১২:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
মধ্যযুগে ব্রিটেনে রুটি বিক্রিতে কঠোর শাস্তি—‘আসাইজ’ আইন কীভাবে রক্ষা করেছিল ক্রেতার অধিকার ইংল্যান্ডের অভিজাত ভোজসভায় ছুরি-চামচ ছিল সামাজিক মর্যাদার প্রতীক রাজেশপুর শালবন: কুমিল্লার সবুজ হৃদয়ে প্রকৃতির নিঃশব্দ সিম্ফনি রাশিয়ার হুমকির মুখে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষা জোরদার — সামরিক ব্যয়ে জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছেছে ওয়ারশ সৌদি আইনপ্রণয়ন: স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৬) আনন্যা পান্ডের সোনালি আভা: মানিশ মলহোত্রার উৎসব-রূপ আরামকো: সৌদি আরবের রত্ন এখন জনগণের হাতে এইচএসসি ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন ১৭ অক্টোবর থেকে মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্য সিএমএইচে

কেন এশিয়া কাপ ভুল কারণে মনে রাখা হবে

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপ জেতার পর এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল উল্লাসধ্বনি। কিন্তু ম্যাচ-পরবর্তী আনন্দঘন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান মুহূর্তেই বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়, যা টেনে নিয়ে যায় এক ঘণ্টারও বেশি সময়।

সাধারণত খেলা শেষ হতেই উপস্থাপনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। কিন্তু এদিন অস্বাভাবিক দীর্ঘ বিলম্ব দেখা দিল। পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা চুপচাপ মাঠ ছেড়ে চলে যান, আর ভারতীয় খেলোয়াড়রা অপেক্ষায় থাকলেন পুরস্কার বিতরণীর জন্য।

অবশেষে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) সভাপতি মোহসিন নাকভি মাঠে নেমে কর্মকর্তাদের সঙ্গে উত্তেজিতভাবে আলোচনা করতে দেখা যায়। এর মধ্যে গ্যালারির অনেক দর্শক চলে যেতে থাকেন, তবে ভারতীয় সমর্থকদের অনেকেই থেকে যান ট্রফি প্রদানের প্রত্যাশায়।

প্রায় এক ঘণ্টা পর মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়। নাকভি ও অন্যান্য অতিথিরা জায়গা নেন। ঠিক তখনই এক কর্মকর্তা হঠাৎ এশিয়া কাপ ট্রফি সরিয়ে নিয়ে যান এবং কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান। এরপরই পাকিস্তান দল পুনরায় মাঠে ফিরে আসে অনুষ্ঠানের জন্য।

ভারতীয় খেলোয়াড়দের ডাকা হলে তারা মঞ্চে গিয়ে অন্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। তারপর পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা রানার্স-আপ পদক নেন এবং অধিনায়ক সালমান আগা নাকভির সঙ্গে ছবি তুলে দলের চেক গ্রহণ করেন।

উপস্থাপক সাইমন ডুলের শেষ সাক্ষাৎকার শেষে অতিথিরা মঞ্চ ত্যাগ করেন। এরপর ভারতীয় দল মঞ্চে উঠে জয়ের আনন্দ উদযাপন করে—তবে প্রকৃত ট্রফি ছাড়াই। প্রতীকী ভঙ্গিতে সূর্যকুমার যাদব ও তার সতীর্থরা কল্পিত ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন, যা পরিস্থিতির অদ্ভুত মোড়কে স্পষ্ট করে।

পরে সম্প্রচারে সাইমন ডুল ব্যাখ্যা দেন, “আমাকে এসিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ভারতীয় দল আজ রাতে তাদের পুরস্কার সংগ্রহ করবে না… এটাই ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।”

এই ঘটনায় ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে এবং নানা প্রশ্ন ওঠে—ট্রফিটি কোথায় গেল, এবং আসলে কোন কারণে অনুষ্ঠান ভেঙে পড়ল?

