০৮:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
তিন আগুনের পর ‘নাশকতার অভিযোগ, সন্দেহ আর অবিশ্বাস’ আলোচনায় জন বোলটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ: ট্রাম্পের সমালোচক আবারও বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি শান্তিরক্ষা মিশন থেকে কন্টিনজেন্ট ফেরত পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন ১৩ বছর বয়সী জে টেলরের আত্মহত্যার পেছনে রহস্য: FBI-র তদন্তে ‘হোয়াইট টাইগার’ এর সন্ধান সেনাপ্রধানের সাথে কুয়েতের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী H.E. Sameeh Essa Johar Hayat এর সৌজন্য সাক্ষাৎ ধারাবাহিক পতনে ধসের মুখে শেয়ারবাজার — ৫ হাজার পয়েন্ট সীমার কাছাকাছি ডিএসই সূচক তিন দফা দাবিতে অনড় এমপিও শিক্ষকরা, ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক শেষে নতুন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সিলেটের অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল বিএনপিকে জুলাই আন্দোলনের বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হবে — সালাহউদ্দিন জামায়াতের ‘পিআর আন্দোলন’ আসলে পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা — নাহিদ ইসলাম

মলদোভার প্রো-ইইউ দলের বড় জয় রাশিয়ার জন্য বড় ধাক্কা

সারসংক্ষেপ

  • ইউরোপমুখী পিএএস (PAS) দল অপ্রত্যাশিতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে
  • ফলাফলে রুশপন্থী ব্লক দুর্বল, সামান্য প্রতিবাদ করেছে
  • পিএএস অভিযোগ করেছে রাশিয়া ভোটে হস্তক্ষেপ করেছে, মস্কোর অস্বীকার
  • ইইউ ও ইউক্রেনের জেলেনস্কির অভিনন্দন
  • বিরোধী ও রাশিয়ার অভিযোগ, বহু মলদোভীয় ভোটার ভোটাধিকার পাননি

নির্বাচনের ফলাফল: প্রো-ইইউ শক্তির জোরালো বিজয়

মলদোভার ইউরোপমুখী শাসক দল একটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় নির্বাচনে রুশপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে বড় জয় পেয়েছে। সোমবার প্রকাশিত ফলাফল জানায়, প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু’র নেতৃত্বাধীন অ্যাকশন অ্যান্ড সলিডারিটি পার্টি (PAS) পেয়েছে ৫০.২% ভোট, যেখানে দেশকে রাশিয়ার দিকে ঠেলে নিতে চাওয়া দেশপ্রেমিক ব্লক পেয়েছে মাত্র ২৪.২%।

প্রেসিডেন্ট সান্দু এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি শুধু একটি দলের জয় নয়, এটি মলদোভার জয়। ইউরোপীয় পথই আমাদের ভবিষ্যৎ।”

 


ইউরোপীয় নেতাদের অভিনন্দন

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট অ্যান্টোনিও কোস্তা বলেন, “মলদোভার মানুষ গণতন্ত্র, সংস্কার ও ইউরোপীয় ভবিষ্যৎ বেছে নিয়েছে, রাশিয়ার চাপ ও হস্তক্ষেপের মুখেও।”

ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যদিও রাশিয়া নজিরবিহীনভাবে ভুয়া তথ্য প্রচার ও অর্থ দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ফলাফলকে রাশিয়ার ব্যর্থতার প্রমাণ বলে উল্লেখ করেন।


রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

ক্রেমলিন ভোটে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, রাশিয়ায় বসবাসকারী লাখো মলদোভীয় ভোটার ভোট দিতে পারেননি কারণ মাত্র দুটি কেন্দ্র খোলা হয়েছিল।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, মলদোভা যেন “ন্যাটো-নির্ভর রুশবিরোধী রাষ্ট্রে” পরিণত না হয়। তার দাবি, নির্বাচনের ফল মলদোভার সমাজে গভীর বিভাজনকে প্রকাশ করেছে।


তরুণ ভোটারদের উচ্ছ্বাস

চিসিনাউ শহরে প্রথমবার ভোট দেওয়া আনা মারিয়া অরসু বলেন, “আমাদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।”

পিএএস নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে একে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।


ভোটে হস্তক্ষেপের অভিযোগ

সরকার অভিযোগ করেছে, রাশিয়া ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে ও অর্থ দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছে। গত কয়েক সপ্তাহে শত শত অভিযানে অবৈধ তহবিল ও রুশ সমর্থিত নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।


বিরোধীদের দাবি

দেশপ্রেমিক ব্লকের নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ইগর দোদন দাবি করেছেন, ভোটে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রবাসী ভোটের মাধ্যমে পিএএস টিকে আছে। এছাড়া, রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার দুই লাখের বেশি মানুষ ভোটের সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন, যদিও কোনো প্রমাণ দেননি।

প্রেসিডেন্ট সান্দু বলেছেন, সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার প্রকৃত অংশগ্রহণকারীদের ভোটের সুযোগ দিতে।


আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতামত

ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা (OSCE) জানায়, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, তবে কিছু ত্রুটি দেখা গেছে। পর্যবেক্ষক পাউলা কার্দোসো বলেন, রাশিয়ার অভূতপূর্ব চাপের মাঝেও মলদোভা গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা দেখিয়েছে। তবে ভোটের ঠিক আগে দুটি দলকে অবৈধ অর্থায়নের অভিযোগে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়, যা তাদের অধিকার সীমিত করেছে।


অর্থনীতি ও চ্যালেঞ্জ

২৪ লাখ জনসংখ্যার মলদোভা বহুদিন ধরেই রাশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে দোদুল্যমান। দেশপ্রেমিক ব্লক অর্থনৈতিক কষ্ট ও ধীর সংস্কার নিয়ে মানুষের অসন্তোষকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। মুদ্রাস্ফীতি ৭%–এ স্থায়ী, আর জ্বালানি আমদানির ব্যয় বেড়ে চলেছে।

জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর আনাস্তাসিয়া পোসিউবান মন্তব্য করেন, পিএএস এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে—দেশের বিভাজন দূর করা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের সুফল সন্দিহান নাগরিকদের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা।

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন আগুনের পর ‘নাশকতার অভিযোগ, সন্দেহ আর অবিশ্বাস’ আলোচনায়

মলদোভার প্রো-ইইউ দলের বড় জয় রাশিয়ার জন্য বড় ধাক্কা

০৩:৪৪:৪৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সারসংক্ষেপ

  • ইউরোপমুখী পিএএস (PAS) দল অপ্রত্যাশিতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে
  • ফলাফলে রুশপন্থী ব্লক দুর্বল, সামান্য প্রতিবাদ করেছে
  • পিএএস অভিযোগ করেছে রাশিয়া ভোটে হস্তক্ষেপ করেছে, মস্কোর অস্বীকার
  • ইইউ ও ইউক্রেনের জেলেনস্কির অভিনন্দন
  • বিরোধী ও রাশিয়ার অভিযোগ, বহু মলদোভীয় ভোটার ভোটাধিকার পাননি

নির্বাচনের ফলাফল: প্রো-ইইউ শক্তির জোরালো বিজয়

মলদোভার ইউরোপমুখী শাসক দল একটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় নির্বাচনে রুশপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে বড় জয় পেয়েছে। সোমবার প্রকাশিত ফলাফল জানায়, প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু’র নেতৃত্বাধীন অ্যাকশন অ্যান্ড সলিডারিটি পার্টি (PAS) পেয়েছে ৫০.২% ভোট, যেখানে দেশকে রাশিয়ার দিকে ঠেলে নিতে চাওয়া দেশপ্রেমিক ব্লক পেয়েছে মাত্র ২৪.২%।

প্রেসিডেন্ট সান্দু এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি শুধু একটি দলের জয় নয়, এটি মলদোভার জয়। ইউরোপীয় পথই আমাদের ভবিষ্যৎ।”

 


ইউরোপীয় নেতাদের অভিনন্দন

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট অ্যান্টোনিও কোস্তা বলেন, “মলদোভার মানুষ গণতন্ত্র, সংস্কার ও ইউরোপীয় ভবিষ্যৎ বেছে নিয়েছে, রাশিয়ার চাপ ও হস্তক্ষেপের মুখেও।”

ফ্রান্স, জার্মানি ও পোল্যান্ডের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে, যদিও রাশিয়া নজিরবিহীনভাবে ভুয়া তথ্য প্রচার ও অর্থ দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ফলাফলকে রাশিয়ার ব্যর্থতার প্রমাণ বলে উল্লেখ করেন।


রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া

ক্রেমলিন ভোটে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছে, রাশিয়ায় বসবাসকারী লাখো মলদোভীয় ভোটার ভোট দিতে পারেননি কারণ মাত্র দুটি কেন্দ্র খোলা হয়েছিল।

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, মলদোভা যেন “ন্যাটো-নির্ভর রুশবিরোধী রাষ্ট্রে” পরিণত না হয়। তার দাবি, নির্বাচনের ফল মলদোভার সমাজে গভীর বিভাজনকে প্রকাশ করেছে।


তরুণ ভোটারদের উচ্ছ্বাস

চিসিনাউ শহরে প্রথমবার ভোট দেওয়া আনা মারিয়া অরসু বলেন, “আমাদের সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে।”

পিএএস নেতৃত্ব নির্বাচনের আগে একে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল।


ভোটে হস্তক্ষেপের অভিযোগ

সরকার অভিযোগ করেছে, রাশিয়া ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে ও অর্থ দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা করেছে। গত কয়েক সপ্তাহে শত শত অভিযানে অবৈধ তহবিল ও রুশ সমর্থিত নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।


বিরোধীদের দাবি

দেশপ্রেমিক ব্লকের নেতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ইগর দোদন দাবি করেছেন, ভোটে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রবাসী ভোটের মাধ্যমে পিএএস টিকে আছে। এছাড়া, রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার দুই লাখের বেশি মানুষ ভোটের সুযোগ পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন, যদিও কোনো প্রমাণ দেননি।

প্রেসিডেন্ট সান্দু বলেছেন, সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার প্রকৃত অংশগ্রহণকারীদের ভোটের সুযোগ দিতে।


আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতামত

ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থা (OSCE) জানায়, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল, তবে কিছু ত্রুটি দেখা গেছে। পর্যবেক্ষক পাউলা কার্দোসো বলেন, রাশিয়ার অভূতপূর্ব চাপের মাঝেও মলদোভা গণতন্ত্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা দেখিয়েছে। তবে ভোটের ঠিক আগে দুটি দলকে অবৈধ অর্থায়নের অভিযোগে নির্বাচন থেকে বাদ দেওয়া হয়, যা তাদের অধিকার সীমিত করেছে।


অর্থনীতি ও চ্যালেঞ্জ

২৪ লাখ জনসংখ্যার মলদোভা বহুদিন ধরেই রাশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে দোদুল্যমান। দেশপ্রেমিক ব্লক অর্থনৈতিক কষ্ট ও ধীর সংস্কার নিয়ে মানুষের অসন্তোষকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল। মুদ্রাস্ফীতি ৭%–এ স্থায়ী, আর জ্বালানি আমদানির ব্যয় বেড়ে চলেছে।

জার্মান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর আনাস্তাসিয়া পোসিউবান মন্তব্য করেন, পিএএস এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে—দেশের বিভাজন দূর করা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের সুফল সন্দিহান নাগরিকদের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা।