থার অঞ্চলে গবাদি পশু শুধু জীবিকার উৎস নয়, বরং বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য সম্পদ। এই বাস্তবতা মাথায় রেখে থার ফাউন্ডেশন গবাদি পশু উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু করেছে, যা পশুস্বাস্থ্য উন্নয়ন, নারী কৃষকের ক্ষমতায়ন এবং গ্রামীণ আয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনছে।
গবাদি পশুর গুরুত্ব ও চ্যালেঞ্জ
পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৪–২৫ অনুযায়ী, গবাদি পশু খাত জাতীয় জিডিপির ২৩ শতাংশ যোগান দেয় এবং কর্মসংস্থানে ৩৭ শতাংশ মানুষের উপর নির্ভরশীল। তবে থারে এর গুরুত্ব আরও বেশি। এই অঞ্চলে ৬০ লাখের বেশি পশু রয়েছে, যা মানুষের সংখ্যার চার গুণ। কিন্তু আধুনিক পশুচিকিৎসা সেবা ও জ্ঞানের অভাবে একটি মহামারিই পুরো পরিবারকে নিঃস্ব করে দিতে পারে।
কর্মসূচির সূচনা ও লক্ষ্য
সিন্ধ এঙ্গরো কোল মাইনিং কোম্পানি (SECMC)-এর সামাজিক দায়বদ্ধতা শাখা থার ফাউন্ডেশন, সিন্ধ প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগ এবং সিন্ধ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় টান্ডোজামের সহযোগিতায় এ বছর ‘লাইভস্টক ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম’ (LIP) চালু করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষকের প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে গবাদি পশু উৎপাদনশীলতা বাড়ানো।
নারী কৃষকের ক্ষমতায়ন
এই কর্মসূচি থার কোল ব্লক-২ এবং গোরানোর ২৩টি গ্রামে কাজ করছে।
- ২৫টি কৃষক গ্রুপের ৬৫৬ জন কৃষক দুই দিনের নিবিড় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যেখানে পশু ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্যিক কৌশল ও টেকসই চর্চা শেখানো হয়।
- প্রায় ১,২০০ কৃষককে টিকা, কৃমিনাশক ব্যবহার ও রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে।
- নারীদের গুরুত্ব বিবেচনায় ৩৭৫ জন নারী কৃষকের জন্য ১৬টি আলাদা সেশন আয়োজন করা হয়েছে। এতে তারা পশুর অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণ চিহ্নিত করতে ও ঘরে বসে পরিচর্যা করতে শিখছেন।
টিকা, চিকিৎসা ও প্রজনন ব্যবস্থা
কর্মসূচির আওতায় ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য ফলাফল দেখা গেছে।
- ২০,৫০০ ভেড়া ও ছাগলকে PPR এবং এন্টারোটক্সিমিয়া রোগের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া হয়েছে।
- ১,২৪০ গরুকে লাম্পি স্কিন ডিজিজের টিকা দেওয়া হয়েছে।
- ৩৭,২০০ পশুকে কৃমিনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে।
- মোবাইল ভেটেরিনারি টিম সরাসরি ৪৩৫টি পশুর চিকিৎসা করেছে।
প্রজনন ব্যবস্থার উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সিন্ধ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ জন প্রশিক্ষণার্থী কৃত্রিম প্রজনন বিষয়ে ৬০ দিনের কোর্স সম্পন্ন করেছেন। স্থানীয় প্রজাতি যেমন থারি গরু, কাঙ্করেজ গরু, কুন্ডি মহিষ, কুচ্চি ভেড়া, থারি ছাগল ও উটকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া খরা সহনশীল ঘাস ও চারণভূমি উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আয় ও জীবিকায় প্রভাব
অংশগ্রহণকারী পরিবারগুলো জানিয়েছে, দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নত প্রজনন এবং পশুহানি কমায় তাদের আয় ১৫–২০ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষ করে নারীরা উপকৃত হচ্ছেন, কারণ স্বাস্থ্যবান ভেড়া ও ছাগল পরিবারে পুষ্টি ও আয় দুইই বাড়াচ্ছে।
সিন্ধ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমদাদ হুসাইন লাঘারি বলেন, “দুধ সংগ্রহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে স্থানীয় দুধ এখন বড় শহরে পৌঁছাবে এবং কৃষকরা বেশি আয় করতে পারবেন। পাশাপাশি দুধের ভ্যালু অ্যাডিশনেও কাজ চলছে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আগামীতে আরও গ্রামে কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হবে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন, কৃষকদের ঋণ সুবিধা, এবং গরুর দুধের বাজার কাঠামো তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া একটি আঞ্চলিক গবাদি পশু উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে, যেখানে প্রজনন কর্মসূচি ও মূল্য সংযোজন পণ্যের জন্য প্রক্রিয়াকরণ সুবিধা গড়ে তোলা হবে।
পাকিস্তানে খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ জীবিকা এখনও নাজুক অবস্থায়। থার ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ প্রমাণ করছে, জ্ঞান, প্রতিরোধমূলক যত্ন ও ঘরে ঘরে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিলে গবাদি পশু উৎপাদনশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এর ফলে থারপাকারের পরিবারগুলো একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।