০৩:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫
স্ট্রিক্টলি কাম ড্যান্সিং: ২৩তম মৌসুমে তারকা ঝলক, চমক আর নাচের উৎসব সংখ্যা বলছে আবারও ইয়াঙ্কিস-ডজার্স বিশ্ব সিরিজ ফাইনাল হতে পারে আগ্নেয়গিরি থেকে পর্যটন ঢেউ: আইসল্যান্ডের পরিবর্তিত চেহারা হলিউড তারকা স্কারলেট জোহানসনের প্রথম পরিচালনা ‘এলেনর দ্য গ্রেট’ প্রাণীদের জন্য রক্তব্যাংক: চিড়িয়াখানা ও অ্যাকোয়ারিয়ামে নতুন উদ্যোগ মধ্য এশিয়ায় জাপানের কৌশলগত অগ্রযাত্রা বিশ্বজুড়ে এআই ব্যবহারে আস্থার উত্থান, কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ঘাটতি কোয়াড সম্মেলন অনিশ্চিত: বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব ও রাজনীতির চাপে থমকে গেছে ভারতের একাধিক রাজ্যে কাশির সিরাপ নিষিদ্ধ: পরীক্ষায় ধরা পড়ল বিষাক্ত রাসায়নিক জাপানের অতিদক্ষিণপন্থী ভোটারদের মনস্তত্ত্ব: কী তাদের উদ্বুদ্ধ করছে?

৩৮ কোটি টাকার নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্সে অবহেলার ছাপ: স্বপ্ন ভাঙার গল্প

স্বপ্নের প্রকল্প এখন পরিত্যক্ত

রংপুরের উত্তম হাজীরহাট এলাকায় ১০ একর জমির ওপর নির্মিত ৩৮ কোটি টাকার নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি একসময় উত্তরাঞ্চলের নারীদের ক্রীড়ায় এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু আজ সেটি পরিণত হয়েছে গরু-ছাগলের চারণভূমিতে।
অপরিকল্পিত কাজ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও সরকারি উদাসীনতায় বহু বছর ধরে এ কমপ্লেক্সটি অব্যবহৃত পড়ে আছে।

সূচনা ও উদ্দেশ্য

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে ২০১৭ সালে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এর লক্ষ্য ছিল নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা—ডরমিটরি, জিমনেসিয়াম, ইনডোর স্টেডিয়াম এবং প্রশিক্ষণ মাঠসহ একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স গড়ে তোলা।
যদিও নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ২ আগস্ট রংপুর জেলা স্কুল মাঠে এক নির্বাচনী সমাবেশে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন।

একঝলক সম্ভাবনার দেখা

২০২২ সালে ‘ডিভিশনাল কমিশনার কাপ মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর আয়োজনের মাধ্যমে একবার কমপ্লেক্সটি প্রাণ ফিরে পায়। রংপুর বিভাগের আট জেলার নারী দল এতে অংশ নেয়।
কিন্তু সেই এক আয়োজনের পর থেকেই কমপ্লেক্সের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেখানে নীরবতা আর অবহেলার ছাপ।

মাঠে গরুভেতরে ধ্বংস

সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে দেখা যায়—প্রধান ফটক তালাবদ্ধ, পাশে ছোট দরজা খোলা। স্থানীয়রা মাঠে গরু চরাচ্ছেন, ঘাস কাটছেন, কেউ কেউ অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
চারপাশে আগাছা আর ঝোপঝাড়ে ঢাকা জায়গাটি এখন প্রাণহীন এক পরিত্যক্ত মাঠে পরিণত হয়েছে।

কমপ্লেক্সের অবস্থা ভয়াবহ—ভাঙা জানালা, স্যাঁতস্যাঁতে দেয়াল, খসে পড়া প্লাস্টার আর জীর্ণ কোণ। জিমনেসিয়াম তালাবদ্ধ, ডরমিটরিতে ধুলা আর মাকড়সার জাল, মেঝেতে শ্যাওলার দাগ। আধুনিক সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি এখন কেবল স্মৃতি।

স্থানীয়দের ক্ষোভ

স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল বারী স্বপন বলেন, “নয় বছর হয়ে গেল, কোনো টুর্নামেন্টই হয়নি। এত বড় প্রকল্পটি এভাবে পচে যাচ্ছে, কেউ দেখছে না।”
অন্য বাসিন্দা আফসানা আক্তার বলেন, “ভাবছিলাম মেয়েরা এখানে নিয়মিত খেলবে, আমরাও সুযোগ পাবো। এখন এটা মাঠ নয়, শুধু গরুর চর। মেয়েদের যাওয়া-ও নিষেধ।”

হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা

ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, এ অবহেলা শুধু অবকাঠামোর নয়, নারীর ক্রীড়া বিকাশের একটি হারানো সুযোগ।
প্রাক্তন ক্রিকেটার ও প্রশিক্ষক আরিফা জাহান বিথি বলেন, “সবকিছুই এখানে আছে, শুধু সঠিক জনবল ও ব্যবস্থাপনার অভাব। কোটি টাকার প্রকল্প এখন ধ্বংসস্তূপ। কেন খোলা হয়নি, কেউ জানে না। এটি জনগণের টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।”

প্রশাসনের আশ্বাস

নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্স কমিটির সদস্য সচিব সেলওয়ারা বেগম স্বীকার করেছেন, “অনেক বছর ধরে এটি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে, এটা দুঃখজনক। স্থানীয় মেয়েদের খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছি এবং পুরনো ত্রুটিগুলো খতিয়ে দেখা হবে।”

