০৮:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
তিন আগুনের পর ‘নাশকতার অভিযোগ, সন্দেহ আর অবিশ্বাস’ আলোচনায় জন বোলটনের বিরুদ্ধে অভিযোগ: ট্রাম্পের সমালোচক আবারও বিচার ব্যবস্থার মুখোমুখি শান্তিরক্ষা মিশন থেকে কন্টিনজেন্ট ফেরত পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন ১৩ বছর বয়সী জে টেলরের আত্মহত্যার পেছনে রহস্য: FBI-র তদন্তে ‘হোয়াইট টাইগার’ এর সন্ধান সেনাপ্রধানের সাথে কুয়েতের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী H.E. Sameeh Essa Johar Hayat এর সৌজন্য সাক্ষাৎ ধারাবাহিক পতনে ধসের মুখে শেয়ারবাজার — ৫ হাজার পয়েন্ট সীমার কাছাকাছি ডিএসই সূচক তিন দফা দাবিতে অনড় এমপিও শিক্ষকরা, ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক শেষে নতুন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সিলেটের অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল বিএনপিকে জুলাই আন্দোলনের বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হবে — সালাহউদ্দিন জামায়াতের ‘পিআর আন্দোলন’ আসলে পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা — নাহিদ ইসলাম

কামালা হ্যারিসের নতুন পথ খোঁজা

বই প্রকাশনা ও ভিন্ন এক বাস্তবতা

হোয়াইট হাউসে ২৪৭তম দিন পূর্ণ করার কথা থাকলেও কামালা হ্যারিস সেই সময় নিউইয়র্কে ছিলেন। কারণ তিনি বেরিয়েছেন নিজের নতুন বই “১০৭ ডেজ” নিয়ে ট্যুরে, যেখানে বর্ণনা করেছেন সেই নির্বাচনী দিনগুলোর কথা, যা শেষ পর্যন্ত তাকে প্রেসিডেন্ট পদে পৌঁছে দিতে পারেনি।
বই প্রকাশনার অনুষ্ঠানকে ঘিরে ভেন্যুর বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। ভেতরে অতিথিদের পরিবেশন করা হচ্ছিল বিশেষ ককটেল ‘ম্যাডাম ভিপি’। বাইরে রাস্তার পাশে বিক্রি হচ্ছিল পুরোনো প্রচারণার টি-শার্ট—“She Can Do It!”

সমালোচনা ও বিতর্ক

ডেমোক্র্যাট দলের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের কৌশলবিদ বইটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এটি ২০২৪ সালের নির্বাচনের অপ্রয়োজনীয় পুনরালোচনা। কেউ কেউ বইয়ের মূল্যায়নকে “অদ্ভুত” বলেও উল্লেখ করেছেন।


সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘনিষ্ঠ কিছু লোকও বইটির সমালোচনা করেছেন। এমনকি রিপাবলিকান শিবির থেকেও বিদ্রূপ এসেছে—ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন তিনি বইটি কিনবেন, আর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, “আরও কিছু দিন থাকলে হ্যারিস আরও বেশি ভোটে হারতেন।”

পাঠক ও জনসাড়া

তবে সাধারণ পাঠক ও সমর্থকদের মধ্যে বইটির বিপুল সাড়া পড়েছে। মাত্র একদিনেই বইটির পঞ্চম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। অনেকে হ্যারিসের পরাজয়কে তার ব্যর্থতা নয়, বরং আমেরিকার সংকট হিসেবে দেখছেন। বড় বই বিক্রেতা বার্নস অ্যান্ড নোবলের প্রধান নির্বাহীও জানিয়েছেন, বিক্রি চমৎকার হচ্ছে, যা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বইয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।

নিজের অবস্থান স্পষ্টকরণ

হ্যারিস সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বইটি কোনো নস্টালজিয়া নয়। বরং এটি বর্তমান পরিস্থিতিকে বোঝাতে ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনায় সাহায্য করার জন্য লেখা।
তিনি স্বীকার করেছেন—বাইডেনের বয়স ও পুনর্নির্বাচনে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখার কারণে বিতর্ক তৈরি হবে, তবে তিনি মনে করেছেন সত্য বলা জরুরি। তার ভাষায়, “আমি জানতাম সমালোচনা আসবে, কিন্তু সততার বিনিময়ে সৎ আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে চেয়েছি।”

রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

হ্যারিসের বয়স এখন প্রায় ৬১। তিনি খুব তরুণ নন, তবে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার মতো বয়সও হয়নি। ২০২৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রার্থিতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুললেও ঘনিষ্ঠরা বলছেন, আপাতত সে দিকে তার মনোযোগ নেই। বরং তিনি খুঁজছেন নিজের রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করার উপায়।