অসাধারণ পারফরম্যান্স ঢাকা পড়ল
বিতর্কের কারণে মাঠের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সগুলো একেবারেই ঢাকা পড়ে যায়—কুলদীপ যাদবের দুর্দান্ত বোলিং, তিলক ভার্মার শান্ত-সুশৃঙ্খল ইনিংস, আর সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামানের দারুণ উদ্বোধনী জুটি।

এ ধরনের ঘটনা খেলাধুলার চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমার খেলার এবং ক্রিকেট দেখার এত বছরের অভিজ্ঞতায় এমন কিছু কখনও দেখিনি। চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি দেওয়া হলো না—যেটা আমরা প্রাপ্য ছিলাম। আমি মনে করি আমরা সেটা প্রাপ্য। তবে আমার আসল ট্রফি আছে ড্রেসিংরুমে—আমার সতীর্থ আর আমাদের সাপোর্ট স্টাফ।”

অন্যদিকে পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আগা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান, “ভারত আজ যা করল, তা গভীরভাবে হতাশাজনক। এটা শুধু আমাদের অসম্মান নয়—ক্রিকেটেরই অসম্মান। আমরা গিয়ে পদক নিলাম, ট্রফির সঙ্গে ছবি তুললাম কারণ সেটাই নিয়ম। কিন্তু আজ কী হলো? এভাবে চ্যাম্পিয়নরা আচরণ করে না।”

তিনি আরও বলেন, “এটাই প্রথমবার এমন কিছু দেখলাম। যদি এসিসি সভাপতি ট্রফি দিচ্ছেন আর আপনি সেটা নিতে অস্বীকার করেন, তবে আর কীভাবে তা পাবেন বলে আশা করেন?”

পটভূমি ও উত্তেজনার সূত্র
নাকভির কাছ থেকে ট্রফি গ্রহণ না করাটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল না। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ভারতীয় খেলোয়াড়রা পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের সঙ্গে করমর্দন এড়িয়ে গেছেন—না টসে, না ম্যাচ শেষে। পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন ও অধিনায়ক সালমান আগার সমালোচনা সত্ত্বেও এই অবস্থান পরিবর্তন হয়নি, যা দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।

সুপার ফোরের ম্যাচে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়, মাঠে ঝগড়া-বিবাদের ঘটনাও ঘটে। প্রথম ম্যাচের পর মন্তব্যের কারণে সূর্যকুমার যাদবকে জরিমানা করা হয়, আর দ্বিতীয় ম্যাচে আচরণের কারণে হারিস রউফ শাস্তির মুখোমুখি হন।

জনপ্রিয় সংবাদ

মধ্যযুগে ব্রিটেনে রুটি বিক্রিতে কঠোর শাস্তি—‘আসাইজ’ আইন কীভাবে রক্ষা করেছিল ক্রেতার অধিকার

কেন এশিয়া কাপ ভুল কারণে মনে রাখা হবে

১২:২৭:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারত পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপ জেতার পর এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল উল্লাসধ্বনি। কিন্তু ম্যাচ-পরবর্তী আনন্দঘন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান মুহূর্তেই বিশৃঙ্খলায় পরিণত হয়, যা টেনে নিয়ে যায় এক ঘণ্টারও বেশি সময়।

সাধারণত খেলা শেষ হতেই উপস্থাপনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। কিন্তু এদিন অস্বাভাবিক দীর্ঘ বিলম্ব দেখা দিল। পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা চুপচাপ মাঠ ছেড়ে চলে যান, আর ভারতীয় খেলোয়াড়রা অপেক্ষায় থাকলেন পুরস্কার বিতরণীর জন্য।

অবশেষে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) সভাপতি মোহসিন নাকভি মাঠে নেমে কর্মকর্তাদের সঙ্গে উত্তেজিতভাবে আলোচনা করতে দেখা যায়। এর মধ্যে গ্যালারির অনেক দর্শক চলে যেতে থাকেন, তবে ভারতীয় সমর্থকদের অনেকেই থেকে যান ট্রফি প্রদানের প্রত্যাশায়।

প্রায় এক ঘণ্টা পর মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়। নাকভি ও অন্যান্য অতিথিরা জায়গা নেন। ঠিক তখনই এক কর্মকর্তা হঠাৎ এশিয়া কাপ ট্রফি সরিয়ে নিয়ে যান এবং কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান। এরপরই পাকিস্তান দল পুনরায় মাঠে ফিরে আসে অনুষ্ঠানের জন্য।