রংপুরের জেলা প্রশাসক রাবিউল ফয়সল জানান, “কমপ্লেক্সটি সচল করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বৈঠক হয়েছে এবং শিগগিরই একটি মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে।”

নারীদের জন্য গড়া এক যুগান্তকারী প্রকল্প আজ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে যেন সরকারি অব্যবস্থাপনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
যথাযথ পরিকল্পনা ও দায়িত্বশীলতার অভাবে ৩৮ কোটি টাকার এই নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্স এখন শুধু গরুর চারণভূমি নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির নিদর্শন।

জনপ্রিয় সংবাদ

স্ট্রিক্টলি কাম ড্যান্সিং: ২৩তম মৌসুমে তারকা ঝলক, চমক আর নাচের উৎসব

৩৮ কোটি টাকার নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্সে অবহেলার ছাপ: স্বপ্ন ভাঙার গল্প

১১:২৯:১৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫

স্বপ্নের প্রকল্প এখন পরিত্যক্ত

রংপুরের উত্তম হাজীরহাট এলাকায় ১০ একর জমির ওপর নির্মিত ৩৮ কোটি টাকার নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্সটি একসময় উত্তরাঞ্চলের নারীদের ক্রীড়ায় এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু আজ সেটি পরিণত হয়েছে গরু-ছাগলের চারণভূমিতে।
অপরিকল্পিত কাজ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও সরকারি উদাসীনতায় বহু বছর ধরে এ কমপ্লেক্সটি অব্যবহৃত পড়ে আছে।

সূচনা ও উদ্দেশ্য

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উদ্যোগে ২০১৭ সালে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। এর লক্ষ্য ছিল নারী ক্রীড়াবিদদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা—ডরমিটরি, জিমনেসিয়াম, ইনডোর স্টেডিয়াম এবং প্রশিক্ষণ মাঠসহ একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স গড়ে তোলা।
যদিও নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের ২ আগস্ট রংপুর জেলা স্কুল মাঠে এক নির্বাচনী সমাবেশে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন।

একঝলক সম্ভাবনার দেখা

২০২২ সালে ‘ডিভিশনাল কমিশনার কাপ মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর আয়োজনের মাধ্যমে একবার কমপ্লেক্সটি প্রাণ ফিরে পায়। রংপুর বিভাগের আট জেলার নারী দল এতে অংশ নেয়।
কিন্তু সেই এক আয়োজনের পর থেকেই কমপ্লেক্সের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেখানে নীরবতা আর অবহেলার ছাপ।

মাঠে গরুভেতরে ধ্বংস

সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে দেখা যায়—প্রধান ফটক তালাবদ্ধ, পাশে ছোট দরজা খোলা। স্থানীয়রা মাঠে গরু চরাচ্ছেন, ঘাস কাটছেন, কেউ কেউ অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
চারপাশে আগাছা আর ঝোপঝাড়ে ঢাকা জায়গাটি এখন প্রাণহীন এক পরিত্যক্ত মাঠে পরিণত হয়েছে।

কমপ্লেক্সের অবস্থা ভয়াবহ—ভাঙা জানালা, স্যাঁতস্যাঁতে দেয়াল, খসে পড়া প্লাস্টার আর জীর্ণ কোণ। জিমনেসিয়াম তালাবদ্ধ, ডরমিটরিতে ধুলা আর মাকড়সার জাল, মেঝেতে শ্যাওলার দাগ। আধুনিক সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি এখন কেবল স্মৃতি।

স্থানীয়দের ক্ষোভ

স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল বারী স্বপন বলেন, “নয় বছর হয়ে গেল, কোনো টুর্নামেন্টই হয়নি। এত বড় প্রকল্পটি এভাবে পচে যাচ্ছে, কেউ দেখছে না।”
অন্য বাসিন্দা আফসানা আক্তার বলেন, “ভাবছিলাম মেয়েরা এখানে নিয়মিত খেলবে, আমরাও সুযোগ পাবো। এখন এটা মাঠ নয়, শুধু গরুর চর। মেয়েদের যাওয়া-ও নিষেধ।”

হারিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা

ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, এ অবহেলা শুধু অবকাঠামোর নয়, নারীর ক্রীড়া বিকাশের একটি হারানো সুযোগ।
প্রাক্তন ক্রিকেটার ও প্রশিক্ষক আরিফা জাহান বিথি বলেন, “সবকিছুই এখানে আছে, শুধু সঠিক জনবল ও ব্যবস্থাপনার অভাব। কোটি টাকার প্রকল্প এখন ধ্বংসস্তূপ। কেন খোলা হয়নি, কেউ জানে না। এটি জনগণের টাকার অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।”

প্রশাসনের আশ্বাস

নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্স কমিটির সদস্য সচিব সেলওয়ারা বেগম স্বীকার করেছেন, “অনেক বছর ধরে এটি অবহেলিত অবস্থায় পড়ে আছে, এটা দুঃখজনক। স্থানীয় মেয়েদের খেলাধুলায় সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছি এবং পুরনো ত্রুটিগুলো খতিয়ে দেখা হবে।”

রংপুরের জেলা প্রশাসক রাবিউল ফয়সল জানান, “কমপ্লেক্সটি সচল করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বৈঠক হয়েছে এবং শিগগিরই একটি মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে।”

নারীদের জন্য গড়া এক যুগান্তকারী প্রকল্প আজ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে যেন সরকারি অব্যবস্থাপনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
যথাযথ পরিকল্পনা ও দায়িত্বশীলতার অভাবে ৩৮ কোটি টাকার এই নারী ক্রীড়া কমপ্লেক্স এখন শুধু গরুর চারণভূমি নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক অপূর্ণ প্রতিশ্রুতির নিদর্শন।