২০২৩ সালে ভারতে প্রতি ১০০টি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিপরীতে ৩৮.৬ জন আত্মহত্যা করেছেন। যদিও এই হার টানা দ্বিতীয় বছরে কিছুটা কমেছে, তবুও ২০২০ সালের মহামারি পরবর্তী সময় বাদ দিলে গত ১৪ বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ।
আত্মহত্যার হার
এ নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই যে আত্মহত্যার অনুপাত বাড়া শুধুই দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার কমে যাওয়ার ফল। মহামারির লকডাউন পর্যায়ে এমনটা হয়েছিল ঠিকই, তবে সামগ্রিক আত্মহত্যার হার ২০২৩ সালে ছিল প্রতি লাখে ১২.৩ জন। এটি ১৯৬৬ সালের পর থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার। সর্বোচ্চ ছিল ২০২২ সালে, ১২.৪ জন।
আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) প্রকাশিত ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথস অ্যান্ড সুইসাইডস ইন ইন্ডিয়া’ (এডিএসআই) ২০২৩ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা ২৩% বেড়েছে। ২০১৯ সালে ১,৩৯,১২৩ জন আত্মহত্যা করলেও ২০২৩ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১,৫৩,০৫২ জনে। এ সময়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার বেড়েছে মাত্র ৬% এ-রও কম।
রাজ্যভিত্তিক চিত্র
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আত্মহত্যার হারে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। প্রধান রাজ্যগুলোর মধ্যে কেরালা শীর্ষে (প্রতি লাখে ৩০.৬ জন), আর বিহার সর্বনিম্ন (০.৭ জন)।
আত্মহত্যার প্রধান কারণ
আত্মহত্যার সবচেয়ে বড় দুটি কারণ হলো পারিবারিক সমস্যা (৩১.৯%) ও অসুস্থতা (১৯%)। ঋণগ্রস্ততা বা দারিদ্র্যের কারণে আত্মহত্যার সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম—ক্রমশ ৩.৮% ও ০.৭%।
কারা বেশি আত্মহত্যা করছেন
পেশাভিত্তিক তথ্য বলছে, দৈনিক মজুরিশ্রমিকেরা আত্মহত্যার সবচেয়ে বড় অংশ (২৭.৫%)। এরপর গৃহিণীরা (১৪%)। কৃষি খাতের আত্মহত্যার হার অনেক কম—৬.৩%। যদিও ভারতে কৃষকের আত্মহত্যা দীর্ঘদিন ধরেই কৃষি সংকটের ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি হিসেবে বিবেচিত হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে দেখা যায়, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আত্মহত্যাকারী কখনো কলেজে পড়েননি, আর ৪০ শতাংশ-রও বেশি মাধ্যমিক শেষ করেননি। এ থেকে বোঝা যায়, সবচেয়ে দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষজন আত্মহত্যার ঝুঁকিতে বেশি।
মহামারির পর হৃদরোগ নিয়ে বিতর্ক
মহামারির পর আকস্মিক হৃদরোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে বলে জনস্বাস্থ্য নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে। এমনকি কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত বলেছেন, টিকা গ্রহণের সঙ্গে এই মৃত্যুর সঙ্গে যোগ থাকতে পারে।
এডিএসআই রিপোর্ট জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে হৃদরোগে হঠাৎ মৃত্যু ছিল ২৮,০০৫। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫,৬৩৭ — অর্থাৎ ২৭.৩% বৃদ্ধি। সংখ্যাগতভাবে এটি আত্মহত্যার চেয়ে (২৩% বৃদ্ধি) বেশি হারে বেড়েছে।
মহামারির আগে-পরে তুলনা
তবে যদি ২০১৫-১৯ সালের সঙ্গে তুলনা করা হয়, দেখা যায় তখন হৃদরোগে আকস্মিক মৃত্যুহার বেড়েছিল ৪৮.৮%। কিন্তু ২০১৯-২৩ সময়ে বৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ২৭.৩%-এ। অন্যদিকে, আত্মহত্যার হার বৃদ্ধির গতি ভয়াবহভাবে বেড়েছে—২০১৫-১৯-এ ছিল মাত্র ৪.১%, যা ২০১৯-২৩ সময়ে দাঁড়িয়েছে ২৩.২% -এ।
বিশ্লেষণ
হৃদরোগে আকস্মিক মৃত্যু বৃদ্ধির প্রবণতা ভারতের জীবনযাত্রাজনিত রোগ ও চিকিৎসা অবহেলার প্রতিফলন হতে পারে। কিন্তু মহামারির পর আত্মহত্যার যে বাড়তি ঢেউ দেখা যাচ্ছে, তার সামাজিক ও জনস্বাস্থ্যগত ব্যাখ্যা এখনো যথাযথভাবে পাওয়া যায়নি। এটি ভারতের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।