নিরাপত্তা ও সমাজের অবস্থা

হ্যারিস বলেছেন, রাজনৈতিক হুমকি তার কাছে নতুন কিছু নয়। তিনি অতীতে গ্যাং অপরাধ ও প্রসিকিউশনে কাজ করেছেন, মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন বারবার। কিন্তু তিনি ভয় পান না। তার মতে, আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এখন মানুষের মধ্যে নতুন করে কমিউনিটি গড়ে তোলা ও আস্থা ফিরিয়ে আনা।

বইয়ের ভেতরের কাহিনি

বইটিতে প্রতিদিনের প্রচারণার অভিজ্ঞতা দিনলিপির মতো সাজানো হয়েছে। যদিও বাস্তবে তিনি কোনো ডায়েরি রাখেননি। বিশেষ করে বাইডেন নিয়ে লেখাগুলোই বিতর্কের মূল উৎস। উদাহরণস্বরূপ, তিনি লিখেছেন—পিট বুটিজেজকে ভাইস প্রেসিডেন্ট না নেওয়ার পেছনে তার নিজেরই দ্বিধা কাজ করেছে, কারণ তিনি ভেবেছিলেন, একই সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ-দক্ষিণ এশীয় নারী এবং একজন সমকামী প্রার্থীকে মানুষ গ্রহণ নাও করতে পারে।

আবেগ ও ক্ষতির ছাপ

নিজের প্রকৃত আবেগ নিয়ে কথা বলতে হ্যারিস কুণ্ঠিত। তিনি স্বীকার করেছেন, এই হার তাকে মায়ের মৃত্যুর পর পাওয়া শোকের মতো আঘাত দিয়েছে। তবে হতাশায় না ডুবে তিনি এখন মনোযোগ দিচ্ছেন ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতা ও দেশকে ‘ধ্বংসের পথে’ নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার দিকে।

মাঠে ফেরার চেষ্টা

ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরে হ্যারিস নিজের সমর্থকদের কাছে গেছেন। হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির প্রাঙ্গণে ছাত্রছাত্রীদের ভিড় তার চারপাশে জমে যায়। তিনি তাদের উদ্দেশে স্বপ্ন দেখার ও দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন।
কংগ্রেসনাল ব্ল্যাক ককাস ডিনারে তিনি তীব্র ভাষায় রিপাবলিকানদের সমালোচনা করেন এবং ট্রাম্পকে “অযোগ্য ও স্বার্থপর প্রেসিডেন্ট” আখ্যা দেন। তার বক্তব্যে উপস্থিত অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

কামালা হ্যারিসের “১০৭ ডেজ” বইটি একদিকে নির্বাচনী প্রচারের ভেতরের গল্প তুলে ধরছে, অন্যদিকে হ্যারিসের নিজস্ব ভবিষ্যৎ খোঁজার প্রতিফলনও দেখাচ্ছে। তার সমর্থকদের কাছে এটি অনুপ্রেরণা, সমালোচকদের কাছে বিতর্ক—তবে নিশ্চিতভাবেই আমেরিকার রাজনীতিতে হ্যারিস এখনো আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন আগুনের পর ‘নাশকতার অভিযোগ, সন্দেহ আর অবিশ্বাস’ আলোচনায়

কামালা হ্যারিসের নতুন পথ খোঁজা

০৩:৫৩:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বই প্রকাশনা ও ভিন্ন এক বাস্তবতা

হোয়াইট হাউসে ২৪৭তম দিন পূর্ণ করার কথা থাকলেও কামালা হ্যারিস সেই সময় নিউইয়র্কে ছিলেন। কারণ তিনি বেরিয়েছেন নিজের নতুন বই “১০৭ ডেজ” নিয়ে ট্যুরে, যেখানে বর্ণনা করেছেন সেই নির্বাচনী দিনগুলোর কথা, যা শেষ পর্যন্ত তাকে প্রেসিডেন্ট পদে পৌঁছে দিতে পারেনি।
বই প্রকাশনার অনুষ্ঠানকে ঘিরে ভেন্যুর বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো। ভেতরে অতিথিদের পরিবেশন করা হচ্ছিল বিশেষ ককটেল ‘ম্যাডাম ভিপি’। বাইরে রাস্তার পাশে বিক্রি হচ্ছিল পুরোনো প্রচারণার টি-শার্ট—“She Can Do It!”

সমালোচনা ও বিতর্ক

ডেমোক্র্যাট দলের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের কৌশলবিদ বইটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এটি ২০২৪ সালের নির্বাচনের অপ্রয়োজনীয় পুনরালোচনা। কেউ কেউ বইয়ের মূল্যায়নকে “অদ্ভুত” বলেও উল্লেখ করেছেন।


সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘনিষ্ঠ কিছু লোকও বইটির সমালোচনা করেছেন। এমনকি রিপাবলিকান শিবির থেকেও বিদ্রূপ এসেছে—ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন তিনি বইটি কিনবেন, আর ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেছেন, “আরও কিছু দিন থাকলে হ্যারিস আরও বেশি ভোটে হারতেন।”

