০৯:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫

ড্যানিয়েল ডে-লুইসের বিস্ফোরক প্রত্যাবর্তন: ‘অ্যানিমোন’-এ অগ্নিমুখর অভিনয়

দীর্ঘ বিরতির পর নতুন চলচ্চিত্রে ফেরা

প্রখ্যাত অভিনেতা ড্যানিয়েল ডে-লুইস অবসর ঘোষণা করার আট বছর পর আবারও পর্দায় ফিরলেন। তার অভিনীত নতুন চলচ্চিত্র “অ্যানিমোন” পরিচালনা করেছেন তার ছেলে রোনান ডে-লুইস। এটি রোনানের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, যা আত্মবিশ্বাসী পরিচালনা ও শক্তিশালী ভিজ্যুয়াল গল্প বলার ক্ষমতার কারণে ইতিমধ্যেই আলোচিত হয়েছে।


পারিবারিক ঐতিহ্যের ভার

রোনান ডে-লুইস এমন এক পরিবারে বড় হয়েছেন যেখানে শিল্প-সাহিত্য উত্তরাধিকারস্বরূপ। তার দাদা ছিলেন ব্রিটিশ কবি লরিয়েট সিসিল ডে-লুইস এবং নাট্যকার আর্থার মিলার। মা রেবেকা মিলার একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, আর বাবা ড্যানিয়েল ডে-লুইসকে বলা হয় প্রজন্মের সেরা অভিনেতা। এতসব তুলনার ভার সত্ত্বেও রোনান নিজের জায়গা প্রমাণ করতে প্রথম ছবিতেই প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

Daniel Day-Lewis returns in the odd but effective "Anemone"

কাহিনি ও চরিত্র

চলচ্চিত্রে ড্যানিয়েল ডে-লুইস অভিনয় করেছেন এক রাগী সন্ন্যাসীর ভূমিকায়, যিনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রামীণ কুটিরে নির্জন জীবনযাপন করেন। তার অভিনয়ে পূর্ববর্তী চরিত্রগুলোর তীব্রতা যেমন ধরা পড়েছে, তেমনি সময়ের সাথে কঠিন মানুষও ভেতরে ভেঙে পড়ে — এই উপলব্ধির আবেগময় দিকটিও ফুটে উঠেছে।

চিত্রনাট্য লিখেছেন বাবা-ছেলে মিলে। কাহিনি ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়, তথ্য গোপন রেখে দর্শকদের কৌতূহলী করে তোলার ধাঁচে সাজানো। তৃতীয় অধ্যায় পর্যন্ত পুরো সত্য স্পষ্ট হয় না।


প্রধান চরিত্রগুলো

  • সিন বিন অভিনয় করেছেন উত্তর ইংল্যান্ডের জেম চরিত্রে, যিনি স্ত্রী নেসা (সামান্থা মর্টন) ও ছেলে ব্রায়ানকে রেখে এক পারিবারিক জরুরি প্রয়োজনে ভাইয়ের খোঁজে বের হন।
  • জেম একটি রহস্যময় প্যাকেট খোলেন, যেখানে ‘অ্যানিমোন’ নামক কোড ও মানচিত্রের অবস্থান লেখা থাকে। সেখান থেকে শুরু হয় ভাই রের (ড্যানিয়েল ডে-লুইস) কাছে পৌঁছানোর যাত্রা।
  • রে এক গম্ভীর ও বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করে, যেখানে আগন্তুকরা অনাহুত।

চলচ্চিত্রে উত্তরাধিকার, পারিবারিক দোষত্রুটি এবং ব্রিটেনের সাম্প্রতিক ইতিহাসের নৈতিক জটিলতা একসাথে উঠে এসেছে।

Anemone - Samantha Morton as Nessa | Moviefone

রোনান ডে-লুইসের পরিচালনা

গল্পের অগ্রগতি অল্প হলেও ছবির ভিজ্যুয়াল স্টাইল দর্শকদের ধরে রাখে।

  • সিনেমাটোগ্রাফার বেন ফোর্ডসম্যানের দৃশ্যায়ন নির্মম অথচ সুন্দর।
  • সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ববি ক্রলিক (হ্যাক্সান ক্লোক নামেও পরিচিত), যিনি এর আগে মিডসমার এর মতো চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।
  • কিছু দৃশ্যে অবাস্তব ও স্বপ্নময় চিত্র ফুটে উঠেছে, যা পরিচালকের ভিন্নধর্মী ভিজ্যুয়াল চিন্তার ইঙ্গিত দেয়।

