সারাংশ
- পপ মার্টের বাজারমূল্য বিশ্বখ্যাত খেলনা কোম্পানিগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে
- লাবুবুর সাফল্যে বিনিয়োগ ও প্রতিযোগিতা বেড়েছে আর্ট টয় শিল্পে
- কোম্পানির লক্ষ্য কনটেন্ট, থিম পার্ক এবং নতুন মের্চেন্ডাইজ তৈরি
চীনের খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পপ মার্ট তাদের জনপ্রিয় চরিত্র লাবুবুর সাফল্যকে দীর্ঘমেয়াদি সম্পদে রূপান্তর করতে ডিজনির ব্যবসায়িক কৌশল অনুসরণ করছে। কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক ও সহ-প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা সি ডি এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান।
লাবুবুর সাফল্য ও নতুন কৌশল
লাবুবু প্রথম চীনা চরিত্র হিসেবে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, শুধু দাম নয় বরং সৃজনশীলতা ও আবেগের কারণে। এটি পপ মার্টের জন্য এক ঐতিহাসিক সাফল্য।
সি ডি বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ডিজনি থেকে শিখছি। ডিজনির মূল শক্তি হলো তাদের আইপি (বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ) শত বছর পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার ক্ষমতা। মিকি মাউস তার সেরা উদাহরণ।”
সমালোচকরা মনে করছেন, লাবুবুর জনপ্রিয়তা সময়ের সঙ্গে কমতে পারে। কিন্তু পপ মার্ট চায় লাবুবুকে ঘিরে কনটেন্ট, বিনোদন, থিম পার্ক এবং নতুন পণ্য তৈরি করে ডিজনির মতোই দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসা গড়ে তুলতে।
তবে কোম্পানি এখনই কোনো বিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানায়নি। সি ডি বলেন, অগ্রাধিকার হলো “আরও ভালো পণ্য, সহযোগিতা, কনটেন্ট, থিম পার্ক এবং স্টোর ডিসপ্লে তৈরি করা।” ভবিষ্যতে অন্তত পাঁচ থেকে দশটি চরিত্র লাবুবুর মতো দীর্ঘমেয়াদি জনপ্রিয়তা অর্জন করুক, সেটিই তাদের লক্ষ্য।
লাবুবু প্যারাডক্স
লাবুবুর সাফল্যে ২০২৫ সালে পপ মার্টের শেয়ারের দাম প্রায় ২০০% বেড়েছে। বর্তমানে কোম্পানির বাজারমূল্য হ্যাসব্রো, ম্যাটেল ও সানরিওর সম্মিলিত মূল্যের চেয়েও বেশি।
বাজার বিশেষজ্ঞ লুইস হুদার্ট বলেন, “পপ মার্ট শুধু খেলনা নয়, একধরনের লাইফস্টাইল বিক্রি করছে, যা ভোক্তারা অংশ হতে চাইছে।” তিনি যোগ করেন, এর লাভের হার কিছু বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের সমতুল্য।
চীনে আর্ট টয় বাজার দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। অনুমান অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এই শিল্পের আকার হবে ১২০ বিলিয়ন ইউয়ান (১৬.৮৫ বিলিয়ন ডলার), যা বৈশ্বিক বাজারের ৩৫%। ২০২০ সাল থেকে পপ মার্টের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭০% ছাড়িয়েছে।
যদিও কোম্পানি আলাদাভাবে লাবুবুর বিক্রির তথ্য প্রকাশ করে না, তবে ‘দ্য মনস্টার্স’ সিরিজ, যার অংশ লাবুবু, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে মোট আয়ের প্রায় ৩৫% দিয়েছে। এটি কোম্পানির চরিত্র নির্ভরতার প্রশ্নও তুলছে।
লাবুবুর জনপ্রিয়তা মলি, স্কালপান্ডা ও ক্রাইবেবির মতো অন্যান্য চরিত্রের বিক্রিও বাড়িয়েছে।
নতুন প্রতিযোগিতা
লাবুবুর সাফল্যে নতুন কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীরা আর্ট টয় শিল্পে প্রবেশ করছে। তরুণ শিল্পীরা এখন আইপি উন্নয়নকে আয়ের উৎস হিসেবে দেখছেন।
চীনের অন্যান্য বড় খুচরা বিক্রেতা যেমন ৫২ টয়স ও মিনিসোও মূলত ডিজনি ও সানরিওর মতো প্রতিষ্ঠানের চরিত্র ব্যবহার করত। এখন তারা নিজস্ব চরিত্র তৈরিতে বিনিয়োগ করছে এবং ডিজাইনারদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করছে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “ডিজনির মডেল জানা সহজ, কিন্তু সাফল্য অর্জন করা কঠিন। পপ মার্টের সামনে এখনো অনেক পথ বাকি।”
সাফল্যের ভিত্তি
পপ মার্টের উত্থান শুরু হয় ২০১০ সালে, যখন প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ওয়াং নিং বেইজিংয়ে একটি লাইফস্টাইল স্টোর খোলেন। কয়েক বছরের মধ্যে তিনি বুঝতে পারেন যে সংগ্রহযোগ্য খেলনা দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। এরপর তিনি এই খাতে মনোনিবেশ করেন।
ওয়াং উপলব্ধি করেন, কোম্পানির নিজস্ব চরিত্র থাকা জরুরি। এজন্য তিনি ডিজাইনার কেনি ওয়ং-এর সঙ্গে কাজ শুরু করেন, যিনি মলি চরিত্রের স্রষ্টা। ওয়ং প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও পপ মার্ট তার মজুদ সমস্যার সমাধান করে দেয় এবং সহযোগিতা সফল হয়।
২০১৯ সালে লাবুবু পপ মার্টে আত্মপ্রকাশ করে। তাদের “ব্লাইন্ড বক্স” বিক্রয় কৌশল—যেখানে ভোক্তা ১০ থেকে ২০ ডলারের খেলনা কেনেন কিন্তু আগে জানেন না কোন চরিত্রটি পাবেন—বিশাল সাফল্য পায়। তরুণ নারী ভোক্তাদের লক্ষ্য করে চরিত্র তৈরি করাও সাফল্যের মূল কারণ ছিল।
পূর্বতন কর্মীরা বলেন, “প্রতিটি চরিত্র হিট হবে না, কিন্তু পপ মার্টের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা সফল হবে।”