০৮:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ইউরোপে ইহুদি আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা: উগ্রপন্থা ও অতিবাম ঘরানার জোটের জয় ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণেও চীনের অর্থনীতিতে পুনর্জাগরণ অনিশ্চিত আলিয়া ভাটের ‘এক্সপ্যানশন ইরা’: ঘরোয়া সুপারস্টার থেকে গ্লোবাল, মাল্টি-হাইফেনেট ক্যারিয়ার প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১০) সিউলে ২১তম পারফর্মিং আর্টস মার্কেট: বিশ্বব্যাপী সৃজনশীলতার নতুন দ্বার উন্মোচন ড্যাশবোর্ডে ভরসা করছে বোরবন—ডেটা ও অটোমেশনে ‘ক্রাফট’ বদলাবে কি? আমাজন এমজিএমে ডোয়েন জনসন–বেনি সাফদির ‘Lizard Music’ চীনের গ্রামীণ নারীর জীবনে ডিজিটাল বিপ্লব জাপানে ভিসা ফি বাড়ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সমান হবে হার ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে ভারত হয়ে উঠছে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিকল্প আউটসোর্সিং কেন্দ্র

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ওষুধের দাম কমাতে চুক্তি করল ফাইজার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের উচ্চমূল্য

মার্কিন রোগীরা সাধারণত অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি দাম দেন প্রেসক্রিপশন ওষুধের জন্য। এই সমস্যার সমাধানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজার একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।


চুক্তির মূল দিক

ফাইজার সম্মত হয়েছে মেডিকেড কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম কমিয়ে অন্য উন্নত দেশগুলোর সমমানের পর্যায়ে আনতে। এর বিনিময়ে তারা শুল্ক ছাড় পাবে।
ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ফাইজার ভবিষ্যতের নতুন ওষুধগুলোর ক্ষেত্রেও একই ‘সর্বনিম্ন আন্তর্জাতিক মূল্যনীতি’ (most-favored-nation pricing) প্রয়োগ করবে। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেছেন যে অন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোও একই পথে হাঁটবে।


শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব

ফাইজারের শেয়ারের দাম একদিনেই ৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর পাশাপাশি এলি লিলি, মার্ক, অ্যামজেন, অ্যাবভি এবং জিএসকের শেয়ারের দামও বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পেয়েছেন যে বড় ধরনের শুল্ক থেকে তারা রেহাই পেতে পারেন।


নতুন উদ্যোগ: TrumpRx

হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সালে “TrumpRx” নামে একটি সরাসরি ভোক্তাদের কাছে ওষুধ বিক্রির ওয়েবসাইট চালু হবে। ফাইজার হবে এর অংশীদার।
ট্রাম্প ওভাল অফিসে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমেরিকা আর বিশ্বের বাকি অংশের স্বাস্থ্যসেবাকে ভর্তুকি দেবে না।” এ সময় ফাইজারের প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বুরলা ও স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র উপস্থিত ছিলেন।


তিন বছরের ছাড়ের সময়সীমা

চুক্তির অংশ হিসেবে ফাইজার আগামী তিন বছর শুল্কমুক্ত থাকবে, শর্ত হচ্ছে তারা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ও গবেষণায় বিনিয়োগ করবে। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করেছে, তারা ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে গবেষণা ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে।
ফাইজারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের অনেকগুলো প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ এবং কিছু বিশেষ ওষুধ গড়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে দেওয়া হবে, কিছু ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে রয়েছে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ওষুধ Xeljanz (যার মাসিক মূল্য ৬,০০০ ডলারের বেশি), মাইগ্রেনের ওষুধ Zavzpret, চর্মরোগের ওষুধ Eucrisa এবং মেনোপজ-পরবর্তী হাড়ের রোগের ওষুধ Duavee।


প্রভাব সীমিত, তবে ইতিবাচক

বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম কমানো শুধু মেডিকেড কর্মসূচির জন্য প্রযোজ্য হওয়ায় কোম্পানিগুলোর ক্ষতি খুব বেশি হবে না। মেডিকেড সাধারণত নিম্ন আয়ের ৭ কোটিরও বেশি মানুষকে সেবা দেয়।
তবে ওষুধ খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় মেডিকেয়ার কর্মসূচিতে (যা প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য), যা এই চুক্তির আওতায় আসছে না। ২০২১ সালে মেডিকেয়ারের ওষুধ খরচ ছিল ২১৬ বিলিয়ন ডলার, যেখানে মেডিকেড খরচ ছিল প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার।


অর্থনীতিবিদদের মতামত

ভেরডান্ট রিসার্চের স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ আনা কাল্টেনবেক বলেছেন, যদি ফাইজার ও অন্যান্য কোম্পানি মেডিকেডে অতিরিক্ত ছাড় দেয়, তাহলে তা কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তবে এটি মেডিকেয়ারের মতো বড় প্রভাব ফেলবে না।

