০৭:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
সেনাপ্রধানের সাথে কুয়েতের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী H.E. Sameeh Essa Johar Hayat এর সৌজন্য সাক্ষাৎ ধারাবাহিক পতনে ধসের মুখে শেয়ারবাজার — ৫ হাজার পয়েন্ট সীমার কাছাকাছি ডিএসই সূচক তিন দফা দাবিতে অনড় এমপিও শিক্ষকরা, ফখরুলের সঙ্গে বৈঠক শেষে নতুন কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় সিলেটের অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্টসেল বিএনপিকে জুলাই আন্দোলনের বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হবে — সালাহউদ্দিন জামায়াতের ‘পিআর আন্দোলন’ আসলে পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা — নাহিদ ইসলাম শাহজালাল বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ডে নষ্ট হলো পোশাক খাতের কাঁচামাল ও ব্যবসায়িক নমুনা শিরোনাম: মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা যাবে না—এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের আপিলের শুনানি নির্ধারিত বন্যার নতুন বাস্তবতা: এফিমার মানচিত্র পাল্টাতে শহরগুলোর জোর প্রচেষ্টা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রধানের আহ্বান: মার্কিন-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ শিথিল করতে, অথবা দীর্ঘমেয়াদী বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে ঝুঁকি

নতুন সংকটে আর্জেন্টিনা, ট্রাম্পের সহায়তা কতটা কার্যকর?

প্রেসিডেন্ট মাইলির প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা

প্রায় ২০ মাস ধরে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলি নিজেকে অর্থনীতির রক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কঠোর আর্থিক সংস্কারের মাধ্যমে তিনি লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং দীর্ঘদিনের বাজেট ঘাটতি কমাতে সরকারি ব্যয় ছেঁটে দেন। এসব পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের জীবনে কষ্ট বাড়ালেও অনেকে ভেবেছিলেন অবশেষে হয়তো আর্জেন্টিনা ঘুরে দাঁড়াবে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটি আবারও গভীর সংকটে ডুবে গেছে। বিনিয়োগকারীরা দ্রুত পেসো বিক্রি শুরু করেন, বিদেশি সম্পদ থেকে সরে আসেন এবং দেশ ঋণ খেলাপির আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে। এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে এসে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।


মার্কিন সহায়তা ও বাজারে আস্থা ফেরানো

মার্কিন ট্রেজারি ঘোষণা করেছে, আর্জেন্টিনার অর্থনীতি বাঁচাতে যা যা প্রয়োজন তারা করবে। ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন বলেন, “দশকের পর দশক অব্যবস্থাপনার পর প্রেসিডেন্ট মাইলি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনছেন।”

এই সহায়তার ফলে আপাতত বাজার কিছুটা শান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য আইনসভা নির্বাচনের আগে এটি মাইলির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Argentina's President Vowed to Fix Its Economy. Then Came a Crisis. - The New York Times

অর্থনীতিতে অগ্রগতি ও সীমাবদ্ধতা

মাইলি ২০২৩ সালে নির্বাচিত হয়ে ঘোষণা করেছিলেন, সরকারি ব্যয় ‘চেইনসো’ দিয়ে কেটে আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে নতুন রূপ দেবেন। তার শাসনামলে মাসিক মুদ্রাস্ফীতি ১২.৮ শতাংশ থেকে নেমে ২ শতাংশের নিচে এসেছে। তিনি লক্ষাধিক সরকারি চাকরি কাটছাঁট করেছেন, গবেষণা ও কল্যাণ খাতে ব্যয় কমিয়েছেন এবং এক দশকের বেশি সময় পর বাজেট ঘাটতি দূর করেছেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা আলেহান্দ্রো ওয়ার্নার মন্তব্য করেন, “তিনি অনেক ভালো কাজ করেছেন, যদিও পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারত। কখনও কখনও পরিবর্তন আনতে শক্ত চরিত্র প্রয়োজন।”

তবে অগ্রগতির পাশাপাশি ভোগান্তি স্পষ্ট। চাকরি হানি, ভর্তুকি কমানো এবং ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসে অর্থনীতি মন্দার পথে যাচ্ছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমায় বসবাস করছে।


