০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণেও চীনের অর্থনীতিতে পুনর্জাগরণ অনিশ্চিত আলিয়া ভাটের ‘এক্সপ্যানশন ইরা’: ঘরোয়া সুপারস্টার থেকে গ্লোবাল, মাল্টি-হাইফেনেট ক্যারিয়ার প্রাচীন ভারতে গণিতচর্চা (পর্ব-৩১০) সিউলে ২১তম পারফর্মিং আর্টস মার্কেট: বিশ্বব্যাপী সৃজনশীলতার নতুন দ্বার উন্মোচন ড্যাশবোর্ডে ভরসা করছে বোরবন—ডেটা ও অটোমেশনে ‘ক্রাফট’ বদলাবে কি? আমাজন এমজিএমে ডোয়েন জনসন–বেনি সাফদির ‘Lizard Music’ চীনের গ্রামীণ নারীর জীবনে ডিজিটাল বিপ্লব জাপানে ভিসা ফি বাড়ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সমান হবে হার ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তে ভারত হয়ে উঠছে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বিকল্প আউটসোর্সিং কেন্দ্র বৈশ্বিক মানবিক সহায়তায় নতুন ভূমিকা নিচ্ছে বেইজিং, তবে ‘গণতান্ত্রিক বিকল্প’ও দরকার

ফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সেন্ট্রাল সিবু: নিহত ৬৯, আহত দেড় শতাধিক, উদ্ধারকাজ চলছে

সারসংক্ষেপ

  • • নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯, আহত দেড় শতাধিক
  • • বোগো সিটির হাসপাতাল রোগীতে উপচে পড়েছে
  • • সুনামির কোনো আশঙ্কা নেই, তবে বহু আফটারশক
  • • উদ্ধারকাজে চিকিৎসক ও নৌবাহিনী মোতায়েন
  • • প্রেসিডেন্ট দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন

ঙ্গলবার রাতে ফিলিপাইনের সেন্ট্রাল অঞ্চলের সিবু দ্বীপে আঘাত হানা ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে বুধবার ৬৯-এ দাঁড়িয়েছে। একে দেশটির গত এক দশকের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। আহত হয়েছে দেড় শতাধিক মানুষ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা জেন অ্যাবাপো জানিয়েছেন, প্রাদেশিক দুর্যোগ সংস্থার প্রাথমিক তথ্যে ৬৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা বলেছে, মৃতের সংখ্যা প্রথমে ৬০ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তবে পরিসংখ্যান বেড়ে যাচ্ছে।

Dozens killed after powerful earthquake strikes Philippines

ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছাকাছি বোগো সিটির প্রধান হাসপাতাল রোগীতে উপচে পড়েছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে ফিলিপাইনের কোস্ট গার্ড একটি জাহাজে করে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মী পাঠিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার সদস্যরা সরেজমিনে ত্রাণ তদারক করছেন। “আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করছি, মানুষের চাহিদা নিরূপণ করছি,” বলেন তিনি। গত সপ্তাহে সুপার টাইফুন ‘রাগাসা’-র ক্ষয়ক্ষতি থেকে এখনও ঘুরে দাঁড়াতে না পারা মাসবাতে দ্বীপে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।

স্থানীয় পরিস্থিতি

সান রেমিজিও পৌরসভার মেয়র মারিয়ানো মার্টিনেজ জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১২ বছরের এক শিশু রয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে হতাহতদের খুঁজে বের করা এবং যাদের সহায়তা প্রয়োজন তাদের সনাক্ত করা।” স্থানীয় রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফিলিপাইনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার। শক্তিশালী কম্পনের পর বহু আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি ছিল ৬ মাত্রার। তবে সুনামির কোনো আশঙ্কা নেই।

Dozens killed as powerful quake strikes central Philippines - The Weather  Network

দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের “রিং অব ফায়ার”-এ অবস্থিত হওয়ায় এখানে প্রায়ই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়ে থাকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও দুটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, তবে তখন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

২০২৩ সালে ৬.৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে আটজন নিহত হয়েছিল।

সান রেমিজিওর ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় ক্রীড়া কমপ্লেক্সে বাস্কেটবল খেলছিলেন, সেই ভবন আংশিকভাবে ধসে পড়ে। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য, পানি এবং উদ্ধারকাজে ভারী যন্ত্রপাতির জরুরি সরবরাহ চেয়েছেন।

“এখন ভারী বৃষ্টি হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ নেই। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে, কারণ ভূমিকম্পে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,” বলেন তিনি।

সিবু ও আশপাশের অবস্থা

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, অনেক মানুষ ভূমিকম্পের সময় ঘর থেকে দৌড়ে বাইরে চলে আসে। বহু ভবন ধসে পড়ে, এর মধ্যে একটি শতবর্ষী গির্জাও রয়েছে।

Dozens killed in Philippines earthquake

সিবু দ্বীপে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষ বসবাস করে। দ্বীপের অন্য এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ম্যাকটান-সিবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা দেশের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর, সচল রয়েছে।

ফিলিপাইনের ভূতাত্ত্বিক সংস্থা ফিভলকস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে এবং আরও কম্পন অনুভূত হতে পারে। যদিও সময়ের সঙ্গে এগুলোর মাত্রা কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কম্পনের প্রভাব ৩৩০ কিলোমিটার দূরে জাম্বোয়াঙ্গা দেল নর্তে পর্যন্ত পৌঁছায়।