ইজারই প্রথম কোম্পানি যেটি ট্রাম্প প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ওষুধের দাম কমানোর ঘোষণা দিল। যদিও এই চুক্তির প্রভাব সীমিত, তবুও এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসক্রিপশন ওষুধের অতিরিক্ত দাম নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কে একটি উল্লেখযোগ্য মোড় ঘুরিয়ে দিল।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউরোপে ইহুদি আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা: উগ্রপন্থা ও অতিবাম ঘরানার জোটের জয়

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ওষুধের দাম কমাতে চুক্তি করল ফাইজার

০১:৩৭:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের উচ্চমূল্য

মার্কিন রোগীরা সাধারণত অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি দাম দেন প্রেসক্রিপশন ওষুধের জন্য। এই সমস্যার সমাধানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ফাইজার একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে।


চুক্তির মূল দিক

ফাইজার সম্মত হয়েছে মেডিকেড কর্মসূচির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম কমিয়ে অন্য উন্নত দেশগুলোর সমমানের পর্যায়ে আনতে। এর বিনিময়ে তারা শুল্ক ছাড় পাবে।
ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ফাইজার ভবিষ্যতের নতুন ওষুধগুলোর ক্ষেত্রেও একই ‘সর্বনিম্ন আন্তর্জাতিক মূল্যনীতি’ (most-favored-nation pricing) প্রয়োগ করবে। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেছেন যে অন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোও একই পথে হাঁটবে।


শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব

ফাইজারের শেয়ারের দাম একদিনেই ৬ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর পাশাপাশি এলি লিলি, মার্ক, অ্যামজেন, অ্যাবভি এবং জিএসকের শেয়ারের দামও বেড়েছে। বিনিয়োগকারীরা স্বস্তি পেয়েছেন যে বড় ধরনের শুল্ক থেকে তারা রেহাই পেতে পারেন।


নতুন উদ্যোগ: TrumpRx

হোয়াইট হাউস ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সালে “TrumpRx” নামে একটি সরাসরি ভোক্তাদের কাছে ওষুধ বিক্রির ওয়েবসাইট চালু হবে। ফাইজার হবে এর অংশীদার।
ট্রাম্প ওভাল অফিসে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমেরিকা আর বিশ্বের বাকি অংশের স্বাস্থ্যসেবাকে ভর্তুকি দেবে না।” এ সময় ফাইজারের প্রধান নির্বাহী আলবার্ট বুরলা ও স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র উপস্থিত ছিলেন।


তিন বছরের ছাড়ের সময়সীমা

চুক্তির অংশ হিসেবে ফাইজার আগামী তিন বছর শুল্কমুক্ত থাকবে, শর্ত হচ্ছে তারা যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ও গবেষণায় বিনিয়োগ করবে। প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা করেছে, তারা ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে গবেষণা ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে।
ফাইজারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের অনেকগুলো প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ এবং কিছু বিশেষ ওষুধ গড়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ে দেওয়া হবে, কিছু ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর মধ্যে রয়েছে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের ওষুধ Xeljanz (যার মাসিক মূল্য ৬,০০০ ডলারের বেশি), মাইগ্রেনের ওষুধ Zavzpret, চর্মরোগের ওষুধ Eucrisa এবং মেনোপজ-পরবর্তী হাড়ের রোগের ওষুধ Duavee।


প্রভাব সীমিত, তবে ইতিবাচক

বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম কমানো শুধু মেডিকেড কর্মসূচির জন্য প্রযোজ্য হওয়ায় কোম্পানিগুলোর ক্ষতি খুব বেশি হবে না। মেডিকেড সাধারণত নিম্ন আয়ের ৭ কোটিরও বেশি মানুষকে সেবা দেয়।
তবে ওষুধ খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় মেডিকেয়ার কর্মসূচিতে (যা প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য), যা এই চুক্তির আওতায় আসছে না। ২০২১ সালে মেডিকেয়ারের ওষুধ খরচ ছিল ২১৬ বিলিয়ন ডলার, যেখানে মেডিকেড খরচ ছিল প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার।


অর্থনীতিবিদদের মতামত

ভেরডান্ট রিসার্চের স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ আনা কাল্টেনবেক বলেছেন, যদি ফাইজার ও অন্যান্য কোম্পানি মেডিকেডে অতিরিক্ত ছাড় দেয়, তাহলে তা কিছুটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। তবে এটি মেডিকেয়ারের মতো বড় প্রভাব ফেলবে না।

ইজারই প্রথম কোম্পানি যেটি ট্রাম্প প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ওষুধের দাম কমানোর ঘোষণা দিল। যদিও এই চুক্তির প্রভাব সীমিত, তবুও এটি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসক্রিপশন ওষুধের অতিরিক্ত দাম নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কে একটি উল্লেখযোগ্য মোড় ঘুরিয়ে দিল।