১২:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫
মধ্যযুগে ব্রিটেনে রুটি বিক্রিতে কঠোর শাস্তি—‘আসাইজ’ আইন কীভাবে রক্ষা করেছিল ক্রেতার অধিকার ইংল্যান্ডের অভিজাত ভোজসভায় ছুরি-চামচ ছিল সামাজিক মর্যাদার প্রতীক রাজেশপুর শালবন: কুমিল্লার সবুজ হৃদয়ে প্রকৃতির নিঃশব্দ সিম্ফনি রাশিয়ার হুমকির মুখে পোল্যান্ডের প্রতিরক্ষা জোরদার — সামরিক ব্যয়ে জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছেছে ওয়ারশ সৌদি আইনপ্রণয়ন: স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণে এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঢাকা (পর্ব-৩৬) আনন্যা পান্ডের সোনালি আভা: মানিশ মলহোত্রার উৎসব-রূপ আরামকো: সৌদি আরবের রত্ন এখন জনগণের হাতে এইচএসসি ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন ১৭ অক্টোবর থেকে মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত বিজিবি সদস্য সিএমএইচে

এশিয়া কাপ বিজয়ী ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের সাক্ষাৎকার

এশিয়া কাপে দাপুটে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে তরুণ ভারতীয় দলের নেতা হিসেবে উঠে এসেছেন সূর্যকুমার যাদব। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটারদের সঙ্গে করমর্দন না করার বিতর্কিত অবস্থানকোচ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে সম্পর্ক ও আড়াল থেকে সাজানো জয়ের নকশাআর রবিবারের শেষ মুহূর্তের রোমাঞ্চ নিয়ে কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: শেষ মুহূর্তগুলো কীভাবে সামলাচ্ছিলেন?

উত্তর: সত্যি বলছিমিথ্যা বলব না৮-৯ ওভারের পর আমি ড্রেসিংরুমের ভেতরে ঢুকে পড়ি। ভেতর থেকেই ম্যাচ দেখেছি। কোথায় বসিকোথায় দাঁড়াইনানাভাবে চেষ্টা করছিলাম। কুসংস্কারগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছিলামএখানে-ওখানে পায়চারি করছিলাম।

তিলক (ভার্মা) আর সঞ্জু স্যামসনের গুরুত্বপূর্ণ জুটি জমার পর কিছুটা স্বস্তি পাই। দুবে যখন নামলজানতাম কাজটা সে পারবে। দুবে আর তিলকেরও ভাল জুটি হলো।

চাপ তো ছিলই। মাঠে খেললে চাপ কম থাকেড্রেসিংরুমে বসে দেখলে মাথার ভেতরটা বদলে যায়! তখন মনে হয়ব্যাটসম্যানের মাথায় এখন কী চলছেসে কী করবে… এসব ভাবনায় হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল। সেই কাছাকাছি মুহূর্তগুলোর স্পন্দন কতটা তীব্র ছিলতা একমাত্র আমিই জানি। হার্ট-রেট মনিটর পরা থাকলে ১৫০ পার করত!

প্রশ্ন: আপনি বলেছিলেনভারত-পাকিস্তান আর রাইভ্যালরি’ নয়। ফাইনাল এত টানটান হওয়ার পর কি মনে হয়েছে, ‘এ কথা বলা উচিত হয়নি’?

উত্তর: না। ফাইনাল মানেই টানটান। অনেকে বলে—‘আরেকটা ম্যাচ’—কিন্তু ফাইনাল তো ফাইনালই। নকআউটঅনেক পরিশ্রমের ফল। তবু একবারও মনে হয়নিআমি ভুল বলেছি। আমি আমার দলকে দেখিপ্র্যাকটিসে যেমনম্যাচে যেমনজানিতাদের স্কিল-লেভেল কীযেকোনো পরিস্থিতিতে কীভাবে খেলতে পারে। সেটাই দেখে আমি ওই বক্তব্য দিয়েছি।

প্রশ্ন: টসের সময় প্রথম করমর্দন না করার’ সিদ্ধান্তআপনি তো বেশ বন্ধুবৎসলসবার সঙ্গে হাসিমুখে দেখা করেন। কীভাবে নিজেকে সামলালেন?

