দীর্ঘায়ু ও কর্মজীবন
যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের গড় আয়ু যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে কর্মজীবনের দৈর্ঘ্যও। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৭ শতাংশ মানুষ কাজ করেছেন, যা ২০০৪ সালের ২২ শতাংশের চেয়ে বেশি। ৭৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে বর্তমানে প্রায় ৯ শতাংশ মানুষ কর্মজীবনের সঙ্গে যুক্ত আছেন।
অবসর বিলম্বিত করার আর্থিক সুবিধা যথেষ্ট। দীর্ঘদিন আয় চালিয়ে গেলে সঞ্চয় কম খরচ হয়, ভবিষ্যতের জন্য বেশি টাকা জমা থাকে, এমনকি উত্তরাধিকারীর জন্যও। আবার ‘সোশ্যাল সিকিউরিটি’ দেরিতে নিতে পারলে বছরে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি সুবিধা মেলে।
অবসরের পথে চার জনের গল্প
মাইরেল ম্যানলি: দেরিতে অবসর, নতুন জীবনের শুরু
গোল্ডেন ভ্যালি, মিনেসোটা
অবসর বয়স: ৭৬
বার্ষিক খরচ: ১,৬০,০০০ ডলার
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মাইরেল ম্যানলি নিউইয়র্কে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা ও থেরাপির কাজ করেছেন। তবে ২০২৩ সালে ৭৬ বছর বয়সে অবসর নেন। মূল কারণ ছিল বাসা ও অফিসের ভাড়া বেড়ে যাওয়া। তিনি প্রেমিক গুনার সোয়ানসনের সঙ্গে মিনেসোটার এক অবসর কমিউনিটিতে চলে যান।
শুরুটা সহজ ছিল না—বাসা বদলের সময় দুর্ঘটনায় পিঠ ভেঙে যায়। কিন্তু সঙ্গীর সহায়তায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। বর্তমানে ৭৮ বছর বয়সে নতুন বন্ধু, পিয়ানো ও স্প্যানিশ শেখা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ভ্রমণে সময় কাটাচ্ছেন। তবে তিনি আশঙ্কায় আছেন সঞ্চয় ফুরিয়ে যাওয়ার। তাই সপ্তাহে ১০ ঘণ্টার মতো ভার্চুয়াল কাজ খুঁজছেন। তার বিশ্বাস, বয়স এখানে প্রতিবন্ধক নয়, বরং অভিজ্ঞতাই সবচেয়ে বড় সম্পদ।
ড্যানিয়েল মেইনজার: ক্যামেরা এখনো হাতে
স্টো, ওহাইও
অবসর বয়স: ৭৮
বার্ষিক খরচ: ৭৫,০০০ ডলার
৮০ বছর বয়সী এই ফটোগ্রাফার এখনো কাজ ছাড়েননি, যদিও ধীরে ধীরে পেশাগত দায়িত্ব কমাচ্ছেন। জীবনের শুরুতেই ফটোগ্রাফি শুরু করেন এবং নিজের ব্যবসা দাঁড় করান। বিবাহবিচ্ছেদে আর্থিক ক্ষতি হলেও তিনি নিয়মিত সঞ্চয় করেছেন।
বর্তমানে তার ৬ লাখ ডলার সঞ্চয় রয়েছে, যার বেশির ভাগই শেয়ার ও অবসর তহবিলে। বছরে প্রায় ৭৫ হাজার ডলার আয় করেন—এর মধ্যে ২০ হাজার আসে ফটোগ্রাফি থেকে, বাকি সামাজিক নিরাপত্তা, লভ্যাংশ ও সুদ থেকে।
মেইনজার জীবন উপভোগ করেন—টেনিস খেলেন, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেন, গাড়ির প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ আছে। তিনি বলেন, জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফ্রেড ফাহলেন: কাজই জীবন
উইমার, ক্যালিফোর্নিয়া
অবসর বয়স: ৭৫
বার্ষিক খরচ: ৭০,০০০ ডলার
৮৬ বছর বয়সেও ফ্রেড ফাহলেন পূর্ণসময়ে কাজ করেন একজন পরিবেশ প্রকৌশলী হিসেবে। এর বেশির ভাগই বিনা পারিশ্রমিকে। ক্যান্সার জয় করার পর তিনি কাজের প্রতি নতুন উদ্যম পান।
তিনি প্রায় ১৭ লাখ ডলার সঞ্চয় করেছেন, যার বেশির ভাগ নিরাপদ তহবিলে রাখা। বছরে প্রায় ৩১ হাজার ডলার সামাজিক নিরাপত্তা থেকে এবং আরও কিছু আয় করেন কাজ থেকে। জীবনের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি সহজ—অন্যদের জন্য অবদান রাখা এবং পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। নাতি-নাতনিদের শিক্ষার জন্য তিনি প্রায় ১০ লাখ ডলার ব্যয় করেছেন।
শ্যারন কলিয়ার: দেরিতে অবসরে স্বাস্থ্য আর সুখ
অস্টিন, টেক্সাস
অবসর বয়স: ৭৪
বার্ষিক খরচ: ১,৫৮,০০০ ডলার
শ্যারন কলিয়ার আসলে ৭৫ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু নিজের মার্কেটিং ব্যবসা বিক্রির প্রস্তাব পেয়ে ৭৪ বছর বয়সেই অবসর নেন। তার স্বামী রন আংশিক অবসর নিয়েছেন, তবে এখনো পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন।
অবসরের পর শ্যারন পরিবারের প্রবীণদের যত্নে সময় দেন। এখন তিনি বাগান করা, বই পড়া, সাইক্লিং এবং ভ্রমণ উপভোগ করেন। তাদের বার্ষিক আয় প্রায় ১,৮৭,০০০ ডলার, যার বড় অংশ আসে সামাজিক নিরাপত্তা, ব্যবসা বিক্রির অর্থ ও শেয়ারের আয়ে।
তাদের খরচের বড় অংশ স্বাস্থ্য ও বীমার জন্য যায়। শ্যারনের বাবা-মা অবসর জীবন উপভোগ করেছিলেন সক্রিয় থেকে। তিনিও সেই জীবনযাপন অনুসরণ করার চেষ্টা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ৭৫ বছরের পরের অবসর জীবন নানা রকম। কেউ সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করে, কেউ আবার আংশিক কাজ চালিয়ে যান। আর্থিক নিরাপত্তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি মানসিক ও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকাও বড় বিষয়। চারজনের ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেখায়—অবসর শুধু বয়সের বিষয় নয়, বরং জীবনধারা ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।