ভারতের রেটিং স্থিতিশীল ঘোষণা
আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডিস সোমবার ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রার ইস্যুয়ার রেটিং এবং স্থানীয় মুদ্রার সিনিয়র আনসিকিউরড রেটিং ‘Baa3’ বজায় রেখেছে। এ ছাড়া দৃষ্টিভঙ্গি রাখা হয়েছে ‘স্থিতিশীল’। শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল বৈদেশিক অবস্থানকেই এ সিদ্ধান্তের ভিত্তি বলা হয়েছে।
মুডিস ভারতের স্বল্পমেয়াদি স্থানীয় মুদ্রার রেটিংও ‘P-3’ পর্যায়ে বজায় রেখেছে।
রেটিংয়ের কারণ
সংস্থাটি জানায়, ভারতের ক্রেডিট শক্তি এখনো কার্যকর এবং তা টিকে থাকবে। এর মধ্যে রয়েছে বৃহৎ ও দ্রুত-বর্ধনশীল অর্থনীতি, শক্তিশালী বৈদেশিক খাত এবং রাজস্ব ঘাটতি সামাল দেওয়ার জন্য স্থিতিশীল দেশীয় অর্থায়ন ব্যবস্থা।
তবে তারা সতর্ক করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কনীতি ও বৈশ্বিক নীতিগত প্রতিবন্ধকতা ভারতের উৎপাদন খাতে বিদেশি বিনিয়োগ টানার ক্ষমতাকে সীমিত করছে।
দুর্বল দিক ও চ্যালেঞ্জ
মুডিস উল্লেখ করেছে, ভারতের অন্যতম বড় দুর্বলতা রাজস্ব ব্যবস্থাপনায়। শক্তিশালী জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও ধীরে ধীরে ঘাটতি কমার পরও সরকারের ঋণভার খুব ধীর গতিতে কমবে। রাজস্ব আয় কমে যাওয়ায় ঋণ টেকসই রাখার সক্ষমতা সহজে বাড়বে না।
ঋণের সীমা ও কাঠামো
ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্থানীয় মুদ্রার বন্ড সীমা ‘A2’ এবং বৈদেশিক মুদ্রার বন্ড সীমা ‘A3’ পর্যায়ে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
এখানে চার ধাপের ব্যবধান বোঝাচ্ছে যে দেশটিতে মাঝারি পর্যায়ের রাজস্ব ঘাটতি, সরকারি খাতের বড় প্রভাব এবং নীতিগত পূর্বানুমানযোগ্যতায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আর স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রার সীমার মধ্যে এক ধাপ ব্যবধান বোঝাচ্ছে যে ভারতের বহির্বিশ্বে ঋণভার সীমিত এবং ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতার সম্ভাবনা কম।
প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক শক্তি
মুডিস বলছে, ভারতের ক্রেডিট প্রোফাইলের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা। বিশাল দেশীয় বাজার, অনুকূল জনসংখ্যাগত বৈশিষ্ট্য এবং চাহিদা-নির্ভর প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিকে বহিরাগত আঘাত থেকে সুরক্ষিত রেখেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৬.৫ শতাংশ হলেও আগের বছরের (২০২৩-২৪) ৯.২ শতাংশের তুলনায় তা স্থিতিশীল প্রবণতা দেখাচ্ছে। আগামী দুই থেকে তিন বছর ভারত জি-২০ অর্থনীতিগুলোর মধ্যে দ্রুততম প্রবৃদ্ধিশীল দেশ হিসেবেই থাকবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
মুডিস পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরেও ভারতের অর্থনীতি ৬.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। সরকারের মূলধনী ব্যয় বৃদ্ধির নীতি, কম মুদ্রাস্ফীতি এবং এর ফলে আর্থিক নীতিতে শিথিলতা দেশীয় ভোগ ও বিনিয়োগকে আরও শক্তিশালী করবে।
সারসংক্ষেপে, ভারতের অর্থনীতি স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকলেও রাজস্ব ঘাটতি ও ঋণভার দীর্ঘমেয়াদি দুর্বলতা হিসেবে রয়ে যাচ্ছে।