সারসংক্ষেপ
- মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে তালেবান
- জাতিসংঘ দ্রুত সংযোগ পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে
- ব্যাংক, ফ্লাইট ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত
- তালেবান কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি
আফগানিস্তানজুড়ে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেছে। কূটনৈতিক সূত্র ও টেলিকম খাতের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তালেবান প্রশাসনের সরাসরি নির্দেশেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ফলে গোটা দেশ কার্যত বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি তালেবান
তালেবান প্রশাসন কেন এ নির্দেশ দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেয়নি। গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এদিকে জাতিসংঘ জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণ ইন্টারনেট ও মোবাইল সেবা পুনঃস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে।
নৈতিকতার অজুহাত
গত কয়েক সপ্তাহে তালেবান কিছু প্রদেশে ফাইবার-অপটিক লাইন কেটে দিয়েছিল, তারা জানিয়েছিল যে এটি ‘নৈতিকতা রক্ষার জন্য’। আগেও তারা অনলাইন পর্নোগ্রাফি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে বলেছে, এই পদক্ষেপ আফগানিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে এবং জনগণের ওপর গুরুতর ক্ষতি ডেকে আনছে।
সংকটে বিপর্যস্ত আফগানিস্তান
ইতিমধ্যেই আফগানিস্তান ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরিণতি মোকাবিলা করছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে লাখো শরণার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের ভয়াবহ খরা। এর মধ্যে এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা নতুন সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।
টেলিকম কোম্পানির বিবৃতি
একটি আফগান টেলিকম কোম্পানি জানিয়েছে, তারা অন্য কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে। তাদের বক্তব্য, তারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে চলছে এবং দ্রুত সব কোম্পানিকে সেবা চালু করার অনুমতি দেওয়া হবে বলে আশা করছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
ইন্টারনেট পর্যবেক্ষক সংস্থা নেটব্লকস জানিয়েছে, সোমবার ধাপে ধাপে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। সর্বশেষ পর্যায়ে টেলিফোন সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে ইন্টারনেট সংযোগ কার্যত ১ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।
বেসরকারি টিভি চ্যানেল টোলো নিউজ জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ মোবাইল ফোনে ৩জি ও ৪জি সেবা বন্ধের এক সপ্তাহের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। ফলে এখন কেবল পুরোনো ২জি সেবা সীমিত আকারে চালু রয়েছে। এর ফলে ব্যাংকিং কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকের কার্যক্রমও অচল হয়ে পড়েছে।
মানুষের দুঃখ-কষ্ট
কাবুলের বাসিন্দা শবির জানিয়েছেন, তিনি একটি বেসরকারি ইন্টারনেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন, কিন্তু সেবার অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। তার কথায়, আজ মানুষ প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। কেউই এখন আপনজনের খোঁজ নিতে পারছে না, এমনকি দেশের ভেতরেও যোগাযোগ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রতিনিধি আরাফাত জামাল জানিয়েছেন, তারা ভূমিকম্প মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা সামনের সারির কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছেন না। তিনি বলেছেন, এই অপ্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
নারীদের ওপর নতুন চাপ
কান্দাহারে অবস্থানরত তালেবান নেতৃত্ব ক্রমেই কঠোর নীতি আরোপ করছে। এ মাসে জাতিসংঘ কার্যালয়ে কর্মরত নারী কর্মীদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। এর আগে নারীদের স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়, বিনোদন ও খেলাধুলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
নারী অধিকারকর্মী সানাম কবিরি বলেন, তালেবান প্রতিটি উপায়ে মানুষকে দমন করছে। তিনি মন্তব্য করেন, “এই অজ্ঞ যুগপিছিয়ে পড়া পুরুষেরা আর কী চায় আমাদের নিপীড়িত জনগণের কাছ থেকে?”
অনেক নারী ঘরের বাইরে কাজ করতে না পেরে ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। অনলাইনে কাজ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। এখন সে পথও বন্ধ হয়ে গেল।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ
সম্প্রতি তালেবান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে, বিশেষ করে আফগানিস্তানে আটক মার্কিন নাগরিকদের বিষয়ে। রবিবার একজন বন্দিকে মুক্তিও দেওয়া হয়েছে।
তালেবানের নতুন নির্দেশে আফগানিস্তান কার্যত বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে শুরু করে মানুষের নিত্যদিনের যোগাযোগ – সব ক্ষেত্রেই এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। সংকটে জর্জরিত আফগান জনগণের জন্য এটি নতুন এক আঘাত।