০৪:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ডিএমজে পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় উত্তর কোরীয় সেনার পলায়ন তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ তৎপরতা যশোর এখন বাংলাদেশের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ওমানের দুর্ঘটনায় নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে আট মাস পর ভারতে আটক ১২ বাংলাদেশি নাবিকের দেশে ফেরা নারী অধিকার ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নে ইলা মিত্রের শতবর্ষে নওগাঁয় র‌্যালি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভেনিজুয়েলা: সামরিক প্রস্তুতি ও দুর্বলতা ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুধ খামার বিক্রয়: লাভজনক সুযোগ এবং সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য গঠনমূলক পদক্ষপে ভারতের রুশ তেল কেনার বিষয়ে ট্রাম্পের দাবির প্রতিক্রিয়া

তালেবানদের ইন্টারনেট বন্ধে আফগানিস্তানে টেলিযোগাযোগ বিপর্যয়

দ্বিতীয় দিনের মতো পুরো দেশ অচল

আফগানিস্তান টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সেবাহীন অবস্থায় রয়েছে। সোমবার রাতে তালেবান কর্তৃপক্ষ ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়।

শীর্ষ নেতার নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ

চলতি মাসের শুরুতে তালেবান সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নির্দেশে কিছু প্রদেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। তার লক্ষ্য ছিল সমাজে ‘অসদাচরণ রোধ’। সোমবার রাতে ধাপে ধাপে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ কমতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত পুরো দেশজুড়ে সংযোগ এক শতাংশের নিচে নেমে যায়।

অভূতপূর্ব পদক্ষেপ

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর এটাই প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হলো। কাবুলের এক দোকানদার নাজিবুল্লাহ বলেন, ‘ফোন আর ইন্টারনেট ছাড়া আমরা অন্ধ। ব্যবসা একেবারেই থেমে গেছে। সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে।’

সরকারি কর্মকর্তা আগাম সতর্ক করেছিলেন

এক সরকারি কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছিলেন, ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক কেটে দেওয়া হবে এবং মোবাইল সেবাও বন্ধ হয়ে যাবে। প্রায় আট থেকে নয় হাজার টেলিযোগাযোগ টাওয়ার বন্ধ করে দেওয়া হবে, যা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তিনি সতর্ক করেন, ব্যাংকিং খাত, কাস্টমসসহ দেশের সব কার্যক্রম এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অর্থনৈতিক প্রভাবের সতর্কবার্তা উপেক্ষা

সরকারের ভেতরের কিছু কর্মকর্তা ইন্টারনেট বন্ধের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে তালেবান নেতা সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে দেশজুড়ে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দেন।

সীমিত যোগাযোগে জাতিসংঘ ও কূটনৈতিক মহল

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রায় পুরোপুরি বন্ধ। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হয়ে রেডিও যোগাযোগ ও সীমিত স্যাটেলাইট সংযোগ ব্যবহার করতে হচ্ছে।

পূর্ববর্তী প্রদেশভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা

Total internet blackout' in Afghanistan sparks panic after Taliban vowed to  stamp out immoral activities | CNN

এর আগেও বিভিন্ন প্রদেশে ইন্টারনেট অত্যন্ত ধীরগতির ছিল। ১৬ সেপ্টেম্বর বালখ প্রদেশের মুখপাত্র আতাউল্লাহ জায়েদ জানিয়েছিলেন, তালেবান নেতার নির্দেশেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তখন কাবুল, বাদাখশন, তাখার, কান্দাহার, হেলমান্দ, নাঙ্গারহার ও উরুজগান প্রদেশেও একই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছিল।

পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য

ইন্টারনেট পর্যবেক্ষক সংস্থা নেটব্লকস জানায়, এই পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃতভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সঙ্গেই মিলে যায়। সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এএফপি তাদের কাবুল ব্যুরোর সঙ্গে সব যোগাযোগ হারায়।

মানুষের উদ্বেগ

ওমানে বসবাসরত এক আফগান নাগরিক বলেন, ‘কাবুলে থাকা পরিবারের সঙ্গে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। কী ঘটছে কিছুই জানি না, ভীষণ উদ্বিগ্ন।’

