোপা হাতে না পাওয়ার কারণে সেই জয় রয়ে গেল অসম্পূর্ণ। কোটি ভক্তের মনে প্রশ্ন—ক্রিকেট কি কেবল মাঠের লড়াই, নাকি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নতুন মঞ্চ? এশিয়া কাপ ২০২৫–এর শেষ দৃশ্য সেই প্রশ্নকেই আরও গভীর করে তুলেছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মধ্যযুগে ব্রিটেনে রুটি বিক্রিতে কঠোর শাস্তি—‘আসাইজ’ আইন কীভাবে রক্ষা করেছিল ক্রেতার অধিকার

ট্রফি বিতরণী বিতর্কে নাকভি: এশিয়া কাপের ফাইনাল ঘিরে তীব্র সমালোচনা

১২:১৭:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারতের ঐতিহাসিক জয়

এশিয়া কাপ ২০২৫–এর ফাইনালে পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে রেকর্ড নবমবারের মতো শিরোপা জিতেছে ভারত। শুরুর থেকেই ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে ভারতীয় দল। ব্যাটে-বলে সবার সমন্বয়ে জয় নিশ্চিত হয়, আর শেষ মুহূর্তে রিঙ্কু সিংয়ের ব্যাট থেকে আসে জয়সূচক রান। ভারতীয় শিবিরে তখন খুশির ঝলকানি, খেলোয়াড়দের মুখে উচ্ছ্বাস—সবকিছুই এক অনন্য অর্জনের ইঙ্গিত দিচ্ছিল।
কিন্তু খেলা শেষ হওয়ার পর যে দৃশ্য ফুটে উঠল, তা ক্রিকেট ইতিহাসের এক বিব্রতকর ও হতাশাজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।

ট্রফি ছাড়া হোটেলে ফিরল বিজয়ীরা

ম্যাচ-পরবর্তী নিয়মিত সাক্ষাৎকার ও সম্প্রচার শেষে সবাই অপেক্ষায় ছিলেন চূড়ান্ত মুহূর্তের—অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার দৃশ্যের। কিন্তু সময় গড়িয়ে রাত ১২টা পার হলেও শুরু হয়নি পুরস্কার বিতরণী। অবশেষে এক ঘণ্টা বিলম্বে অনুষ্ঠান শুরু হলেও ঘোষণা দেওয়া হয়—ভারত আজ ট্রফি গ্রহণ করবে না।
এরপর এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান মোহসিন নাকভি ট্রফি হাতে নিয়ে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেন। ফলত, ভারতীয় দলের বিজয়ের আনন্দ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

বিতর্কিত পরিস্থিতির সূচনা

ঘটনার সূত্রপাত ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই। ভারতীয় খেলোয়াড়রা মঞ্চে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন। নাকভিও ছিলেন সেখানে। কিন্তু পাকিস্তান দল তখনও ড্রেসিং রুমে। নাকভি বারবার ফোনে কথা বলছিলেন, যেন সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যেই সময় কাটাচ্ছেন। পরে পাকিস্তানের কিছু খেলোয়াড় চপ্পল পায়ে আর উদাসীন ভঙ্গিতে মাঠে এলে দর্শকদের থেকে শুরু হয় প্রবল দুয়ো। শোনা যায় “ভারত মাতা কি জয়” স্লোগানও।
এরপর গুঞ্জন ওঠে, ভারত নাকভির হাত থেকে ট্রফি নিতে চাইছে না। সমাধান হিসেবে ঠিক হয়, এমিরেটস্ ক্রিকেট বোর্ডের ভাইস-চেয়ারম্যান খালিদ আল জারুনি ট্রফি দেবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পরিকল্পনা বদলে যায়। পাকিস্তান দল প্রথমে মেডেল নিতে মঞ্চে ওঠে। তাদের অধিনায়ক সালমান আলি আঘা মঞ্চে দাঁড়িয়ে নাকভির সামনেই রানার্স-আপ চেক ছুড়ে দেন।
সবশেষে প্রেজেন্টার সাইমন ডুল্ল ঘোষণা করেন—ভারত ট্রফি গ্রহণ করছে না। এরপর নাকভি ট্রফি হাতে নিয়ে বেরিয়ে যান। অনেকে মনে করছেন, নাকভি ইচ্ছাকৃতভাবেই ভারতকে ট্রফি হাতে ছবি তুলতে দিতে চাননি।

দর্শক ও বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া

মাঠে উপস্থিত দর্শকদের একাংশের কাছে এই দৃশ্য ছিল ‘লজ্জাজনক’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ক্ষোভ। অনেকেই লিখেছেন, “এমন ঘটনা ক্রিকেট ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি।” ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে একটি বড় টুর্নামেন্টের সমাপ্তি কেবল খেলাধুলার মর্যাদাকেই ক্ষুণ্ন করে না, বরং ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করে তোলে।

অতীতের সঙ্গে তুলনা

ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব ক্রিকেট মাঠে নতুন নয়। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ খেলতে হয়েছিল কারগিল যুদ্ধের সময়। ২০০৩ আসরেও ছিল প্রবল উত্তেজনা। কিন্তু এবারের এশিয়া কাপ ২০২৫ যেভাবে তিন সপ্তাহ ধরে দ্বন্দ্ব, বিতর্ক ও উত্তেজনায় ভরপুর ছিল, তা অনেককেই অতীতের ঘটনাকেও ছাপিয়ে গেছে বলে মনে করিয়েছে।
প্রথমদিকে করমর্দন না করার কাণ্ড, পরে পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের ইশারায় ভারতকে বিদ্রূপ—সবকিছু মিলিয়ে এশিয়া কাপ যেন ক্রিকেটের চেয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়ায়। আর ফাইনালের পর ট্রফি বিতরণী ঘিরে বিশৃঙ্খলা সেই নাটককে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিল।

ক্রিকেটের ভাবমূর্তির সংকট

একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট যেখানে কোটি দর্শক চোখ রাখেন, সেখানে শিষ্টাচার ভঙ্গ ও শাসকগোষ্ঠীর এমন আচরণ পুরো এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এশিয়ান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ টিকে থাকবে ক্রীড়াসুলভ মনোভাব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর—যা আজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো।

ভারত রেকর্ড নবমবারের মতো এশিয়া কাপ জয় করে ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লিখল। কিন্তু শিরোপা হাতে না পাওয়ার কারণে সেই জয় রয়ে গেল অসম্পূর্ণ। কোটি ভক্তের মনে প্রশ্ন—ক্রিকেট কি কেবল মাঠের লড়াই, নাকি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নতুন মঞ্চ? এশিয়া কাপ ২০২৫–এর শেষ দৃশ্য সেই প্রশ্নকেই আরও গভীর করে তুলেছে।