০২:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ তৎপরতা যশোর এখন বাংলাদেশের শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ওমানের দুর্ঘটনায় নিহত ৮ বাংলাদেশির মরদেহ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে আট মাস পর ভারতে আটক ১২ বাংলাদেশি নাবিকের দেশে ফেরা নারী অধিকার ও শোষণমুক্ত সমাজের স্বপ্নে ইলা মিত্রের শতবর্ষে নওগাঁয় র‌্যালি যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে ভেনিজুয়েলা: সামরিক প্রস্তুতি ও দুর্বলতা ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দুধ খামার বিক্রয়: লাভজনক সুযোগ এবং সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য গঠনমূলক পদক্ষপে ভারতের রুশ তেল কেনার বিষয়ে ট্রাম্পের দাবির প্রতিক্রিয়া ইরানে পুরানো ক্ষত পুনরুজ্জীবিত: মার্কিন ও ইসরাইলি আক্রমণে উদ্বেগের নতুন ঢেউ

কাঠ ও আসবাবে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক: বৈশ্বিক বাণিজ্যে চাপ, দেশীয় শিল্পে সুরক্ষা

নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে আমদানিকৃত কাঠ ও টিম্বারে ১০ শতাংশ এবং রান্নাঘরের ক্যাবিনেট, বাথরুম ভ্যানিটি ও আসবাবপত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি এ পদক্ষেপকে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন।

এই শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে। তবে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কাঠের আসবাবপত্রের শুল্ক ৩০ শতাংশ এবং রান্নাঘরের ক্যাবিনেট ও ভ্যানিটির শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে।


জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি

ট্রাম্প একটি প্রেসিডেন্সিয়াল প্রোক্লেমেশনে উল্লেখ করেছেন, বিদেশ থেকে কাঠ ও আসবাবপত্র আমদানির কারণে মার্কিন কাঠশিল্প দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর ফলে দেশীয় কাঠকল বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে এবং প্রতিরক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় সরবরাহ হুমকির মুখে পড়ছে।

প্রেসিডেন্টের যুক্তি অনুযায়ী, কাঠ ব্যবহার করা হয় অবকাঠামো নির্মাণ, সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন, গোলাবারুদ উপকরণ, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং পারমাণবিক অস্ত্রবাহী যানবাহনের সুরক্ষা উপকরণ তৈরিতে। তাই কাঠ আমদানি নিয়ন্ত্রণকে তিনি জাতীয় প্রতিরক্ষার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছেন।


কানাডা, মেক্সিকো ও ভিয়েতনামের জন্য চাপ

এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কানাডার ওপর, যারা যুক্তরাষ্ট্রে সফটউড লম্বারের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। এর আগেই কানাডিয়ান রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি-ডাম্পিং ও ভর্তুকিবিরোধী শুল্ক মিলে প্রায় ৩৫ শতাংশ করের বোঝা বহন করছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কানাডা সরকার তাদের কাঠ উৎপাদকদের সহায়তায় ১.২ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যদিকে মেক্সিকো ও ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে কাঠের আসবাবের ক্রমবর্ধমান রপ্তানিকারক। কারণ ট্রাম্প ২০১৮ সালে চীনা আসবাবপত্রের ওপর প্রথমবার ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা এখন প্রায় ৫৫ শতাংশ হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে মেক্সিকো ও ভিয়েতনামের পণ্যগুলোও বড় চাপের মুখে পড়বে।


ইউরোপ, জাপান ও ব্রিটেনের জন্য ছাড়

প্রোক্লেমেশনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের সঙ্গে শুল্ক কমানোর চুক্তি করেছে, তাদের জন্য শিথিলতা থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটেন থেকে আমদানিকৃত কাঠজাত পণ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপান থেকে আমদানিতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে ভিয়েতনামের সঙ্গে করা ২০ শতাংশ শুল্ক-চুক্তির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো হয়নি।


ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তারা জানিয়েছে, কাঠজাত পণ্য আমদানি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়। বরং এ ধরনের শুল্ক ব্যবসায়িক খরচ বাড়াবে, গৃহনির্মাণকে ব্যয়বহুল করবে, কাগজ-শিল্পের রপ্তানি সাফল্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং অনেক মার্কিন সম্প্রদায়ের আয় কমিয়ে দেবে।


ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শুল্কনীতি আরও কড়া হচ্ছে। এ পদক্ষেপ দেশীয় কাঠশিল্পকে সুরক্ষা দেবে বলে তিনি দাবি করলেও, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা তৈরি হতে পারে এবং কানাডা, মেক্সিকো ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে।

জনপ্রিয় সংবাদ

তরুণদের মধ্যে ক্যান্সারের বৃদ্ধি: কারণ ও প্রভাব

কাঠ ও আসবাবে ট্রাম্পের নতুন শুল্ক: বৈশ্বিক বাণিজ্যে চাপ, দেশীয় শিল্পে সুরক্ষা

০১:১৮:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে আমদানিকৃত কাঠ ও টিম্বারে ১০ শতাংশ এবং রান্নাঘরের ক্যাবিনেট, বাথরুম ভ্যানিটি ও আসবাবপত্রে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি এ পদক্ষেপকে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন।

এই শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে। তবে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কাঠের আসবাবপত্রের শুল্ক ৩০ শতাংশ এবং রান্নাঘরের ক্যাবিনেট ও ভ্যানিটির শুল্ক ৫০ শতাংশে উন্নীত হবে।


জাতীয় নিরাপত্তার যুক্তি

ট্রাম্প একটি প্রেসিডেন্সিয়াল প্রোক্লেমেশনে উল্লেখ করেছেন, বিদেশ থেকে কাঠ ও আসবাবপত্র আমদানির কারণে মার্কিন কাঠশিল্প দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর ফলে দেশীয় কাঠকল বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে এবং প্রতিরক্ষা ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় সরবরাহ হুমকির মুখে পড়ছে।

প্রেসিডেন্টের যুক্তি অনুযায়ী, কাঠ ব্যবহার করা হয় অবকাঠামো নির্মাণ, সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন, গোলাবারুদ উপকরণ, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং পারমাণবিক অস্ত্রবাহী যানবাহনের সুরক্ষা উপকরণ তৈরিতে। তাই কাঠ আমদানি নিয়ন্ত্রণকে তিনি জাতীয় প্রতিরক্ষার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছেন।


কানাডা, মেক্সিকো ও ভিয়েতনামের জন্য চাপ

এই সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে কানাডার ওপর, যারা যুক্তরাষ্ট্রে সফটউড লম্বারের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। এর আগেই কানাডিয়ান রপ্তানিকারকরা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যান্টি-ডাম্পিং ও ভর্তুকিবিরোধী শুল্ক মিলে প্রায় ৩৫ শতাংশ করের বোঝা বহন করছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কানাডা সরকার তাদের কাঠ উৎপাদকদের সহায়তায় ১.২ বিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

অন্যদিকে মেক্সিকো ও ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে কাঠের আসবাবের ক্রমবর্ধমান রপ্তানিকারক। কারণ ট্রাম্প ২০১৮ সালে চীনা আসবাবপত্রের ওপর প্রথমবার ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা এখন প্রায় ৫৫ শতাংশ হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্তে মেক্সিকো ও ভিয়েতনামের পণ্যগুলোও বড় চাপের মুখে পড়বে।


ইউরোপ, জাপান ও ব্রিটেনের জন্য ছাড়

প্রোক্লেমেশনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশের সঙ্গে শুল্ক কমানোর চুক্তি করেছে, তাদের জন্য শিথিলতা থাকবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটেন থেকে আমদানিকৃত কাঠজাত পণ্যে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপান থেকে আমদানিতে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে ভিয়েতনামের সঙ্গে করা ২০ শতাংশ শুল্ক-চুক্তির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো হয়নি।


ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। তারা জানিয়েছে, কাঠজাত পণ্য আমদানি জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি নয়। বরং এ ধরনের শুল্ক ব্যবসায়িক খরচ বাড়াবে, গৃহনির্মাণকে ব্যয়বহুল করবে, কাগজ-শিল্পের রপ্তানি সাফল্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং অনেক মার্কিন সম্প্রদায়ের আয় কমিয়ে দেবে।


ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শুল্কনীতি আরও কড়া হচ্ছে। এ পদক্ষেপ দেশীয় কাঠশিল্পকে সুরক্ষা দেবে বলে তিনি দাবি করলেও, এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন উত্তেজনা তৈরি হতে পারে এবং কানাডা, মেক্সিকো ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর অর্থনীতিতে চাপ বাড়বে।