দীর্ঘদিনের অনিয়মে আর্থিক সংকট
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি বর্তমানে ভয়াবহ আর্থিক ও প্রশাসনিক সংকটে পড়েছে। কর্মকর্তাদের মতে, এস. আলম গ্রুপের অধীনে বছরের পর বছর ধরে অনিয়মিত নিয়োগ এই বিপর্যয়ের প্রধান কারণ।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা এখন নতুন করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে হাজার হাজার অযোগ্য কর্মীর যোগ্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অযোগ্য কর্মী নিয়োগের ফলে বিপুল লোকসান
ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন জাসিম জানিয়েছেন, পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনায় ৮ হাজারেরও বেশি অযোগ্য ও আধা-শিক্ষিত ব্যক্তিকে সঠিক প্রক্রিয়া ছাড়া নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে প্রতি বছর ১,৫০০ কোটিরও বেশি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানা সাত বছরে এই ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এছাড়া, ব্যাংক থেকে ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি অর্থ লুট হয়ে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ আর্থিক স্থিতিশীলতা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ভুয়া সার্টিফিকেট ও পরীক্ষা বর্জন
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে আরও উঠে এসেছে, অনেক কর্মী ভুয়া শিক্ষাগত সনদ ব্যবহার করেছেন। সম্প্রতি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য বিশেষ পরীক্ষা আয়োজন করলেও প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী তা বর্জন করেন।
এমনকি তারা ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো, সংবাদ সম্মেলন ও হুমকি দেওয়ার মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছে। শুক্রবার সকালে ব্যাংকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজও হ্যাক হওয়ার অভিযোগ ওঠে।
নিরাপত্তাহীন গ্রাহক অর্থ
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এক পরিচালক সতর্ক করে বলেছেন, বিদ্রোহী এসব কর্মীর হাতে গ্রাহকের অর্থ নিরাপদ নয়। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ব্যাংক মারাত্মক সংকটে পড়বে।
কর্মকর্তারা জানান, অনিয়মিত নিয়োগের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানটি এখন কার্যত চট্টগ্রামভিত্তিক একটি আঞ্চলিক ব্যাংকে পরিণত হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে বিশৃঙ্খলা ও ভয়ের সংস্কৃতি
অনেক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী অফিসে কেবল আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলায় গ্রাহকসেবায় সমস্যা দেখা দেয়। তারা এস. আলমের প্রভাব খাটিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করেছেন এবং পছন্দসই এলাকায় বদলি নিয়েছেন।
যেসব ম্যানেজার নিয়ম মানতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। ফলে ভয়ের পরিবেশে ব্যাংকের জোনাল প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনার সবাই সবসময় চাপের মধ্যে কাজ করেছেন।
অনেক কর্মী এখনও হুমকি দিচ্ছেন, জাতীয় নির্বাচন শেষে তারা আবারও পদে ফিরবেন এস. আলমের সহায়তায়।
ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থাহানি
ব্যাংক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাপক অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের কারণে ব্যাংক খাতের প্রতি জনগণের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, “এস. আলম একাই পুরো ব্যাংক খাত ধ্বংস করে দিয়েছে।”
সাধারণ মানুষের ক্ষোভ
গ্রাহকরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন লিখেছেন, “পটিয়ার অবৈধ ব্যাংকাররা চাকরি রক্ষায় আন্দোলন করছে, কিন্তু কেন তারা তাদের নেতা এস. আলমের পাচার করা ১ লাখ কোটি টাকা ফেরত আনার দাবি তুলছে না?”
এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ইসলামী ব্যাংকের সংকট আরও গভীর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আপনি কি চান আমি এটিকে সংক্ষিপ্ত সংস্করণও তৈরি করি, যাতে সহজে কপি করে নিউজ ব্রিফ হিসেবে ব্যবহার করা যায়?