ঋণ কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনায় ঢাকায় আসছে আইএমএফ দল
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ২৯ অক্টোবর ঢাকায় আসছে। দুই সপ্তাহের এ সফরে তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে চলমান ৫৫০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির বাস্তব অগ্রগতি ও শর্তপূরণ পর্যালোচনা করবে।
ওয়াশিংটনে ১৩ থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা শেষে এই সফর শুরু হবে।
সাত থেকে আট কিস্তিতে বাড়ল ঋণ, যুক্ত হলো নতুন শর্ত
বাংলাদেশ ২০২৩ সালে আইএমএফের কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি কর্মসূচি অনুমোদন পায়, যা পরে বাড়িয়ে ৫৫০ কোটি ডলার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে প্রায় ৩৬৪ কোটি ডলার, বাকি ১৮৬ কোটি ডলার আগামী তিন কিস্তিতে ছাড় হবে।
আইএমএফের তথ্যমতে, এই ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে এবং এতে ‘Resilience and Sustainability Facility (RSF)’ থেকে অতিরিক্ত সহায়তাও যুক্ত হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার পর বাংলাদেশ নতুনভাবে প্রায় ১.৩৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে—যার মধ্যে ৮৮৪ মিলিয়ন ECF/EFF থেকে এবং ৪৫৩ মিলিয়ন RSF থেকে আসবে।
কিউপিসি ও রাজস্বের চ্যালেঞ্জ
আইএমএফ এবার মূলত ‘পরিমাণগত কর্মক্ষমতা মানদণ্ড’ (Quantitative Performance Criteria–QPC) পূরণে জোর দেবে। এতে বিদেশি ঋণ গ্রহণের সীমা, জ্বালানি ও সার আমদানির বকেয়া পরিশোধ এবং বৈদেশিক রিজার্ভ বজায় রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ রাজস্ব আদায়। আইএমএফের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে (imf.org; জুন ২০২৫) বলা হয়, রাজস্ব ঘাটতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রধান ঝুঁকি। দ্য ডেইলি স্টার বিশ্লেষণে জানিয়েছে, এনবিআর নির্ধারিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে, যা পরবর্তী কিস্তি ছাড়ে প্রভাব ফেলতে পারে।
রিজার্ভ ও ঋণ সীমা নিয়ে সতর্কতা
আইএমএফ নির্ধারণ করেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৮৪৪ কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ নিতে পারবে না। পাশাপাশি জুন শেষে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ থাকতে হবে অন্তত ১৭৪০ কোটি ডলার।
ব্লুমবার্গের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ বলছে, বাংলাদেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও রাজস্ব ঘাটতি ও আমদানি ব্যয়ের চাপে বৈদেশিক অবস্থান এখনও নাজুক।
অর্থনীতিতে সংস্কারের চাপ
রয়টার্সের তথ্যমতে, আইএমএফ বাংলাদেশের কাছে রাজস্ব প্রশাসন সংস্কার, মুদ্রা বিনিময় হারকে বাজারভিত্তিক করা এবং ঋণ পুনঃতফসিল নীতিমালায় স্বচ্ছতা আনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শর্তগুলো পূরণে দেরি হলে ঋণ ছাড়ের গতি কমে যেতে পারে।
অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন মনে করেন, “এনবিআর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলে অব্যাহতি (‘waiver’) লাগতে পারে, কিন্তু সেটাও অনিশ্চিত।”
কঠোর নজরদারির মধ্যে তিন দিকের চ্যালেঞ্জ
আইএমএফের কঠোর নজরদারি ও নতুন শর্তের মধ্যে বাংলাদেশকে এখন রাজস্ব বৃদ্ধি, রিজার্ভ শক্তিশালীকরণ এবং বৈদেশিক ঋণ নিয়ন্ত্রণ—এই তিন দিকেই সমানভাবে মনোযোগ দিতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এটাই আগামী দুই বছরের জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।