পাঠক ও জনসাড়া

তবে সাধারণ পাঠক ও সমর্থকদের মধ্যে বইটির বিপুল সাড়া পড়েছে। মাত্র একদিনেই বইটির পঞ্চম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। অনেকে হ্যারিসের পরাজয়কে তার ব্যর্থতা নয়, বরং আমেরিকার সংকট হিসেবে দেখছেন। বড় বই বিক্রেতা বার্নস অ্যান্ড নোবলের প্রধান নির্বাহীও জানিয়েছেন, বিক্রি চমৎকার হচ্ছে, যা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বইয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।

নিজের অবস্থান স্পষ্টকরণ

হ্যারিস সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বইটি কোনো নস্টালজিয়া নয়। বরং এটি বর্তমান পরিস্থিতিকে বোঝাতে ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনায় সাহায্য করার জন্য লেখা।
তিনি স্বীকার করেছেন—বাইডেনের বয়স ও পুনর্নির্বাচনে তার সিদ্ধান্ত নিয়ে লেখার কারণে বিতর্ক তৈরি হবে, তবে তিনি মনে করেছেন সত্য বলা জরুরি। তার ভাষায়, “আমি জানতাম সমালোচনা আসবে, কিন্তু সততার বিনিময়ে সৎ আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে চেয়েছি।”

রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা

হ্যারিসের বয়স এখন প্রায় ৬১। তিনি খুব তরুণ নন, তবে রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার মতো বয়সও হয়নি। ২০২৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রার্থিতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুললেও ঘনিষ্ঠরা বলছেন, আপাতত সে দিকে তার মনোযোগ নেই। বরং তিনি খুঁজছেন নিজের রাজনৈতিক কণ্ঠস্বরকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠা করার উপায়।

নিরাপত্তা ও সমাজের অবস্থা

হ্যারিস বলেছেন, রাজনৈতিক হুমকি তার কাছে নতুন কিছু নয়। তিনি অতীতে গ্যাং অপরাধ ও প্রসিকিউশনে কাজ করেছেন, মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন বারবার। কিন্তু তিনি ভয় পান না। তার মতে, আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এখন মানুষের মধ্যে নতুন করে কমিউনিটি গড়ে তোলা ও আস্থা ফিরিয়ে আনা।

বইয়ের ভেতরের কাহিনি

বইটিতে প্রতিদিনের প্রচারণার অভিজ্ঞতা দিনলিপির মতো সাজানো হয়েছে। যদিও বাস্তবে তিনি কোনো ডায়েরি রাখেননি। বিশেষ করে বাইডেন নিয়ে লেখাগুলোই বিতর্কের মূল উৎস। উদাহরণস্বরূপ, তিনি লিখেছেন—পিট বুটিজেজকে ভাইস প্রেসিডেন্ট না নেওয়ার পেছনে তার নিজেরই দ্বিধা কাজ করেছে, কারণ তিনি ভেবেছিলেন, একই সঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ-দক্ষিণ এশীয় নারী এবং একজন সমকামী প্রার্থীকে মানুষ গ্রহণ নাও করতে পারে।

আবেগ ও ক্ষতির ছাপ

নিজের প্রকৃত আবেগ নিয়ে কথা বলতে হ্যারিস কুণ্ঠিত। তিনি স্বীকার করেছেন, এই হার তাকে মায়ের মৃত্যুর পর পাওয়া শোকের মতো আঘাত দিয়েছে। তবে হতাশায় না ডুবে তিনি এখন মনোযোগ দিচ্ছেন ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যর্থতা ও দেশকে ‘ধ্বংসের পথে’ নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার দিকে।

মাঠে ফেরার চেষ্টা

ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিরে হ্যারিস নিজের সমর্থকদের কাছে গেছেন। হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির প্রাঙ্গণে ছাত্রছাত্রীদের ভিড় তার চারপাশে জমে যায়। তিনি তাদের উদ্দেশে স্বপ্ন দেখার ও দৃঢ়তার সঙ্গে নেতৃত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন।
কংগ্রেসনাল ব্ল্যাক ককাস ডিনারে তিনি তীব্র ভাষায় রিপাবলিকানদের সমালোচনা করেন এবং ট্রাম্পকে “অযোগ্য ও স্বার্থপর প্রেসিডেন্ট” আখ্যা দেন। তার বক্তব্যে উপস্থিত অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

কামালা হ্যারিসের “১০৭ ডেজ” বইটি একদিকে নির্বাচনী প্রচারের ভেতরের গল্প তুলে ধরছে, অন্যদিকে হ্যারিসের নিজস্ব ভবিষ্যৎ খোঁজার প্রতিফলনও দেখাচ্ছে। তার সমর্থকদের কাছে এটি অনুপ্রেরণা, সমালোচকদের কাছে বিতর্ক—তবে নিশ্চিতভাবেই আমেরিকার রাজনীতিতে হ্যারিস এখনো আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন।