যুক্তরাষ্ট্রে বহিষ্কার অভিযান
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের অভিবাসন কড়াকড়ির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রায় ৪০০ ইরানিকে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় প্রায় ১২০ জনকে বহিষ্কার করে কাতারে পাঠানো হয়, সেখান থেকে তারা তেহরানে যাবেন। এই বহিষ্কৃতদের মধ্যে কেউ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত, আবার কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান বিরল সমন্বয়
দীর্ঘদিন বৈরী সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও এই স্থানান্তর একটি বিরল সমন্বয়ের উদাহরণ। ওয়াশিংটন দাবি করছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি অস্ত্র তৈরির জন্য; আর তেহরান বলছে, তা শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে। জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সঙ্গে মিলে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পরও এই সমঝোতা তৈরি হয়েছে।
ইরানি এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিষয়টি রাজনৈতিক নয়, বরং কনস্যুলার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক চুক্তির ধারণা নাকচ করেছেন।
ইরানের অবস্থান ও আহ্বান
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদ বিষয়ক মহাপরিচালক হোসেইন নূশাবাদি জানান, যুক্তরাষ্ট্র নতুন অভিবাসন-বিরোধী নীতির আওতায় প্রায় ৪০০ ইরানিকে বহিষ্কারের পরিকল্পনা করেছে। তিনি বলেন, প্রথম ধাপে ১২০ জনকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, যাদের বেশিরভাগই মেক্সিকোর মাধ্যমে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন।
নূশাবাদি যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান, যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ইরানিদের অধিকারকে সম্মান করে। তার ভাষ্যমতে, প্রথম দলটি এক-দুই দিনের মধ্যে ইরানে পৌঁছাবে।
বহিষ্কার প্রক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্র থেকে লুইজিয়ানার একটি বিমান সোমবার উড্ডয়ন করে। সেটি কাতারে পৌঁছানোর পর ইরানিদের তেহরানগামী ফ্লাইটে পাঠানো হবে। হোয়াইট হাউস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, তাদের এ বিষয়ে পরামর্শ করা হয়নি। তারা শুধু স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থীদের ঝুঁকির মুখে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা
নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, কিছু ইরানি নিজে থেকে ফেরত যেতে সম্মত হয়েছেন, তবে অনেককে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হচ্ছে। নূশাবাদি জানিয়েছেন, কারও কারও বৈধ আবাসিক অনুমতিপত্র ছিল, তবুও মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে তাদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাসরত বিপুলসংখ্যক মানুষকে রেকর্ড মাত্রায় বহিষ্কারের পরিকল্পনা করছে। তবে বাস্তবে সেই মাত্রা বাড়াতে প্রশাসন কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ছে। তারা কিছু ক্ষেত্রে অভিবাসীদের দেশের বাইরে তৃতীয় দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থাও করেছে। উদাহরণস্বরূপ, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পানামার সঙ্গে করা এক চুক্তির আওতায় কয়েকটি দেশের নাগরিক, যার মধ্যে ইরানিরাও ছিলেন, সেখানে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।