নীতিগত ভুল ও পেসোর দুর্দশা

মাইলির অন্যতম বড় পদক্ষেপ ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে পেসোকে মুক্ত করা। তিনি দ্রুত মুদ্রার মান কমান এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ না থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেসোর পতন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।

ফলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার আশঙ্কা বেড়েছে—একটি বিষয় যার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আর্জেন্টিনায়।


রাজনৈতিক চাপে মাইলি

অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমস্যাও মাথাচাড়া দিচ্ছে। তার বোন ও ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা কারিনা মাইলি দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক নির্বাচনে তার দল পরাজিত হয়েছে, আর কংগ্রেসও বাজেট পরিকল্পনা আটকে দিচ্ছে।

First 100 days: Milei falters on shock therapy for Argentina's economy | Business and Economy News | Al Jazeera

জনগণের অসন্তোষও বাড়ছে। হাজার হাজার মানুষ ব্যয় কমানোর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, মাইলির জনপ্রিয়তা কমে এখন ৪৪ থেকে ৫৪ শতাংশ মানুষের অস্বীকৃতিতে দাঁড়িয়েছে।


জনগণের অভিমত

বুয়েনোস আইরেসের ২৭ বছর বয়সী দোকানকর্মী লিওনার্দো গ্যাব্রিয়েল রামিরেজ বলেন, “মাইলির কিছু নীতি ভালো হলেও এর বোঝা পুরোপুরি গরিবদের ওপর চাপছে। আমার দাদী ওষুধ কিনতে পারছেন না, অথচ ধনীদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।”


যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল ও রাজনৈতিক মূল্য

ট্রাম্প ও মাইলির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। মাইলি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের প্রশংসা করেন, তার নীতি অনুসরণ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেন।

তবে এই ঘনিষ্ঠতা আর্জেন্টিনায় সবার কাছে ইতিবাচক নয়। দীর্ঘদিনের মার্কিন হস্তক্ষেপের কারণে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করতে চান না। বিশেষ করে, আর্জেন্টিনার লিথিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ওপর মার্কিন আগ্রহকে কেন্দ্র করে সন্দেহ আরও গভীর।


ভবিষ্যতের প্রশ্ন

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কিছুটা সময় কিনে দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে মাইলিকে নীতিগত সংশোধন করতে হবে। আইএমএফের আলেহান্দ্রো ওয়ার্নার বলেন, “শুধু আর্থিক সহায়তা যথেষ্ট নয়, এটি অবশ্যই নীতিগত পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।”

জনপ্রিয় সংবাদ

সেনাপ্রধানের সাথে কুয়েতের এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী H.E. Sameeh Essa Johar Hayat এর সৌজন্য সাক্ষাৎ

নতুন সংকটে আর্জেন্টিনা, ট্রাম্পের সহায়তা কতটা কার্যকর?

০৪:৩০:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রেসিডেন্ট মাইলির প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা

প্রায় ২০ মাস ধরে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মাইলি নিজেকে অর্থনীতির রক্ষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কঠোর আর্থিক সংস্কারের মাধ্যমে তিনি লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং দীর্ঘদিনের বাজেট ঘাটতি কমাতে সরকারি ব্যয় ছেঁটে দেন। এসব পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের জীবনে কষ্ট বাড়ালেও অনেকে ভেবেছিলেন অবশেষে হয়তো আর্জেন্টিনা ঘুরে দাঁড়াবে।

কিন্তু সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশটি আবারও গভীর সংকটে ডুবে গেছে। বিনিয়োগকারীরা দ্রুত পেসো বিক্রি শুরু করেন, বিদেশি সম্পদ থেকে সরে আসেন এবং দেশ ঋণ খেলাপির আশঙ্কায় কেঁপে ওঠে। এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এগিয়ে এসে ২০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।


মার্কিন সহায়তা ও বাজারে আস্থা ফেরানো

মার্কিন ট্রেজারি ঘোষণা করেছে, আর্জেন্টিনার অর্থনীতি বাঁচাতে যা যা প্রয়োজন তারা করবে। ট্রেজারি সচিব স্কট বেসেন বলেন, “দশকের পর দশক অব্যবস্থাপনার পর প্রেসিডেন্ট মাইলি স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনছেন।”