ভারতীয় খেলোয়াড়দের ডাকা হলে তারা মঞ্চে গিয়ে অন্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পদক গ্রহণ করেন। তারপর পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা রানার্স-আপ পদক নেন এবং অধিনায়ক সালমান আগা নাকভির সঙ্গে ছবি তুলে দলের চেক গ্রহণ করেন।

উপস্থাপক সাইমন ডুলের শেষ সাক্ষাৎকার শেষে অতিথিরা মঞ্চ ত্যাগ করেন। এরপর ভারতীয় দল মঞ্চে উঠে জয়ের আনন্দ উদযাপন করে—তবে প্রকৃত ট্রফি ছাড়াই। প্রতীকী ভঙ্গিতে সূর্যকুমার যাদব ও তার সতীর্থরা কল্পিত ট্রফি উঁচিয়ে ধরেন, যা পরিস্থিতির অদ্ভুত মোড়কে স্পষ্ট করে।

পরে সম্প্রচারে সাইমন ডুল ব্যাখ্যা দেন, “আমাকে এসিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে ভারতীয় দল আজ রাতে তাদের পুরস্কার সংগ্রহ করবে না… এটাই ম্যাচ-পরবর্তী উপস্থাপনা অনুষ্ঠানের সমাপ্তি।”

এই ঘটনায় ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে এবং নানা প্রশ্ন ওঠে—ট্রফিটি কোথায় গেল, এবং আসলে কোন কারণে অনুষ্ঠান ভেঙে পড়ল?

অসাধারণ পারফরম্যান্স ঢাকা পড়ল
বিতর্কের কারণে মাঠের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সগুলো একেবারেই ঢাকা পড়ে যায়—কুলদীপ যাদবের দুর্দান্ত বোলিং, তিলক ভার্মার শান্ত-সুশৃঙ্খল ইনিংস, আর সাহিবজাদা ফারহান ও ফখর জামানের দারুণ উদ্বোধনী জুটি।

এ ধরনের ঘটনা খেলাধুলার চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমার খেলার এবং ক্রিকেট দেখার এত বছরের অভিজ্ঞতায় এমন কিছু কখনও দেখিনি। চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি দেওয়া হলো না—যেটা আমরা প্রাপ্য ছিলাম। আমি মনে করি আমরা সেটা প্রাপ্য। তবে আমার আসল ট্রফি আছে ড্রেসিংরুমে—আমার সতীর্থ আর আমাদের সাপোর্ট স্টাফ।”

অন্যদিকে পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আগা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান, “ভারত আজ যা করল, তা গভীরভাবে হতাশাজনক। এটা শুধু আমাদের অসম্মান নয়—ক্রিকেটেরই অসম্মান। আমরা গিয়ে পদক নিলাম, ট্রফির সঙ্গে ছবি তুললাম কারণ সেটাই নিয়ম। কিন্তু আজ কী হলো? এভাবে চ্যাম্পিয়নরা আচরণ করে না।”

তিনি আরও বলেন, “এটাই প্রথমবার এমন কিছু দেখলাম। যদি এসিসি সভাপতি ট্রফি দিচ্ছেন আর আপনি সেটা নিতে অস্বীকার করেন, তবে আর কীভাবে তা পাবেন বলে আশা করেন?”

পটভূমি ও উত্তেজনার সূত্র
নাকভির কাছ থেকে ট্রফি গ্রহণ না করাটা পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল না। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে ভারতীয় খেলোয়াড়রা পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের সঙ্গে করমর্দন এড়িয়ে গেছেন—না টসে, না ম্যাচ শেষে। পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন ও অধিনায়ক সালমান আগার সমালোচনা সত্ত্বেও এই অবস্থান পরিবর্তন হয়নি, যা দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলে।

সুপার ফোরের ম্যাচে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়, মাঠে ঝগড়া-বিবাদের ঘটনাও ঘটে। প্রথম ম্যাচের পর মন্তব্যের কারণে সূর্যকুমার যাদবকে জরিমানা করা হয়, আর দ্বিতীয় ম্যাচে আচরণের কারণে হারিস রউফ শাস্তির মুখোমুখি হন।