মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে জরিপের প্রাথমিক ফল
সিঙ্গাপুরে মধ্যবয়সী নারীদের প্রায় অর্ধেকই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তবে তাদের মধ্যে মাত্র ৫৯ শতাংশ পেশাদার সাহায্য নিয়েছেন। মানসিক সমস্যায় ভোগা ৭০ শতাংশেরও বেশি নারী জানিয়েছেন, অন্যদের জন্য বোঝা হয়ে যাওয়ার ভয়েই তারা চিকিৎসা নেননি।
এই তথ্য উঠে এসেছে সিঙ্গাপুর কাউন্সিল অব উইমেনস অর্গানাইজেশন্স (SCWO) এবং জেমস কুক ইউনিভার্সিটির যৌথ জরিপ থেকে। জরিপটি চলতি সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয় এবং ১,০০০ নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩০০ নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এই প্রাথমিক ফলাফল ২৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে আয়োজিত “অ্যাকশন অন জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি সামিট”-এ উপস্থাপন করা হয়।
একাধিক ভূমিকা ও মানসিক চাপ
প্যানেল আলোচনায় বলা হয়, মধ্যবয়সী নারীদের একদিকে মেনোপজ, অন্যদিকে পরিবার ও পরিচর্যার দায়িত্ব সামলাতে হয়। এই বহুমুখী চাপই তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের ড. রজওয়ানা বেগম বলেন, মেনোপজ বা মানসিক সমস্যার মতো বিষয় নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করতে অনেকেই সংকোচ বোধ করেন। তারা মনে করেন, এ ধরনের বিষয় প্রকাশ করলে তা পরিবার বা কর্মজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
তার মতে, প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের পরিবর্তে কর্মক্ষেত্র ও সমাজে উন্মুক্ত আলোচনা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু নীতি বা নিয়ম নয়—আসল পরিবর্তন আসে মানুষের আচরণ ও আন্তরিক পদক্ষেপ থেকে।
জেন্ডার সমতার অগ্রগতি ও সীমাবদ্ধতা
ড. রজওয়ানা জানান, জাতিসংঘের ২০২৪ সালের জেন্ডার ইনইক্যুয়ালিটি ইনডেক্সে ১৬৬ দেশের মধ্যে সিঙ্গাপুর অষ্টম এবং এশিয়া-প্যাসিফিকে প্রথম স্থানে আছে। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতায় নারীরা এখনো ক্লান্তি, প্রতিযোগিতা এবং সংগ্রামের কথা বলেন।
পুরুষতন্ত্রের নতুন সংজ্ঞা
একই অনুষ্ঠানে সামাজিক ও পরিবার উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী গো পেই মিং বলেন, জাতীয় সেনাসেবা প্রায়ই পুরুষত্বের পরীক্ষা হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীতে অনেক নারীও সফলভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিনি উদাহরণ দেন—মহিলা ফাইটার স্কোয়াড্রনের কমান্ডার, মহিলা ট্যাংক ব্যাটালিয়ন প্রধান এবং নৌবাহিনীর নারী ডুবুরি। তার মতে, এসব উদাহরণ প্রমাণ করে নারীও পুরুষের সমান, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে আরও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারেন।
তিনি যোগ করেন, সেনাবাহিনীতে তরুণ পুরুষদের মানসিকতায়ও পরিবর্তন আসছে। তারা ক্রমে বুঝতে পারছেন, পরিবার ও ব্যক্তিগত পরিবেশে তাদের আচরণ কতটা প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউনাইটেড উইমেন সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনীতে লিঙ্গ সমতা বিষয়ে প্রশিক্ষকদের জন্য কর্মশালা চালাচ্ছে, যাতে তারা নতুন সৈনিকদের মাঝেও ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারেন।
সরকারি উদ্যোগ ও নতুন চ্যালেঞ্জ
সামাজিক ও পরিবার উন্নয়ন মন্ত্রী মাসাগোস জুলকিফলি বলেন, গত ৬০ বছরে সিঙ্গাপুর নারী উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। সরকার নারী-পুরুষ সমতা আনতে ১০ বছরের রোডম্যাপ, পিতৃত্বকালীন ছুটি বৃদ্ধি, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী নীতি ইত্যাদি বাস্তবায়ন করেছে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখতে হলে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি। শুধু নীতি নয়, কর্মস্থলে সহায়ক সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে।
পুরুষদেরও পরিবারে দায়িত্ব ভাগাভাগি করতে হবে। তিনি বলেন, বাবা-মাই সন্তানদের প্রথম রোল মডেল। সক্রিয় পিতারা সমান অংশীদারিত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সন্তানদের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন।
তার ভাষায়, “আমাদের দায়িত্ব হলো ছেলেদের শেখানো—নারীদের প্রতি সম্মান কেমন হওয়া উচিত।”