সারসংক্ষেপ
- • অচলাবস্থায় বন্ধ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ফেডারেল কর্মীরা
- • সিনেটে স্বল্পমেয়াদি ব্যয় বিল প্রত্যাখ্যান, দলীয় বিভাজন আরও গভীর
- • বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এ অচলাবস্থা অতীতের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে
অচলাবস্থার সূচনা
গভীর রাজনৈতিক বিভাজনের কারণে কংগ্রেস ও হোয়াইট হাউস ব্যয় চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় বুধবার থেকে মার্কিন সরকারের বড় অংশের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এটি ১৯৮১ সালের পর থেকে ১৫তম সরকারের অচলাবস্থা, যা হাজারো ফেডারেল কর্মীর চাকরি হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
কোনো সমাধানের পথ এখনো পরিষ্কার নয়। সরকারি সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এ অচলাবস্থায় সেপ্টেম্বরের কর্মসংস্থান প্রতিবেদন প্রকাশ স্থগিত হবে, বিমান চলাচল ধীর হবে, বৈজ্ঞানিক গবেষণা স্থগিত থাকবে, সেনাদের বেতন আটকে যাবে এবং দৈনিক ৪০০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিতে সাড়ে সাত লাখ কর্মীকে বিনা বেতনে ছুটিতে পাঠানো হবে।
ট্রাম্পের হুমকি ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে সরকার ইতিমধ্যেই ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় তিন লাখ কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে রয়েছে। ট্রাম্প সতর্ক করেছেন, অচলাবস্থা আরও গভীর হলে কর্মসংস্থান ও বিভিন্ন কর্মসূচি ‘অপরিবর্তনীয়ভাবে’ কমি
অচলাবস্থা শুরু হয় কয়েক ঘণ্টা পরই, যখন সিনেট নভেম্বর ২১ পর্যন্ত সরকারি কার্যক্রম চালু রাখার জন্য আনা একটি স্বল্পমেয়াদি ব্যয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ডেমোক্র্যাটরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন, কারণ রিপাবলিকানরা কোটি কোটি আমেরিকানের স্বাস্থ্যসুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর শর্ত যোগ করতে অস্বীকার করেন। রিপাবলিকানদের দাবি, স্বাস্থ্যসেবার বিষয়টি আলাদাভাবে সমাধান করা উচিত।
বাজেটের অঙ্ক ও দেনার বোঝা
সরকারি ব্যয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা পুরো ৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ। বাকি বাজেটের বড় অংশ স্বাস্থ্য, অবসর ভাতা ও ৩৭.৫ বিলিয়ন ডলারের দেনার সুদ পরিশোধে যায়।
স্বাধীন বিশ্লেষকরা বলছেন, এ অচলাবস্থা অতীতের তুলনায় দীর্ঘ হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন ডেমোক্র্যাটদের শাস্তি দিতে সরকারি কর্মসূচি ও বেতন কাঠামোতে কাটছাঁটের হুমকি দিচ্ছে। ট্রাম্পের বাজেট পরিচালক রাসেল ভৌট বলেছেন, অচলাবস্থা স্থায়ী কর্মী ছাঁটাইয়ের পথও খুলে দিতে পারে।
অর্থবাজারে প্রভাব
ওয়াল স্ট্রিটের ফিউচার মার্কেট কিছুটা নেমে গেছে, স্বর্ণের দাম ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এশীয় শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশে বিলম্ব ও চাকরি হারানো অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মার্কিন ডলারও প্রধান মুদ্রার বিপরীতে এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে গেছে।
অতীতের দীর্ঘতম অচলাবস্থা
মার্কিন ইতিহাসের দীর্ঘতম অচলাবস্থা ঘটে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ দিন ধরে, যা হয়েছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সীমান্ত নিরাপত্তা ইস্যুতে।
ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার বলেছেন, “তারা শুধু আমাদের ভয় দেখাতে চায়। এতে তারা সফল হবে না।”
রিপাবলিকানদের অবস্থান
সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা জন থুন বলেছেন, ব্যর্থ হওয়া স্বল্পমেয়াদি ব্যয় প্রস্তাবে কোনো রাজনৈতিক শর্ত ছিল না। তার মতে, “কেবল ট্রাম্প এখন হোয়াইট হাউসে আছেন, সেটাই মূল বিষয়। এ সমস্যা রাজনৈতিক, বাস্তব কোনো কারণ নেই যে সরকার বন্ধ রাখতে হবে।”
যদিও রিপাবলিকানরা কংগ্রেসের দুই কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তবুও ব্যয় বিল পাসের জন্য সিনেটে অন্তত সাতজন ডেমোক্র্যাটের সমর্থন প্রয়োজন।
ডেমোক্র্যাটদের স্বাস্থ্যসেবা দাবি
ডেমোক্র্যাটরা ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে স্বাস্থ্যসেবা ইস্যুতে বিরল এক ঐক্য গড়েছেন। তারা শুধু স্বাস্থ্যসুবিধার মেয়াদ বাড়ানো নয়, বরং ট্রাম্প যেন ভবিষ্যতে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে না পারেন, সেটিও নিশ্চিত করতে চান। কিন্তু ট্রাম্প আগেও কংগ্রেস অনুমোদিত বিলিয়ন ডলার খরচে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, যা ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও গভীর
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রবার্ট প্যাপে মনে করেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও উগ্রপন্থীদের শক্তি বাড়ায় ফলে এই চরম মেরুকরণ আরও তীব্র হয়েছে। তার মতে, উভয় পক্ষই নিজেদের সমর্থকদের চাপের কারণে পিছু হটতে পারছে না।
শুমার ট্রাম্পের একটি ডিপফেক ভিডিওর সমালোচনা করেন, যেখানে তার ছবি বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, “এটি শিশুসুলভ আচরণ, দায়িত্বশীল রাষ্ট্রপতির কাজ নয়”।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলমান এই অচলাবস্থা শুধু কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির ওপরই নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটদের দ্বন্দ্ব সমাধান না হলে এটি দীর্ঘায়িত হবে এবং দেশকে আরও বড় সংকটে ফেলবে।