উত্তর: এটা সামলানোর বিষয় নয়। দেশের সঙ্গে চলাটা জরুরি। আগেই প্রেস কনফারেন্সে বলেছিজীবনে স্পোর্টসম্যানশিপেরও ওপরে কিছু বিষয় থাকে। এটা তেমনই ছিল। অবস্থান নেওয়া খুবই জরুরি ছিল।

প্রশ্ন: ওই ম্যাচের পর আপনার দলও করমর্দন করেনি। ড্রেসিংরুমে ভাবনা-চিন্তা কেমন ছিল?

উত্তর: দলের সবাই একই কথা ভেবেছেসূর্যও তাই ভেবেছে। পুরো দল ও সাপোর্ট স্টাফও একই মত ছিল। একবার যে অবস্থান নিয়েছিসেটা বদলাব না।

প্রশ্ন: এভাবে কি নো-হ্যান্ডশেক’ একটি ট্রেন্ড তৈরি করে ফেললেন?

উত্তর: সামনে কী হবে জানি না—‘দিল্লি এখনও অনেক দূর। পাকিস্তানের সঙ্গে পরের ম্যাচে কী হবেদেখা যাবে। আমরা তো যাই হোককেবল বহু-দেশীয় টুর্নামেন্টেই মুখোমুখি হই। যখন যা হবেতখন দেখা যাবে। আপাতত আমরা এই মুহূর্তটাই উপভোগ করছি।

প্রশ্ন: প্রথম ম্যাচে করমর্দন না করার পর আপনাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছিল?

উত্তর: তেমন টেনশন ছিল না। আমরা ক্রিকেট খেলতে এসেছিলাম এবং ভাল ক্রিকেটই খেলেছি। ফল সবার সামনে। যদি অন্য কিছুতেঅর্থহীন ঝামেলায়জড়িয়ে পড়তামতাহলে ফোকাস সরে যেত। তা হয়নি। ক্রিকেটেই ফোকাস ছিল। চাপের ভেতরেও সবাই লক্ষ্যেই মন দিয়েছেজিতটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাইরের শব্দচাপএসব কীভাবে সামলালেন?

উত্তর: জানতাম অনেক শব্দ হবে। হোয়াটসঅ্যাপ এড়ানো যায় নাযোগাযোগের মাধ্যম বলে। তবু এখানে আসার আগে ফোন থেকে সব সোশ্যাল মিডিয়াইনস্টাগ্রামটুইটারফেসবুকমুছে দিয়েছিলাম। ফোনে থাকলে মানুষ মেসেজ দেখেই ফেলেএটা স্বাভাবিক। রোহিত (শর্মা) আর ওর স্ত্রী (রীতিকা)-র সঙ্গে কথা বলেছিলামতিনি বলেনবড় ম্যাচের আগে রোহিত ফোন থেকে সব সোশ্যাল অ্যাপ বন্ধ করে দেয়। আমিও সেটা অনুসরণ করেছিসিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়েছে।

প্রশ্ন: ফাইনালের টার্নিং পয়েন্ট কী ছিল?

উত্তর: ওরা ১১৩/১ ছিলসেখান থেকে অলআউট ১৪৬এই ফেরাটাই বড়। তারপর আমাদের ব্যাটিংয়ে তিলক-সঞ্জুর জুটিআর তিলক-দুবে-র জুটি। যদি একটা জায়গা বাছতে হয়বোলারদের কামব্যাকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১২-১৩ ওভারে ১১৩/১ থেকেও তাদের ১৪৬-এ থামানো।

প্রশ্ন: গত রাত আর পুরো টুর্নামেন্টকেমন গেল?

উত্তর: অনেক কিছু চলছিল। প্রথমবার দেখলামএশিয়া কাপে এত অংশগ্রহণএত এনার্জি। আগে এশিয়া কাপ খেলেছি যেন সাধারণ দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মতো। এবার অনেক কিছু জড়িয়ে ছিলআগ্রাসনদায়িত্ব… সব মিলিয়ে খেলতে দারুণ লেগেছেএকেবারে আইসিসি টুর্নামেন্টের আবহ।

প্রশ্ন: ট্রফি হাতে না দিয়েও উদ্‌যাপন কেমন হলো?

উত্তর: প্রায় এক ঘণ্টা ড্রেসিংরুমেই ছিলামআলাপমজা। কারও ভোরের ফ্লাইটও ছিল। এরপর সবাই নিজের নিজের এআই-ট্রফি বানিয়ে ফেলল! রূপার ট্রফি না পেলেই বা কীআমরা কীভাবে ক্রিকেট খেলেছিতাতে তার সংজ্ঞা বদলায় না। সব বিভাগেই ভাল করেছি। যেমন হার্দিক না থাকায় শিবম (দুবে) দায়িত্ব নিয়েছে। ছোটদের এভাবেই বড় করা হয়খেলাতে হবেবারবার ভরসা দিতে হবে। পানিতে না ফেললে কী করে বোঝা যাবে১০ ফুট গভীরতায় সাঁতার কেটে উঠতে পারে কি না!

প্রশ্ন: ফাইনালের আগে অপরাজিত ছিলেন—‘ল অফ অ্যাভারেজ’ ভয় পাইয়ে দিচ্ছিল?

উত্তর: আমরা অনেকবারই অপরাজিত থেকেছিটি২০ বিশ্বকাপসহ। কাজেই ওটা আমাদের পক্ষে ভাল সংকেতঅপরাজিত মানে কিছু না কিছু ঠিক করছি।

প্রশ্ন: ব্যক্তিগতভাবেঅধিনায়কত্ব কি ব্যাটিংকে প্রভাবিত করছে?

উত্তর: হালকা শুরু পাইতারপর যেন গাড়ি বন্ধ। শট খেলছিথামাইনি। ফর্ম নেইএটা বলব নাবলবরান আসেনি। অধিনায়কত্বের চাপ নেই। রোহিত ভাইকে দেখুনক্যাপ্টেন্সিতে আরও খোলামেলা ব্যাট করেছে। ছোট একটা বাধা আছেআমি পার হয়ে যাব। ঈশ্বর ঠিক সময়ের জন্যই সব রেখে দিয়েছেন।

প্রশ্ন: এই ভারতীয় দলে ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিটা কেমন?

উত্তর: ওপরে অভিষেক আর গিল যেমন খেলে৩ বা ৪ নম্বরে নেমে আমিও তেমনই খেলব। এখন ভাবব না৪০-৫০ বা ১০০ করতেই হবে। ১২-১৫ বলে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারিসেটা দেখব। আমরা দলে এই ট্রেন্ডটাই সেট করেছি। দলে ৭-৮ ব্যাটারতাদের মধ্যে ৪-৫ জন কাজটা করে দিলে আমরা এমন একটা স্কোরে পৌঁছাইযা বোলাররা ডিফেন্ড করতে পারে। অ্যাঙ্কর করে শেষ পর্যন্ত খেলতেই হবে’—এটা আর চলবে না। পরিস্থিতি এলে সেভাবেই খেলবযেমন তিলক গতকাল খেলেছে।

প্রশ্ন: রান তাড়ার সময় তিলককে কী বার্তা দেওয়া হয়েছিল?

উত্তর: গৌতি ভাই (গৌতম গম্ভীর) বার্তা পাঠিয়েছিলেন—‘লম্বা খেলোতুমি থাকলে কাজ হয়ে যাবে।’ তিলকের জন্য খুব খুশিসবাই দেখেছে সে কী করতে পারে।

প্রশ্ন: অভিষেকের আগ্রাসী ব্যাটিং নিয়ে

উত্তর: গৌতি ভাই আর আমি দুজনেই বলেছিনিজের খেলা বদলাবে নানিজের পরিচয়টা বদলাবে না। এই পরিচয়ই তো তাকে এখানে এনেছে। নিজেকেনিজের স্কিলকে ব্যাক করো। দলের দৃষ্টিকোণ থেকে ও অনেক পার্থক্য গড়ে দেবে। প্রথম বলেই ঝুঁকিপূর্ণ শটে আউট হলে কোনও অসুবিধা নেই। টি২০ তো হাই-রিস্কহাই-রিওয়ার্ড ফরম্যাট। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ও ঝুঁকি নিয়েছেপ্রচুর পুরস্কারও পেয়েছে।

প্রশ্ন: গম্ভীরের ভূমিকা?

উত্তর: উনি পর্দার আড়ালে কাজ করেনসবাইকে সাহায্য করেনসমর্থন দেন। কালও বলেছিলেননতুন বলে শিবম দুবেকে ট্রাই করতে। পুরো টুর্নামেন্টে নতুন বলে সে বল করেনি। গম্ভীর পর্দার পেছনে কাজ করতেই পছন্দ করেনসামনে আসতে চান না। খেলা বোঝেনচাপের পরিস্থিতি বোঝেনএগুলো কীভাবে কাজ করে জানেন। আমাদের গাইড করার জন্য তিনিই ছিলেন সেরা ব্যক্তি।

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্নগত রাত থেকে ফোনে কতগুলো মেসেজ?

উত্তর: ৪০০-৫০০-রও বেশি আনরিড মেসেজ। টি২০ বিশ্বকাপের মতোইএবারও মেসেজ-ফ্লাড!

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনূদিত)

জনপ্রিয় সংবাদ

মধ্যযুগে ব্রিটেনে রুটি বিক্রিতে কঠোর শাস্তি—‘আসাইজ’ আইন কীভাবে রক্ষা করেছিল ক্রেতার অধিকার

এশিয়া কাপ বিজয়ী ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের সাক্ষাৎকার

০৮:২১:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এশিয়া কাপে দাপুটে পারফরম্যান্সের পাশাপাশি নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে তরুণ ভারতীয় দলের নেতা হিসেবে উঠে এসেছেন সূর্যকুমার যাদব। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটারদের সঙ্গে করমর্দন না করার বিতর্কিত অবস্থানকোচ গৌতম গম্ভীরের সঙ্গে সম্পর্ক ও আড়াল থেকে সাজানো জয়ের নকশাআর রবিবারের শেষ মুহূর্তের রোমাঞ্চ নিয়ে কথা বলেছেন।

প্রশ্ন: শেষ মুহূর্তগুলো কীভাবে সামলাচ্ছিলেন?

উত্তর: সত্যি বলছিমিথ্যা বলব না৮-৯ ওভারের পর আমি ড্রেসিংরুমের ভেতরে ঢুকে পড়ি। ভেতর থেকেই ম্যাচ দেখেছি। কোথায় বসিকোথায় দাঁড়াইনানাভাবে চেষ্টা করছিলাম। কুসংস্কারগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছিলামএখানে-ওখানে পায়চারি করছিলাম।

তিলক (ভার্মা) আর সঞ্জু স্যামসনের গুরুত্বপূর্ণ জুটি জমার পর কিছুটা স্বস্তি পাই। দুবে যখন নামলজানতাম কাজটা সে পারবে। দুবে আর তিলকেরও ভাল জুটি হলো।

চাপ তো ছিলই। মাঠে খেললে চাপ কম থাকেড্রেসিংরুমে বসে দেখলে মাথার ভেতরটা বদলে যায়! তখন মনে হয়ব্যাটসম্যানের মাথায় এখন কী চলছেসে কী করবে… এসব ভাবনায় হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল। সেই কাছাকাছি মুহূর্তগুলোর স্পন্দন কতটা তীব্র ছিলতা একমাত্র আমিই জানি। হার্ট-রেট মনিটর পরা থাকলে ১৫০ পার করত!

প্রশ্ন: আপনি বলেছিলেনভারত-পাকিস্তান আর রাইভ্যালরি’ নয়। ফাইনাল এত টানটান হওয়ার পর কি মনে হয়েছে, ‘এ কথা বলা উচিত হয়নি’?

উত্তর: না। ফাইনাল মানেই টানটান। অনেকে বলে—‘আরেকটা ম্যাচ’—কিন্তু ফাইনাল তো ফাইনালই। নকআউটঅনেক পরিশ্রমের ফল। তবু একবারও মনে হয়নিআমি ভুল বলেছি। আমি আমার দলকে দেখিপ্র্যাকটিসে যেমনম্যাচে যেমনজানিতাদের স্কিল-লেভেল কীযেকোনো পরিস্থিতিতে কীভাবে খেলতে পারে। সেটাই দেখে আমি ওই বক্তব্য দিয়েছি।

প্রশ্ন: টসের সময় প্রথম করমর্দন না করার’ সিদ্ধান্তআপনি তো বেশ বন্ধুবৎসলসবার সঙ্গে হাসিমুখে দেখা করেন। কীভাবে নিজেকে সামলালেন?

উত্তর: এটা সামলানোর বিষয় নয়। দেশের সঙ্গে চলাটা জরুরি। আগেই প্রেস কনফারেন্সে বলেছিজীবনে স্পোর্টসম্যানশিপেরও ওপরে কিছু বিষয় থাকে। এটা তেমনই ছিল। অবস্থান নেওয়া খুবই জরুরি ছিল।

প্রশ্ন: ওই ম্যাচের পর আপনার দলও করমর্দন করেনি। ড্রেসিংরুমে ভাবনা-চিন্তা কেমন ছিল?

