তুরস্কসহ ইউরোপের নজরদারি
তুরস্ক, স্পেন, ইতালি ও গ্রিস মিলে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক ত্রাণ নৌবহরের ওপর নজরদারি শুরু করেছে। সোমবার নৌবহরটি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়, যদিও ইসরায়েল আগেই এই মিশন থামানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, তুরস্কের চোরলু বিমানঘাঁটি থেকে উড়ে আসা তিনটি দীর্ঘপাল্লার ড্রোন টানা তিনদিন ধরে নৌবহরের ওপর চক্কর দিচ্ছে।
গ্লোবাল সুমুদ নৌবহরের যাত্রা
এই নৌবহরের নাম ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’। এতে আছেন সংসদ সদস্য, আইনজীবী, কর্মী এবং সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ অনেকেই। সোমবারও তারা গাজার উপকূল থেকে শত শত মাইল দূরে ছিলেন, তবে এমন এলাকায় পৌঁছাচ্ছিলেন যেখানে আগের নৌবহরগুলোকে ইসরায়েল আটক করেছিল। প্রায় ৪০টি নৌকা নিয়ে গঠিত এই বহরের কিছু নৌকা গত সপ্তাহে ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যদিও কেউ আহত হননি, তবুও কয়েকদিন গ্রিসের পানিসীমায় মেরামতের পর শনিবার তারা পুনরায় যাত্রা শুরু করেছে। আয়োজকদের মতে, প্রায় চারদিনের মধ্যে তারা গাজায় পৌঁছাতে পারেন।
ইতালি ও স্পেনের ভূমিকা
মানবিক সহায়তা ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য ইতালি ও স্পেন নিজেদের নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েন করেছে। তবে তারা স্পষ্ট করেছে, সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করবে না। গ্রিসের কোস্টগার্ডও তাদের দায়িত্ব এলাকার মধ্যে নৌবহরটির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেছে। ইতালি আবারও প্রস্তাব করেছে, ত্রাণসামগ্রী সাইপ্রাসে নিয়ে গিয়ে ক্যাথলিক চার্চের মাধ্যমে গাজায় বিতরণ করা হোক। তবে নৌবহরের কর্তৃপক্ষ এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা
ইতালির ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য বেনেদেত্তা স্কুদারি সোমবার রেডিও ২৪-কে বলেন, “ইসরায়েল বহুবার দেখিয়েছে যে তাদের কোনো সীমারেখা নেই। তাই আমরা উদ্বিগ্ন, তারা কী করতে পারে। তবে আমরা শান্তিপূর্ণ ও অহিংস অবস্থান বজায় রাখব।”
ইসরায়েল গত সপ্তাহের ড্রোন হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে দেশটি আগেই জানিয়েছিল, গাজায় পৌঁছানো থেকে নৌবহরকে যেকোনো মূল্যে আটকানো হবে। তাদের দাবি, হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অংশ হিসেবে আরোপিত নৌ অবরোধ বৈধ।
ইতালির পত্রিকা লা স্তাম্পা জানিয়েছে, ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ ইতালির রাষ্ট্রদূতকে আশ্বস্ত করেছেন যে নৌবহরের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করা হবে না। তবে এই তথ্য স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স।
গাজা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়, এতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় শুরু হওয়া ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬৫,০০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। খাদ্য ও মানবিক সহায়তার ঘাটতিতে লাখো মানুষ চরম দুর্দশায় রয়েছে।
সার্বিকভাবে, গাজার উদ্দেশ্যে নৌবহরের অগ্রযাত্রা শুধু মানবিক সংকট মোকাবিলার প্রতীকই নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও ইসরায়েলি অবরোধ ঘিরে এক জটিল ভূরাজনৈতিক উত্তেজনাকেও উন্মোচন করেছে।