সিনেমার কল্পনা থেকে বাস্তবের যাত্রা
১৯৮৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ফিল্ড অব ড্রিমস–এ এক আইওয়া কৃষকের গল্প বলা হয়, যিনি ভুট্টার জমি কেটে একটি বেসবল মাঠ তৈরি করেন এবং সেখানেই পুনর্মিলিত হন মৃত বাবার সঙ্গে। কেভিন কস্টনার ও জেমস আর্ল জোনস অভিনীত ছবিটি ছিল শৈশবের স্মৃতি আর খাঁটি আনন্দের প্রতীক, যেখানে অর্থলোভের জায়গা ছিল না। কিন্তু সিনেমার পরই হাজারো দর্শক ভিড় জমাতে শুরু করেন আইওয়ার ডায়ার্সভিলে গড়ে ওঠা সেই মাঠে।
শান্ত পরিবেশ নাকি বাণিজ্যের ভিড়?
আজও লাখো মানুষ ভ্রমণ করে এখানে। অনেকেই ছবির মতো শান্ত পরিবেশে ছবি তোলে ভুট্টাক্ষেত ও সাদা বেড়ার সামনে। কিন্তু বাণিজ্যিকীকরণও থেমে থাকেনি। মাঠের পাশের বাড়ি এক রাতের জন্য ভাড়া দেওয়া হয় ৬০০ ডলারে, সাইটের ভুট্টা দিয়ে বানানো হুইস্কি বিক্রি হয় ৭৯ ডলারে, আর সপ্তাহান্তে অভিনয়শিল্পীরা মঞ্চে ওঠেন। এমনকি জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত মেজর লিগ বেসবলের ম্যাচও অনুষ্ঠিত হয়েছে এখানে।
কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ
ডায়ার্সভিল ইভেন্টস নামে একটি অলাভজনক সংস্থা ২০২৪ সালে ২৭ মিলিয়ন ডলার দিয়ে মাঠটি কিনে নেয়, যেখানে আইওয়া রাজ্য আরও কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে নতুন স্টেডিয়াম গড়তে। আগামী গ্রীষ্মে এখানে আবারও পেশাদার খেলা হবে—মিনেসোটা টুইনস বনাম ফিলাডেলফিয়া ফিলিস। এর বাইরে সংগীত উৎসবও আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে টিম ম্যাকগ্রো প্রধান আকর্ষণ ছিলেন।
মতভেদ: পবিত্র মাঠ নাকি বেসবলের ডিজনিল্যান্ড?
পরিচালক কিথ রাহে বলেন, “আমরা বাণিজ্যিকীকরণ করছি না, বরং মাঠকে জীবিত রাখছি। এটি আইওয়ার মাউন্ট রাশমোর।” কিন্তু অন্যরা এটিকে বেসবলের ডিজনিল্যান্ড বলে সমালোচনা করছেন। এরই মধ্যে দর্শকদের জন্য নতুন রেস্টুরেন্ট, গাইডেড ট্যুর আর বিশেষ প্রতিযোগিতার আয়োজন চলছে।
মাঠের শুরু: বিভক্ত মালিকানা
ফিল্ড অব ড্রিমস তৈরি হয়েছিল দুই কৃষকের জমিতে। আল অ্যামেস্ক্যাম্প নিজের অংশে পরে ভুট্টা চাষে ফিরে যান। ডন ল্যানসিং কিন্তু মাঠ অক্ষুণ্ণ রেখে দর্শকদের জন্য ব্যাট-বল রাখেন। এখান থেকেই শুরু হয়েছিল স্মারক বিক্রি ও “ঘোস্ট প্লেয়ারস” নামের অভিনয় দলের জন্ম। তারা কর্নক্ষেত থেকে বেরিয়ে পুরনো ইউনিফর্ম পরে দর্শকদের আনন্দ দিত।
আধ্যাত্মিক টান ও নতুন মালিকানা
১৯৯০-এর দশকে এক বিধবা, বেকি ডুবুইসন, স্বপ্নে মাঠকে দেখেন এবং পরে ডন ল্যানসিংকে বিয়ে করেন। তারা বিদেশি বিনিয়োগকারী কিংবা ওয়াটার পার্কের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, কারণ তারা মাঠের মূল রূপ ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে মাঠ বিক্রি হয় বিভিন্ন দম্পতি ও বিনিয়োগকারীর কাছে—কেউ ৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যুব বেসবলের কেন্দ্র বানানোর চেষ্টা করেছেন, কেউ আবার জাতীয় ম্যাচ আয়োজন করেছেন।
টেলিভিশনে স্বপ্ন বাস্তবায়ন
২০১৬ সালে মেজর লিগ বেসবলের কমিশনার রব ম্যানফ্রেড মাঠে খেলা আয়োজনের পরিকল্পনা করেন। শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের গ্রীষ্মে মাঠে ইয়াঙ্কিস বনাম হোয়াইট সক্সের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়, যা সরাসরি সম্প্রচারিত হয় লাখো দর্শকের সামনে। কেভিন কস্টনার নিজে কর্নক্ষেত থেকে বেরিয়ে এসে দর্শকদের অভিবাদন জানান।
বর্তমান: নতুন পরিকল্পনা, নতুন আয়োজন
২০২১ সালের শেষ দিকে আবারও মালিকানা বদল হয়। শিকাগোর ডেভেলপার রিক হেইডনার ও প্রাক্তন খেলোয়াড় ফ্রাঙ্ক থমাস মাঠ কিনলেও তাদের পরিকল্পনা আংশিক বাস্তবায়িত হয়। পরবর্তীতে অলাভজনক সংস্থা ডায়ার্সভিল ইভেন্টস দায়িত্ব নেয়। তারা যুব বেসবল টুর্নামেন্ট, বড় ইভেন্ট ও পর্যটনকেন্দ্রিক আয়োজনে জোর দেয়।
আজ মাঠে নতুন স্ট্যান্ড, ব্যাটিং কেজ ও অতিরিক্ত মাঠ তৈরি হচ্ছে। শুধু এ বছরই ৬৫০-এর বেশি দল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে। প্রবেশ ফি দলপ্রতি ৮৪৯ ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছে।
স্মৃতির মাঠ থেকে বাণিজ্যের মঞ্চ
অনেক দর্শকের কাছে এটি এখনও সিনেমার মতোই এক আবেগময় স্থান। তবে প্রাক্তন মালিক ল্যানসিং দম্পতির মতে, “বাণিজ্যিকীকরণের ভালো-মন্দ দুটোই আছে।” আর আজকের দর্শকদের কাছে এটি শৈশবের স্মৃতি, পরিবারের মিলনমেলা এবং ভ্রমণের এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
সিনেমার সংলাপের মতোই যেন সত্যি হয়েছে সেই ভবিষ্যদ্বাণী—মানুষ আজও অজান্তে আসে এখানে, শান্তির খোঁজে, আর ফি দিয়ে চলে যায় এক টুকরো স্মৃতি নিয়ে।