উত্তর: দলের সবাই একই কথা ভেবেছেসূর্যও তাই ভেবেছে। পুরো দল ও সাপোর্ট স্টাফও একই মত ছিল। একবার যে অবস্থান নিয়েছিসেটা বদলাব না।

প্রশ্ন: এভাবে কি নো-হ্যান্ডশেক’ একটি ট্রেন্ড তৈরি করে ফেললেন?

উত্তর: সামনে কী হবে জানি না—‘দিল্লি এখনও অনেক দূর। পাকিস্তানের সঙ্গে পরের ম্যাচে কী হবেদেখা যাবে। আমরা তো যাই হোককেবল বহু-দেশীয় টুর্নামেন্টেই মুখোমুখি হই। যখন যা হবেতখন দেখা যাবে। আপাতত আমরা এই মুহূর্তটাই উপভোগ করছি।

প্রশ্ন: প্রথম ম্যাচে করমর্দন না করার পর আপনাদের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছিল?

উত্তর: তেমন টেনশন ছিল না। আমরা ক্রিকেট খেলতে এসেছিলাম এবং ভাল ক্রিকেটই খেলেছি। ফল সবার সামনে। যদি অন্য কিছুতেঅর্থহীন ঝামেলায়জড়িয়ে পড়তামতাহলে ফোকাস সরে যেত। তা হয়নি। ক্রিকেটেই ফোকাস ছিল। চাপের ভেতরেও সবাই লক্ষ্যেই মন দিয়েছেজিতটাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: টুর্নামেন্ট শুরুর আগে বাইরের শব্দচাপএসব কীভাবে সামলালেন?

উত্তর: জানতাম অনেক শব্দ হবে। হোয়াটসঅ্যাপ এড়ানো যায় নাযোগাযোগের মাধ্যম বলে। তবু এখানে আসার আগে ফোন থেকে সব সোশ্যাল মিডিয়াইনস্টাগ্রামটুইটারফেসবুকমুছে দিয়েছিলাম। ফোনে থাকলে মানুষ মেসেজ দেখেই ফেলেএটা স্বাভাবিক। রোহিত (শর্মা) আর ওর স্ত্রী (রীতিকা)-র সঙ্গে কথা বলেছিলামতিনি বলেনবড় ম্যাচের আগে রোহিত ফোন থেকে সব সোশ্যাল অ্যাপ বন্ধ করে দেয়। আমিও সেটা অনুসরণ করেছিসিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়েছে।

প্রশ্ন: ফাইনালের টার্নিং পয়েন্ট কী ছিল?

উত্তর: ওরা ১১৩/১ ছিলসেখান থেকে অলআউট ১৪৬এই ফেরাটাই বড়। তারপর আমাদের ব্যাটিংয়ে তিলক-সঞ্জুর জুটিআর তিলক-দুবে-র জুটি। যদি একটা জায়গা বাছতে হয়বোলারদের কামব্যাকই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ১২-১৩ ওভারে ১১৩/১ থেকেও তাদের ১৪৬-এ থামানো।

প্রশ্ন: গত রাত আর পুরো টুর্নামেন্টকেমন গেল?

উত্তর: অনেক কিছু চলছিল। প্রথমবার দেখলামএশিয়া কাপে এত অংশগ্রহণএত এনার্জি। আগে এশিয়া কাপ খেলেছি যেন সাধারণ দ্বিপাক্ষিক সিরিজের মতো। এবার অনেক কিছু জড়িয়ে ছিলআগ্রাসনদায়িত্ব… সব মিলিয়ে খেলতে দারুণ লেগেছেএকেবারে আইসিসি টুর্নামেন্টের আবহ।

প্রশ্ন: ট্রফি হাতে না দিয়েও উদ্‌যাপন কেমন হলো?

উত্তর: প্রায় এক ঘণ্টা ড্রেসিংরুমেই ছিলামআলাপমজা। কারও ভোরের ফ্লাইটও ছিল। এরপর সবাই নিজের নিজের এআই-ট্রফি বানিয়ে ফেলল! রূপার ট্রফি না পেলেই বা কীআমরা কীভাবে ক্রিকেট খেলেছিতাতে তার সংজ্ঞা বদলায় না। সব বিভাগেই ভাল করেছি। যেমন হার্দিক না থাকায় শিবম (দুবে) দায়িত্ব নিয়েছে। ছোটদের এভাবেই বড় করা হয়খেলাতে হবেবারবার ভরসা দিতে হবে। পানিতে না ফেললে কী করে বোঝা যাবে১০ ফুট গভীরতায় সাঁতার কেটে উঠতে পারে কি না!

