এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস শীতকালীন মৌসুমে রুট ও ফ্রিকোয়েন্সি সাময়িকভাবে পুনর্বিন্যাস করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত–কেরালা রুটে বড় ধরনের বিঘ্ন না হলেও, অনিশ্চয়তার কারণে ডিসেম্বর ভাড়ায় তীব্র ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। কমিউনিটি সংগঠনগুলো ফ্রিকোয়েন্সি কমানো নিয়ে আপত্তি তুলেছে এবং ভারতের শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ চাইছে। এদিকে ভ্রমণচাহিদা শীতের ছুটিতে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।
কেন আপত্তি উঠছে
মালয়ালি প্রবাসী সম্প্রদায় জানিয়েছে, কেরালা রুটে ফ্লাইট কমালে টিকিটের দাম বেড়ে যাবে এবং যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়বে। তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ নীতিনির্ধারকদের কাছে বিদ্যমান ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বজায় রাখার অনুরোধ জানাচ্ছেন। এক ভারতীয় রাজনীতিকও মন্তব্য করেছেন, কেরালাকে ‘পরে ভাবার বিষয়’ হিসেবে দেখা ঠিক নয়।
শিডিউল এখনো চূড়ান্ত নয়
এয়ারলাইনের শীতকালীন সময়সূচি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়নি। সাধারণত বিমান সংস্থাগুলো গ্রীষ্ম ও শীত মৌসুমের রুট–ফ্রিকোয়েন্সির প্রস্তাব ভারতের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (DGCA)–তে জমা দেয়। পর্যালোচনার পর DGCA সাপ্তাহিক মোট ফ্লাইট সংখ্যা ও কোন কোন বিমানবন্দরে সেবা দেওয়া হবে তা অনুমোদন করে। সূত্র বলছে, সময়সূচি মধ্য–অক্টোবরে প্রকাশ হতে পারে। তবে প্রকাশের আগেই জল্পনা–কল্পনা ও প্রতিক্রিয়া বেড়েই চলেছে।
মৌসুমভিত্তিক সমন্বয়: কী বলছে এয়ারলাইন
এয়ারলাইন সূত্র জানিয়েছে, এই পরিবর্তন সম্পূর্ণ মৌসুমী ও চাহিদানির্ভর; বাজার–তথ্য বিশ্লেষণ করে বছরে দু’বার (শীত–গ্রীষ্ম) নেটওয়ার্ক সমন্বয় করা হয়। শীতকালে যাত্রীদের একটি বড় অংশ উত্তর ভারতের গন্তব্য—যেমন জয়পুর, বারাণসী—পছন্দ করে; উৎসব–ঋতু ও আবহাওয়ার কারণে ওই দিকে চাহিদা বাড়ে। শুধু এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস নয়, ইন্ডিগো ও আকাসা–সহ অন্যান্য এয়ারলাইনও এমন মৌসুমী সমন্বয় করে থাকে। এয়ারলাইন আরও বলেছে, গ্রীষ্মকালীন সময়সূচি মার্চে শুরু হলে স্বাভাবিক ফ্রিকোয়েন্সি ফিরে আসবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রভাব কতটা
সূত্রের দাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত–কেরালা সংযোগে বড় কোনো বিঘ্ন হবে না। তবে GCC–এর অন্যান্য বাজার—বাহরাইন, ওমান, সৌদি আরব ও কুয়েতে—কিছু রুটে সাময়িকভাবে ফ্রিকোয়েন্সি কমতে পারে। ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, কোঝিকোড় (ক্যালিকট) ও কন্নুর রুটে কাটছাঁট বেশি হতে পারে; শীতকালে কিছু সার্ভিস পুরোপুরি বাতিলও হতে পারে।
শীতের ছুটি: চাহিদা হবে রেকর্ড
ট্রাভেল এজেন্টদের মতে, এ বছর শীতের স্কুল–ছুটি ও জাতীয় দিবসের ধারাবাহিক ছুটিতে কেরালাগামী যাত্রীর ঢল নামবে। অনেক পরিবার মাঝের কয়েকটি কর্মদিবস ছেড়েও দিতে পারে। ফলে কেরালা রুটে টিকিটের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে বলে তাদের ধারণা।
ভাড়ার হঠাৎ ঊর্ধ্বগতি
শিডিউল–কমানোর খবরে কেরালাগামী টিকিটের দাম দ্রুত বেড়েছে। ডিসেম্বর ভ্রমণের জন্য দক্ষিণ ভারতের গন্তব্যগুলোর রিটার্ন ভাড়া এখন প্রায় দিরহাম 1,200 থেকে 1,400; ক্রিসমাস–নিউ ইয়ার ঘনালে দাম আরও বাড়তে পারে। সাধারণত ‘শোল্ডার সিজন’-এ এই ভাড়া দিরহাম 800–1,000 এর মধ্যে থাকে। এজেন্টদের মতে, সক্ষমতা কমে গেলে পিক সিজনে দামের চাপ আরও বাড়বে।
বাজার–বাস্তবতা বনাম শিডিউল–কৌশল
এজেন্টদের অভিযোগ, শীতকালে কেরালা সেক্টরে প্রবাসী–নির্ভর চাহিদা অত্যন্ত বেশি, বিশেষ করে বড়দিনের ছুটিতে। ইতিমধ্যেই গড়ে প্রায় ৪০শতাংশ ভাড়া বেড়েছে। কিছু ফ্লাইট কমানোর বিষয়ে বিমানবন্দরগুলোকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলেই দাম বাড়ছে—এমন ধারণা তাদের। অফ–পিক সময়ে যেখানে দিরহাম ৮০০ -৯০০ ছিল, সেখানে ডিসেম্বরের দীর্ঘ ছুটিতে দাম স্বাভাবিকভাবেই উপরে থাকবে।
চাহিদা স্থিতিশীল, সক্ষমতা কমলে দাম বাড়বেই
এজেন্টদের মতে, কেরালাগামী প্রবাসী যাত্রীর ভিত্তি বড় ও স্থিতিশীল; বছর–ওভার–বছর বৃদ্ধি দেখা যায়। দীর্ঘ ছুটির কারণে এবার চাহিদা আরও চড়া থাকবে। এই অবস্থায় সক্ষমতা কমালে উচ্চ ভাড়া পুরো শীতকাল জুড়ে টিকে যেতে পারে। সরল অর্থনীতির ভাষায়—চাহিদা বাড়লে এবং সরবরাহ কমলে, দাম বাড়া অবশ্যম্ভাবী।
সাশ্রয়ী সংযোগ যথেষ্ট কি না
এই বিতর্ক কেরালার বিপুল প্রবাসী শ্রমবাহিনীর জন্য সাশ্রয়ী আকাশ–পথ সংযোগ কতটা পর্যাপ্ত—এ প্রশ্ন আবার সামনে এনেছে। কমিউনিটির প্রত্যাশা, নীতিনির্ধারক ও এয়ারলাইনগুলো একযোগে এমন সমাধান দেবে যাতে মৌসুমী সমন্বয় হলেও প্রবাসীদের যাতায়াত সহজ ও সাশ্রয়ী থাকে।
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের শীতকালীন রুট–সমন্বয় আপাতত অস্থায়ী ও চাহিদানির্ভর। সংযুক্ত আরব আমিরাত–কেরালা রুটে বড় বাধা না হলেও, অনিশ্চয়তা ও সক্ষমতা–কমানোর আভাসেই ভাড়া বাড়ছে। শীতের দীর্ঘ ছুটি সামনে রেখে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে—তাই পরিকল্পিত বুকিং ও বিকল্প অপশন বিবেচনাই এখন সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পথ।