বাড়ছে চরম গরমের দিন
বিশ্বের বড় বড় রাজধানী শহরগুলো এখন ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় প্রতি বছর গড়ে ২৫% বেশি চরম গরমের দিন পার করছে। নতুন এক বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে কোটি কোটি মানুষকে বিপজ্জনক আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হবে। ওয়াশিংটন ডিসি থেকে মাদ্রিদ, টোকিও থেকে বেইজিং—সবখানেই এই প্রবণতা স্পষ্ট।
আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (IIED) গবেষণা বলছে, বিশ্বের ৪৩টি জনবহুল রাজধানীতে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গরমের দিন ১৯৯৪ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে বছরে গড়ে ছিল ১,০৬২ দিন। ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৩৩৫ দিনে।
শহরভেদে অবস্থা
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রোম ও বেইজিংয়ে ৩৫ ডিগ্রির ওপরে দিনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ম্যানিলায় এই সংখ্যা তিনগুণ। মাদ্রিদে এখন গড়ে বছরে ৪৭ দিন তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে থাকে, যেখানে আগে ছিল মাত্র ২৫ দিন। তুলনামূলক ঠান্ডা লন্ডনেও ৩০ ডিগ্রির ওপরে দিনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।
তাপপ্রবাহ ও প্রাণহানি
জ্বালানি পোড়ানো থেকে সৃষ্ট বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি তাপপ্রবাহকে আরও তীব্র ও ঘনঘন করছে। গত তিন দশকে চরম গরমে কোটি মানুষের অকালমৃত্যু ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দ্রুত জনবসতিপূর্ণ শহরের দরিদ্র ও বৃদ্ধ মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে।
IIED-এর গবেষক আনা ওয়ালনিকজাক বলেন, “বিশ্বের তাপমাত্রা সরকারের প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত বাড়ছে এবং তারা যতটা পদক্ষেপ নিচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে বাড়ছে। অভিযোজন ব্যর্থ হলে শহরের কোটি মানুষ নগর তাপ দ্বীপ প্রভাবে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়বে।”
তিনি আরও জানান, দরিদ্র মানুষই সবচেয়ে বেশি ভুগবে—তা সে লন্ডন হোক বা লুয়ান্ডা কিংবা লিমা। তবে বৈশ্বিক দক্ষিণের নিম্নআয়ের বা অনিয়ন্ত্রিত বস্তি এলাকায় অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে, কারণ সেখানকার বাসস্থান নিম্নমানের। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নগরবাসী বস্তি বা অনানুষ্ঠানিক বসতিতে থাকে।
নির্গমন কমছে না
জলবায়ু সংকটের মূল কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির নির্গমন এখনও বাড়ছে। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৪৫% কমাতে হবে, যাতে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী শিল্পবিপ্লব-পূর্ব সময়ের তুলনায় গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা যায়।
সাম্প্রতিক গরমের রেকর্ড
২০২৪ সালে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ভয়াবহ গরম রেকর্ড হয়েছে—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মিশর, চীন ও জাপানসহ অনেক দেশে। জাপান জুলাই মাসে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, যেখানে ১০,০০০-এরও বেশি মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। ইউরোপে জুন থেকে আগস্টের মধ্যে অন্তত ১৬,৫০০ জন মানুষ গরমে মারা গেছে।
ব্রাজিলের উদাহরণ
এ বছর IIED ৪০টি জনবহুল রাজধানী ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরও তিনটি শহরের তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। আসছে নভেম্বরেই ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হবে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ ৩০। দেশটির রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় ১৯৯৪ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ৩৫ ডিগ্রির ওপরে দিন ছিল মাত্র তিনটি। কিন্তু ২০১৫ থেকে ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দিনে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন এখন আর দূরের হুমকি নয়, এটি বর্তমান বাস্তবতা। সরকারগুলোর আর মাথা বালিতে গুঁজে রাখার সুযোগ নেই। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে নগরবাসীকে আরও দীর্ঘমেয়াদি ও বিপজ্জনক গরমের সঙ্গে লড়তে হবে।