প্রশ্ন: ফাইনালের আগে অপরাজিত ছিলেন—‘ল অফ অ্যাভারেজ’ ভয় পাইয়ে দিচ্ছিল?

উত্তর: আমরা অনেকবারই অপরাজিত থেকেছিটি২০ বিশ্বকাপসহ। কাজেই ওটা আমাদের পক্ষে ভাল সংকেতঅপরাজিত মানে কিছু না কিছু ঠিক করছি।

প্রশ্ন: ব্যক্তিগতভাবেঅধিনায়কত্ব কি ব্যাটিংকে প্রভাবিত করছে?

উত্তর: হালকা শুরু পাইতারপর যেন গাড়ি বন্ধ। শট খেলছিথামাইনি। ফর্ম নেইএটা বলব নাবলবরান আসেনি। অধিনায়কত্বের চাপ নেই। রোহিত ভাইকে দেখুনক্যাপ্টেন্সিতে আরও খোলামেলা ব্যাট করেছে। ছোট একটা বাধা আছেআমি পার হয়ে যাব। ঈশ্বর ঠিক সময়ের জন্যই সব রেখে দিয়েছেন।

প্রশ্ন: এই ভারতীয় দলে ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিটা কেমন?

উত্তর: ওপরে অভিষেক আর গিল যেমন খেলে৩ বা ৪ নম্বরে নেমে আমিও তেমনই খেলব। এখন ভাবব না৪০-৫০ বা ১০০ করতেই হবে। ১২-১৫ বলে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারিসেটা দেখব। আমরা দলে এই ট্রেন্ডটাই সেট করেছি। দলে ৭-৮ ব্যাটারতাদের মধ্যে ৪-৫ জন কাজটা করে দিলে আমরা এমন একটা স্কোরে পৌঁছাইযা বোলাররা ডিফেন্ড করতে পারে। অ্যাঙ্কর করে শেষ পর্যন্ত খেলতেই হবে’—এটা আর চলবে না। পরিস্থিতি এলে সেভাবেই খেলবযেমন তিলক গতকাল খেলেছে।

প্রশ্ন: রান তাড়ার সময় তিলককে কী বার্তা দেওয়া হয়েছিল?

উত্তর: গৌতি ভাই (গৌতম গম্ভীর) বার্তা পাঠিয়েছিলেন—‘লম্বা খেলোতুমি থাকলে কাজ হয়ে যাবে।’ তিলকের জন্য খুব খুশিসবাই দেখেছে সে কী করতে পারে।

প্রশ্ন: অভিষেকের আগ্রাসী ব্যাটিং নিয়ে

উত্তর: গৌতি ভাই আর আমি দুজনেই বলেছিনিজের খেলা বদলাবে নানিজের পরিচয়টা বদলাবে না। এই পরিচয়ই তো তাকে এখানে এনেছে। নিজেকেনিজের স্কিলকে ব্যাক করো। দলের দৃষ্টিকোণ থেকে ও অনেক পার্থক্য গড়ে দেবে। প্রথম বলেই ঝুঁকিপূর্ণ শটে আউট হলে কোনও অসুবিধা নেই। টি২০ তো হাই-রিস্কহাই-রিওয়ার্ড ফরম্যাট। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ও ঝুঁকি নিয়েছেপ্রচুর পুরস্কারও পেয়েছে।

প্রশ্ন: গম্ভীরের ভূমিকা?

উত্তর: উনি পর্দার আড়ালে কাজ করেনসবাইকে সাহায্য করেনসমর্থন দেন। কালও বলেছিলেননতুন বলে শিবম দুবেকে ট্রাই করতে। পুরো টুর্নামেন্টে নতুন বলে সে বল করেনি। গম্ভীর পর্দার পেছনে কাজ করতেই পছন্দ করেনসামনে আসতে চান না। খেলা বোঝেনচাপের পরিস্থিতি বোঝেনএগুলো কীভাবে কাজ করে জানেন। আমাদের গাইড করার জন্য তিনিই ছিলেন সেরা ব্যক্তি।

প্রশ্ন: শেষ প্রশ্নগত রাত থেকে ফোনে কতগুলো মেসেজ?

উত্তর: ৪০০-৫০০-রও বেশি আনরিড মেসেজ। টি২০ বিশ্বকাপের মতোইএবারও মেসেজ-ফ্লাড!

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস থেকে অনূদিত)