ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রেক্ষাপট
বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি নিম্নচাপ ঘনীভূত হয়ে ধীরে ধীরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্র জয়েন্ট টাইফুন সতর্কীকরণ কেন্দ্র (JTWC) এবং আঞ্চলিক ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী আবহাওয়া সিস্টেম সক্রিয় রয়েছে।
এই সিস্টেমটির কেন্দ্র বর্তমানে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূল থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। কেন্দ্রীয় এলাকায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ৬৫ কিলোমিটার, যা দমকা হয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
সম্ভাব্য গতিপথ ও আঘাতের স্থান
আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় “শক্তি” ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার মাঝামাঝি উপকূলে প্রবেশ করতে পারে। যদিও এখনো এটিকে ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর “গভীর নিম্নচাপ” হিসেবেই বিবেচনা করছে, তবে পরিস্থিতি দ্রুত ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
বাংলাদেশে সরাসরি আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই। তবে এর প্রভাবে দেশের ভেতরে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি
ঘূর্ণিঝড় সরাসরি না এলেও এর পার্শ্বপ্রভাব বাংলাদেশে নানা ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
বন্যার আশঙ্কা
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিনে চট্টগ্রাম, ফেনী, লালমনিরহাট, নীলফামারী, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা জেলার নিম্নাঞ্চলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে।
ভারী বর্ষণ
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৪–৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ প্রবণতা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে নগর এলাকায় জলাবদ্ধতা ও গ্রামীণ এলাকায় ফসলের ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।
সমুদ্র ও উপকূলীয় প্রভাব
সমুদ্র উত্তাল হয়ে উঠবে, জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হতে পারে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ
বঙ্গোপসাগর বিশ্বের অন্যতম ঘূর্ণিঝড়প্রবণ এলাকা। উষ্ণ সমুদ্রজল, আর্দ্রতা ও বায়ুমণ্ডলীয় অস্থিরতার কারণে এ অঞ্চলে প্রায় প্রতিবছরই একাধিক নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়।
আবহাওয়াবিদদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ঘনত্ব ও তীব্রতা দুটোই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD) নিয়মিত বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করছে। উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (CPP)-এর স্বেচ্ছাসেবীরা সক্রিয় রয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের জন্য এখন জরুরি হলো:
- সর্বশেষ আবহাওয়ার বুলেটিন নিয়মিত শোনা।
- অপ্রয়োজনীয় সমুদ্রযাত্রা এড়িয়ে চলা।
- নদী ও খালপথে পানি প্রবাহের জন্য বাধা অপসারণ করা।
- স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা।
ঘূর্ণিঝড় “শক্তি” সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে না — এটাই আপাতত স্বস্তির খবর। তবে এর প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়কেই গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। প্রস্তুতিই ক্ষয়ক্ষতি কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়।