ট্যারিফ বৃদ্ধির ঘোষণা
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রায় চার দশক পর সেবামূল্যে ট্যারিফ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্তে গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ পর্যন্ত খরচ বাড়বে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ও রফতানি চাপে থাকা অবস্থায় এ উদ্যোগ ব্যবসার জন্য হবে “মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা”।
কতটা বাড়ছে খরচ
- ২০ ফুট কনটেইনারের ট্যারিফ ১১,৮৪৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬,২৪৩ টাকা (গড়ে ৩৭% বৃদ্ধি)।
- আমদানি কনটেইনারে অতিরিক্ত দিতে হবে ৫,৭২০ টাকা, রফতানিতে ৩,০৪৫ টাকা।
- কনটেইনার ওঠানো-নামানোতে বাড়তি প্রায় ৩,০০০ টাকা খরচ হবে।
- প্রতি কেজি পণ্যের মাশুল ১.২৮ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৭৫ টাকা।
- জাহাজ ভিড়তে দেরি হলে ওয়েটিং চার্জ ৯০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
অর্থনীতিবিদদের মতে—
- আমদানি ও রফতানি দুই দিকেই খরচ বাড়বে।
- উৎপাদন ব্যয় বেড়ে শিল্প খাতে চাপ পড়বে।
- আন্তর্জাতিক ক্রেতারা অন্য বাজারে চলে যেতে পারে, ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমবে।
- ভোক্তাদের জন্য পণ্যের দাম বাড়বে, মুদ্রাস্ফীতি আরও তীব্র হবে।
তৈরি পোশাক খাতের উদ্বেগ
বাংলাদেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প। ইতিমধ্যেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, অর্ডার কমে যাওয়া ও ডলার সংকটে সমস্যায় আছে। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা—
- কাঁচামাল আমদানি ও রফতানি দুই ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে।
- আন্তর্জাতিক বাজারে পোশাকের দাম বাড়ানো সম্ভব নয়, ফলে উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ বাড়বে।
- শ্রমিকদের বেতন বকেয়া পড়তে পারে, ব্যাংক ঋণ বাড়তে পারে, এমনকি কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও আছে।

সরকারের যুক্তি
সরকার বলছে—
- ৩৯ বছর পর ট্যারিফ সমন্বয় করা হয়েছে।
- অবকাঠামো উন্নয়ন, আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে বাড়তি রাজস্ব দরকার।
- অন্যান্য দেশের বন্দরগুলোর সঙ্গে তুলনা করেই নতুন হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতি কেজি পণ্যে মাশুল ৩২ পয়সা থেকে ৪৪ পয়সা হলেও নিত্যপণ্যের দামে বড় প্রভাব পড়বে না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতিমধ্যেই মুনাফায় থাকা বন্দরের এই বাড়তি ট্যারিফ ব্যবসায়ীদের ওপর চাপানো কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব উপেক্ষিত
বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন সর্বোচ্চ ১০-১২% বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। বৈঠকে আশ্বাস দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়নি। ব্যবসায়ী নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাদের মতামত উপেক্ষা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সার্বিক প্রভাব
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২% আমদানি রফতানি ও ৯৮% কনটেইনার পরিবহন হয়। তাই এই এককেন্দ্রিক অবকাঠামোর ট্যারিফ বৃদ্ধি সরাসরি পুরো অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
২০২৪ সালে বন্দর দিয়ে ৩২ লাখের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, যেখানে তৈরি পোশাকসহ শিল্পপণ্যের আমদানি ও রফতানি সবচেয়ে বেশি।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রতিযোগিতা কমাবে এবং বিনিয়োগের পরিবেশকে আরও অনিশ্চিত করে তুলবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