একসময় উন্নয়নের প্রতীক ছিল ইন্টারনেট

২০২৪ সালে আফগান সরকার ৯ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ককে ‘অগ্রাধিকার’ প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করেছিল। লক্ষ্য ছিল দেশকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করা এবং দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করা। এখন সেই অবকাঠামো কার্যত বন্ধ হয়ে দেশ গভীর সংকটে পড়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিএমজে পাড়ি দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় উত্তর কোরীয় সেনার পলায়ন

তালেবানদের ইন্টারনেট বন্ধে আফগানিস্তানে টেলিযোগাযোগ বিপর্যয়

০৬:৩০:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দ্বিতীয় দিনের মতো পুরো দেশ অচল

আফগানিস্তান টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন সেবাহীন অবস্থায় রয়েছে। সোমবার রাতে তালেবান কর্তৃপক্ষ ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়।

শীর্ষ নেতার নির্দেশে ইন্টারনেট বন্ধ

চলতি মাসের শুরুতে তালেবান সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার নির্দেশে কিছু প্রদেশে উচ্চগতির ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল। তার লক্ষ্য ছিল সমাজে ‘অসদাচরণ রোধ’। সোমবার রাতে ধাপে ধাপে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ কমতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত পুরো দেশজুড়ে সংযোগ এক শতাংশের নিচে নেমে যায়।

অভূতপূর্ব পদক্ষেপ

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর এটাই প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হলো। কাবুলের এক দোকানদার নাজিবুল্লাহ বলেন, ‘ফোন আর ইন্টারনেট ছাড়া আমরা অন্ধ। ব্যবসা একেবারেই থেমে গেছে। সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে।’

সরকারি কর্মকর্তা আগাম সতর্ক করেছিলেন

এক সরকারি কর্মকর্তা এএফপিকে জানিয়েছিলেন, ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক কেটে দেওয়া হবে এবং মোবাইল সেবাও বন্ধ হয়ে যাবে। প্রায় আট থেকে নয় হাজার টেলিযোগাযোগ টাওয়ার বন্ধ করে দেওয়া হবে, যা পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। তিনি সতর্ক করেন, ব্যাংকিং খাত, কাস্টমসসহ দেশের সব কার্যক্রম এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অর্থনৈতিক প্রভাবের সতর্কবার্তা উপেক্ষা

সরকারের ভেতরের কিছু কর্মকর্তা ইন্টারনেট বন্ধের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে তালেবান নেতা সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে দেশজুড়ে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দেন।

সীমিত যোগাযোগে জাতিসংঘ ও কূটনৈতিক মহল

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রায় পুরোপুরি বন্ধ। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলেন, এখন কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হয়ে রেডিও যোগাযোগ ও সীমিত স্যাটেলাইট সংযোগ ব্যবহার করতে হচ্ছে।

পূর্ববর্তী প্রদেশভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা

Total internet blackout' in Afghanistan sparks panic after Taliban vowed to  stamp out immoral activities | CNN

এর আগেও বিভিন্ন প্রদেশে ইন্টারনেট অত্যন্ত ধীরগতির ছিল। ১৬ সেপ্টেম্বর বালখ প্রদেশের মুখপাত্র আতাউল্লাহ জায়েদ জানিয়েছিলেন, তালেবান নেতার নির্দেশেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তখন কাবুল, বাদাখশন, তাখার, কান্দাহার, হেলমান্দ, নাঙ্গারহার ও উরুজগান প্রদেশেও একই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছিল।

পর্যবেক্ষকদের মন্তব্য

ইন্টারনেট পর্যবেক্ষক সংস্থা নেটব্লকস জানায়, এই পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃতভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সঙ্গেই মিলে যায়। সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এএফপি তাদের কাবুল ব্যুরোর সঙ্গে সব যোগাযোগ হারায়।

মানুষের উদ্বেগ

ওমানে বসবাসরত এক আফগান নাগরিক বলেন, ‘কাবুলে থাকা পরিবারের সঙ্গে একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। কী ঘটছে কিছুই জানি না, ভীষণ উদ্বিগ্ন।’

একসময় উন্নয়নের প্রতীক ছিল ইন্টারনেট

২০২৪ সালে আফগান সরকার ৯ হাজার ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ককে ‘অগ্রাধিকার’ প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করেছিল। লক্ষ্য ছিল দেশকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করা এবং দারিদ্র্য থেকে উত্তরণের পথ তৈরি করা। এখন সেই অবকাঠামো কার্যত বন্ধ হয়ে দেশ গভীর সংকটে পড়েছে।