পিলার শহরের বাসিন্দা আর্চেল কোরাজা বলেন, “আমাদের পরিবার ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভব করি, তখন সবাইকে ডেকে বাইরে রাস্তায় নিয়ে আসি।”

জনপ্রিয় সংবাদ

ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণেও চীনের অর্থনীতিতে পুনর্জাগরণ অনিশ্চিত

ফিলিপাইনে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল সেন্ট্রাল সিবু: নিহত ৬৯, আহত দেড় শতাধিক, উদ্ধারকাজ চলছে

০৫:৫২:০৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

সারসংক্ষেপ

  • • নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯, আহত দেড় শতাধিক
  • • বোগো সিটির হাসপাতাল রোগীতে উপচে পড়েছে
  • • সুনামির কোনো আশঙ্কা নেই, তবে বহু আফটারশক
  • • উদ্ধারকাজে চিকিৎসক ও নৌবাহিনী মোতায়েন
  • • প্রেসিডেন্ট দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন

ঙ্গলবার রাতে ফিলিপাইনের সেন্ট্রাল অঞ্চলের সিবু দ্বীপে আঘাত হানা ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে বুধবার ৬৯-এ দাঁড়িয়েছে। একে দেশটির গত এক দশকের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। আহত হয়েছে দেড় শতাধিক মানুষ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও কতজন নিখোঁজ রয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আঞ্চলিক সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তা জেন অ্যাবাপো জানিয়েছেন, প্রাদেশিক দুর্যোগ সংস্থার প্রাথমিক তথ্যে ৬৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জাতীয় দুর্যোগ সংস্থা বলেছে, মৃতের সংখ্যা প্রথমে ৬০ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তবে পরিসংখ্যান বেড়ে যাচ্ছে।

Dozens killed after powerful earthquake strikes Philippines

ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছাকাছি বোগো সিটির প্রধান হাসপাতাল রোগীতে উপচে পড়েছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে ফিলিপাইনের কোস্ট গার্ড একটি জাহাজে করে চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য চিকিৎসাকর্মী পাঠিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ফের্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র দ্রুত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রিসভার সদস্যরা সরেজমিনে ত্রাণ তদারক করছেন। “আমরা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করছি, মানুষের চাহিদা নিরূপণ করছি,” বলেন তিনি। গত সপ্তাহে সুপার টাইফুন ‘রাগাসা’-র ক্ষয়ক্ষতি থেকে এখনও ঘুরে দাঁড়াতে না পারা মাসবাতে দ্বীপে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি এই মন্তব্য করেন।

স্থানীয় পরিস্থিতি

সান রেমিজিও পৌরসভার মেয়র মারিয়ানো মার্টিনেজ জানিয়েছেন, তাদের এলাকায় অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ১২ বছরের এক শিশু রয়েছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে হতাহতদের খুঁজে বের করা এবং যাদের সহায়তা প্রয়োজন তাদের সনাক্ত করা।” স্থানীয় রেডিওতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, বহু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফিলিপাইনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল প্রায় ১০ কিলোমিটার। শক্তিশালী কম্পনের পর বহু আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি ছিল ৬ মাত্রার। তবে সুনামির কোনো আশঙ্কা নেই।

Dozens killed as powerful quake strikes central Philippines - The Weather  Network

দেশটি প্রশান্ত মহাসাগরের “রিং অব ফায়ার”-এ অবস্থিত হওয়ায় এখানে প্রায়ই ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয়ে থাকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও দুটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল, তবে তখন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

২০২৩ সালে ৬.৭ মাত্রার এক ভূমিকম্পে আটজন নিহত হয়েছিল।

সান রেমিজিওর ভাইস মেয়র আলফি রেইনেস জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে কয়েকজন স্থানীয় ক্রীড়া কমপ্লেক্সে বাস্কেটবল খেলছিলেন, সেই ভবন আংশিকভাবে ধসে পড়ে। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য, পানি এবং উদ্ধারকাজে ভারী যন্ত্রপাতির জরুরি সরবরাহ চেয়েছেন।

“এখন ভারী বৃষ্টি হচ্ছে এবং বিদ্যুৎ নেই। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে, কারণ ভূমিকম্পে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,” বলেন তিনি।

সিবু ও আশপাশের অবস্থা

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, অনেক মানুষ ভূমিকম্পের সময় ঘর থেকে দৌড়ে বাইরে চলে আসে। বহু ভবন ধসে পড়ে, এর মধ্যে একটি শতবর্ষী গির্জাও রয়েছে।

Dozens killed in Philippines earthquake

সিবু দ্বীপে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষ বসবাস করে। দ্বীপের অন্য এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ম্যাকটান-সিবু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যা দেশের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর, সচল রয়েছে।

ফিলিপাইনের ভূতাত্ত্বিক সংস্থা ফিভলকস জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ আফটারশক রেকর্ড করা হয়েছে এবং আরও কম্পন অনুভূত হতে পারে। যদিও সময়ের সঙ্গে এগুলোর মাত্রা কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কম্পনের প্রভাব ৩৩০ কিলোমিটার দূরে জাম্বোয়াঙ্গা দেল নর্তে পর্যন্ত পৌঁছায়।

পিলার শহরের বাসিন্দা আর্চেল কোরাজা বলেন, “আমাদের পরিবার ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভব করি, তখন সবাইকে ডেকে বাইরে রাস্তায় নিয়ে আসি।”