এই সহায়তার ফলে আপাতত বাজার কিছুটা শান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য আইনসভা নির্বাচনের আগে এটি মাইলির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Argentina's President Vowed to Fix Its Economy. Then Came a Crisis. - The New York Times

অর্থনীতিতে অগ্রগতি ও সীমাবদ্ধতা

মাইলি ২০২৩ সালে নির্বাচিত হয়ে ঘোষণা করেছিলেন, সরকারি ব্যয় ‘চেইনসো’ দিয়ে কেটে আর্জেন্টিনার অর্থনীতিকে নতুন রূপ দেবেন। তার শাসনামলে মাসিক মুদ্রাস্ফীতি ১২.৮ শতাংশ থেকে নেমে ২ শতাংশের নিচে এসেছে। তিনি লক্ষাধিক সরকারি চাকরি কাটছাঁট করেছেন, গবেষণা ও কল্যাণ খাতে ব্যয় কমিয়েছেন এবং এক দশকের বেশি সময় পর বাজেট ঘাটতি দূর করেছেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা আলেহান্দ্রো ওয়ার্নার মন্তব্য করেন, “তিনি অনেক ভালো কাজ করেছেন, যদিও পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারত। কখনও কখনও পরিবর্তন আনতে শক্ত চরিত্র প্রয়োজন।”

তবে অগ্রগতির পাশাপাশি ভোগান্তি স্পষ্ট। চাকরি হানি, ভর্তুকি কমানো এবং ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসে অর্থনীতি মন্দার পথে যাচ্ছে। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমায় বসবাস করছে।


নীতিগত ভুল ও পেসোর দুর্দশা

মাইলির অন্যতম বড় পদক্ষেপ ছিল সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে পেসোকে মুক্ত করা। তিনি দ্রুত মুদ্রার মান কমান এবং আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ না থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পেসোর পতন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে।

ফলে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার আশঙ্কা বেড়েছে—একটি বিষয় যার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে আর্জেন্টিনায়।


রাজনৈতিক চাপে মাইলি

অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমস্যাও মাথাচাড়া দিচ্ছে। তার বোন ও ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা কারিনা মাইলি দুর্নীতির অভিযোগে জড়িয়ে পড়েছেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাদেশিক নির্বাচনে তার দল পরাজিত হয়েছে, আর কংগ্রেসও বাজেট পরিকল্পনা আটকে দিচ্ছে।

First 100 days: Milei falters on shock therapy for Argentina's economy | Business and Economy News | Al Jazeera

জনগণের অসন্তোষও বাড়ছে। হাজার হাজার মানুষ ব্যয় কমানোর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, মাইলির জনপ্রিয়তা কমে এখন ৪৪ থেকে ৫৪ শতাংশ মানুষের অস্বীকৃতিতে দাঁড়িয়েছে।


জনগণের অভিমত

বুয়েনোস আইরেসের ২৭ বছর বয়সী দোকানকর্মী লিওনার্দো গ্যাব্রিয়েল রামিরেজ বলেন, “মাইলির কিছু নীতি ভালো হলেও এর বোঝা পুরোপুরি গরিবদের ওপর চাপছে। আমার দাদী ওষুধ কিনতে পারছেন না, অথচ ধনীদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।”


যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল ও রাজনৈতিক মূল্য

ট্রাম্প ও মাইলির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। মাইলি প্রকাশ্যে ট্রাম্পের প্রশংসা করেন, তার নীতি অনুসরণ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেন।

তবে এই ঘনিষ্ঠতা আর্জেন্টিনায় সবার কাছে ইতিবাচক নয়। দীর্ঘদিনের মার্কিন হস্তক্ষেপের কারণে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বাস করতে চান না। বিশেষ করে, আর্জেন্টিনার লিথিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজের ওপর মার্কিন আগ্রহকে কেন্দ্র করে সন্দেহ আরও গভীর।


ভবিষ্যতের প্রশ্ন

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা কিছুটা সময় কিনে দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হলে মাইলিকে নীতিগত সংশোধন করতে হবে। আইএমএফের আলেহান্দ্রো ওয়ার্নার বলেন, “শুধু আর্থিক সহায়তা যথেষ্ট নয়, এটি অবশ্যই নীতিগত পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।”