অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাব
অস্ট্রেলিয়া তার নতুন কৌশলগত খনিজ মজুত থেকে শেয়ার বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কাছে। বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত দুই সূত্র জানিয়েছে, এই প্রস্তাব ব্রিটেনসহ কয়েকটি দেশের কাছে গেছে। মূল উদ্দেশ্য হলো—চীন-নির্ভরতা কমিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য বিরল ধাতু ও ক্ষুদ্র ধাতুর বিকল্প যোগান নিশ্চিত করা।
লিথিয়ামের মতো খনিজগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, সেমিকন্ডাক্টর, পরিচ্ছন্ন জ্বালানি এবং অস্ত্রশিল্পে অপরিহার্য।
চীনের পাল্টা পদক্ষেপ
যুক্তরাষ্ট্র চীনা চিপ বিক্রয়ে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলে বেইজিং পাল্টা জবাবে জার্মেনিয়াম ও গ্যালিয়ামের রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আনে। এ বছর আবার যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতির জবাবে চীন বিরল ধাতু ও স্থায়ী চুম্বকের রপ্তানির জন্য নতুন লাইসেন্স ব্যবস্থা চালু করে, যা ইউরোপীয় ও মার্কিন গাড়ি শিল্পের সরবরাহ চেইনকে মাসের পর মাস বিপর্যস্ত করে তোলে।
অ্যালবানিজের কূটনৈতিক সফর
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরে যান। সেখানে তিনি ব্রিটিশ ও কানাডীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে খনিজ ইস্যুতে আলোচনা করেন।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, মিত্র দেশগুলো নগদ বিনিয়োগের পাশাপাশি নির্দিষ্ট পরিমাণ খনিজ গ্রহণের নিশ্চয়তা দিলে মজুত থেকে একটি শতাংশের অধিকার পাবে। তবে আলোচনাগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জি-সেভেন বৈঠকে এই প্রস্তাব প্রথম আলোচনায় ওঠে।
যুক্তরাজ্যের প্রতিক্রিয়া
একজন ব্রিটিশ সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ নিশ্চিত করা তাদের শিল্প কৌশলের জন্য অত্যন্ত জরুরি। খুব শীঘ্রই যুক্তরাজ্য একটি নতুন ক্রিটিক্যাল মিনারেলস স্ট্র্যাটেজি প্রকাশ করবে। তবে অস্ট্রেলিয়ার শেয়ার অফার নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়।
এর আগে জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাজ্য মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ব্রিটিশ রপ্তানি ক্রেডিট এজেন্সি ইউকেএইএফ অস্ট্রেলিয়ায় প্রকল্পের জন্য পাঁচ বিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত অর্থায়ন করবে এবং অস্ট্রেলিয়ার খনিজ মজুত গঠনে ব্রিটেনকে পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের আগ্রহ
সূত্রগুলো জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সও অস্ট্রেলিয়ার মজুত পরিকল্পনায় আগ্রহী। ফ্রান্সের একটি প্রতিনিধি দল অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল, তবে সেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থাকায় তা স্থগিত রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার পরিকল্পনা
অস্ট্রেলিয়া তার ফেডারেল বাজেট থেকে ১.২ বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার বরাদ্দ রেখেছে এই কৌশলগত মজুত গড়ে তুলতে। ২০২৬ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এটি চালু হওয়ার কথা। দেশটির লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক খনিজ বাজারে প্রধান খেলোয়াড় হয়ে ওঠা।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজ বলেছেন, লিথিয়াম, কোবাল্ট, কপার বা ভ্যানাডিয়াম—প্রায় পুরো পর্যায় সারণির মতো সম্পদই তাদের রয়েছে। মজুত তৈরি হলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব বিস্তারে অস্ট্রেলিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে এবং বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজারকারসাজি রোধ করা যাবে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ
চীন ইন্দোনেশিয়ায় নিকেলের অতিরিক্ত উৎপাদন ঘটিয়ে বৈশ্বিক দাম নামিয়ে দিয়েছে, যার ফলে অস্ট্রেলিয়া থেকে নিউ ক্যালিডোনিয়ার মতো অঞ্চলে শিল্প ধসেপড়েছে।
অ্যালবানিজ আরও বলেন, মজুত তৈরি মানে নয় যে অস্ট্রেলিয়া অন্যদের বিনামূল্যে কিছু দেবে। বরং দেশটি সর্বোচ্চ লাভ নিশ্চিত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করবে।
অস্ট্রেলিয়ার এই প্রস্তাব পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য চীনের বিকল্প উৎস খুঁজে পাওয়ার এক বড় সুযোগ। তবে ব্রিটেনসহ মিত্র দেশগুলোতে রাজনৈতিকভাবে বিদেশি বিনিয়োগ গ্রহণ কতটা সহজ হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।