অভিনয়ের শক্তি

  • ড্যানিয়েল ডে-লুইস: চলচ্চিত্রের প্রাণ। তার চরিত্র রের মধ্যে যন্ত্রণা, স্মৃতি ও রাগ একসাথে মিশে দর্শকদের মুগ্ধ করে। শেষ অধ্যায়ে তার সত্য প্রকাশ বিধ্বংসী শক্তি বহন করে।
  • সিন বিন: ভাইয়ের ছায়াতলে দাঁড়িয়েও আবেগময় উপস্থিতি বজায় রেখেছেন।
  • সামান্থা মর্টন: পরিবারের টানাপোড়েনে শান্তি আনার চেষ্টা করা মায়ের চরিত্রে দারুণ বাস্তব অভিনয় করেছেন।
  • স্যামুয়েল বটমলি: তার নীরব, শূন্যদৃষ্টি ব্রায়ান চরিত্রকে ভয়ঙ্করভাবে অনিশ্চিত করে তোলে।

চূড়ান্ত মূল্যায়ন

“অ্যানিমোন” ধীরগতির হলেও গভীরভাবে আবেগপ্রবণ একটি চলচ্চিত্র। এটি একাধারে পারিবারিক সম্পর্ক, উত্তরাধিকার ও ব্যক্তিগত দুঃখ-বেদনার গল্প। তবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে ড্যানিয়েল ডে-লুইসের প্রত্যাবর্তন। তার অসাধারণ অভিনয় আবারও প্রমাণ করল—অভিনয়ের জগতে তিনি অনন্য।

দর্শক ও সমালোচকদের প্রত্যাশা এখন একটাই: এই সাফল্য কি তাকে নিয়মিতভাবে সিনেমায় ফিরিয়ে আনবে?

জনপ্রিয় সংবাদ

ড্যানিয়েল ডে-লুইসের বিস্ফোরক প্রত্যাবর্তন: ‘অ্যানিমোন’-এ অগ্নিমুখর অভিনয়

০৬:০০:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ বিরতির পর নতুন চলচ্চিত্রে ফেরা

প্রখ্যাত অভিনেতা ড্যানিয়েল ডে-লুইস অবসর ঘোষণা করার আট বছর পর আবারও পর্দায় ফিরলেন। তার অভিনীত নতুন চলচ্চিত্র “অ্যানিমোন” পরিচালনা করেছেন তার ছেলে রোনান ডে-লুইস। এটি রোনানের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, যা আত্মবিশ্বাসী পরিচালনা ও শক্তিশালী ভিজ্যুয়াল গল্প বলার ক্ষমতার কারণে ইতিমধ্যেই আলোচিত হয়েছে।


পারিবারিক ঐতিহ্যের ভার

রোনান ডে-লুইস এমন এক পরিবারে বড় হয়েছেন যেখানে শিল্প-সাহিত্য উত্তরাধিকারস্বরূপ। তার দাদা ছিলেন ব্রিটিশ কবি লরিয়েট সিসিল ডে-লুইস এবং নাট্যকার আর্থার মিলার। মা রেবেকা মিলার একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা, আর বাবা ড্যানিয়েল ডে-লুইসকে বলা হয় প্রজন্মের সেরা অভিনেতা। এতসব তুলনার ভার সত্ত্বেও রোনান নিজের জায়গা প্রমাণ করতে প্রথম ছবিতেই প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

Daniel Day-Lewis returns in the odd but effective "Anemone"

কাহিনি ও চরিত্র

চলচ্চিত্রে ড্যানিয়েল ডে-লুইস অভিনয় করেছেন এক রাগী সন্ন্যাসীর ভূমিকায়, যিনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গ্রামীণ কুটিরে নির্জন জীবনযাপন করেন। তার অভিনয়ে পূর্ববর্তী চরিত্রগুলোর তীব্রতা যেমন ধরা পড়েছে, তেমনি সময়ের সাথে কঠিন মানুষও ভেতরে ভেঙে পড়ে — এই উপলব্ধির আবেগময় দিকটিও ফুটে উঠেছে।

চিত্রনাট্য লিখেছেন বাবা-ছেলে মিলে। কাহিনি ধীরে ধীরে অগ্রসর হয়, তথ্য গোপন রেখে দর্শকদের কৌতূহলী করে তোলার ধাঁচে সাজানো। তৃতীয় অধ্যায় পর্যন্ত পুরো সত্য স্পষ্ট হয় না।


প্রধান চরিত্রগুলো

  • সিন বিন অভিনয় করেছেন উত্তর ইংল্যান্ডের জেম চরিত্রে, যিনি স্ত্রী নেসা (সামান্থা মর্টন) ও ছেলে ব্রায়ানকে রেখে এক পারিবারিক জরুরি প্রয়োজনে ভাইয়ের খোঁজে বের হন।
  • জেম একটি রহস্যময় প্যাকেট খোলেন, যেখানে ‘অ্যানিমোন’ নামক কোড ও মানচিত্রের অবস্থান লেখা থাকে। সেখান থেকে শুরু হয় ভাই রের (ড্যানিয়েল ডে-লুইস) কাছে পৌঁছানোর যাত্রা।
  • রে এক গম্ভীর ও বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করে, যেখানে আগন্তুকরা অনাহুত।

চলচ্চিত্রে উত্তরাধিকার, পারিবারিক দোষত্রুটি এবং ব্রিটেনের সাম্প্রতিক ইতিহাসের নৈতিক জটিলতা একসাথে উঠে এসেছে।

Anemone - Samantha Morton as Nessa | Moviefone

রোনান ডে-লুইসের পরিচালনা

গল্পের অগ্রগতি অল্প হলেও ছবির ভিজ্যুয়াল স্টাইল দর্শকদের ধরে রাখে।

  • সিনেমাটোগ্রাফার বেন ফোর্ডসম্যানের দৃশ্যায়ন নির্মম অথচ সুন্দর।
  • সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন ববি ক্রলিক (হ্যাক্সান ক্লোক নামেও পরিচিত), যিনি এর আগে মিডসমার এর মতো চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।
  • কিছু দৃশ্যে অবাস্তব ও স্বপ্নময় চিত্র ফুটে উঠেছে, যা পরিচালকের ভিন্নধর্মী ভিজ্যুয়াল চিন্তার ইঙ্গিত দেয়।

অভিনয়ের শক্তি

  • ড্যানিয়েল ডে-লুইস: চলচ্চিত্রের প্রাণ। তার চরিত্র রের মধ্যে যন্ত্রণা, স্মৃতি ও রাগ একসাথে মিশে দর্শকদের মুগ্ধ করে। শেষ অধ্যায়ে তার সত্য প্রকাশ বিধ্বংসী শক্তি বহন করে।
  • সিন বিন: ভাইয়ের ছায়াতলে দাঁড়িয়েও আবেগময় উপস্থিতি বজায় রেখেছেন।
  • সামান্থা মর্টন: পরিবারের টানাপোড়েনে শান্তি আনার চেষ্টা করা মায়ের চরিত্রে দারুণ বাস্তব অভিনয় করেছেন।
  • স্যামুয়েল বটমলি: তার নীরব, শূন্যদৃষ্টি ব্রায়ান চরিত্রকে ভয়ঙ্করভাবে অনিশ্চিত করে তোলে।

চূড়ান্ত মূল্যায়ন

“অ্যানিমোন” ধীরগতির হলেও গভীরভাবে আবেগপ্রবণ একটি চলচ্চিত্র। এটি একাধারে পারিবারিক সম্পর্ক, উত্তরাধিকার ও ব্যক্তিগত দুঃখ-বেদনার গল্প। তবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ নিঃসন্দেহে ড্যানিয়েল ডে-লুইসের প্রত্যাবর্তন। তার অসাধারণ অভিনয় আবারও প্রমাণ করল—অভিনয়ের জগতে তিনি অনন্য।

দর্শক ও সমালোচকদের প্রত্যাশা এখন একটাই: এই সাফল্য কি তাকে নিয়মিতভাবে সিনেমায় ফিরিয়ে আনবে?