উপকূলীয় অঞ্চল সতর্ক, প্রশাসনের প্রস্তুতি জোরদার
বঙ্গোপসাগরের উত্তরাঞ্চলে গঠিত নিম্নচাপকে ঘিরে তৈরি হওয়া সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় “শক্তি” নিয়ে চট্টগ্রাম জুড়ে সতর্কতা জারি হয়েছে।
যদিও ভারতের IMD (India Meteorological Department) এবং বাংলাদেশের BMD (Bangladesh Meteorological Department) এখনো “শক্তি”কে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘূর্ণিঝড় ঘোষণা করেনি, তবে উভয় দপ্তরই সম্ভাব্য তীব্র বায়ুচলাচল ও ভারি বৃষ্টিপাতের বিষয়ে সতর্ক সংকেত দিয়েছে।
চট্টগ্রাম উপকূল, বিশেষ করে সন্দ্বীপ, মহেশখালী, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও সীতাকুণ্ড এলাকায় প্রশাসন এবং স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
উপকূলজুড়ে সতর্কতা ও প্রাথমিক প্রস্তুতি
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই ১৪টি উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা করেছে।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, প্রতিটি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র পরিষ্কার করে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে মানুষ সরিয়ে নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ফেনী জেলার প্রায় ২,২০০ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া, প্রায় ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছেন, যারা ঘূর্ণিঝড়ের সময় উদ্ধার, খাদ্য বিতরণ, ও তথ্য প্রচারে কাজ করবেন।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনীও নৌযান চলাচলে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে এবং উদ্ধার সরঞ্জাম প্রস্তুত রেখেছে।
মেটিরোলজিক্যাল অবস্থা ও পূর্বাভাস
IMD-এর সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে একটি cyclonic circulation সক্রিয় রয়েছে। এটি আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
BMD জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় “শক্তি” গঠন পেলে এর প্রাথমিক প্রভাব পড়তে পারে খুলনা থেকে চট্টগ্রাম উপকূলজুড়ে বিস্তৃত এলাকায়।
চট্টগ্রাম বন্দরে ইতিমধ্যেই সতর্ক সংকেত নম্বর ৩ প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো ঝড়ের গতিপথ ও তীব্রতা নির্ধারণ করা যায়নি।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে; প্রয়োজনে সতর্কতা বাড়ানো হবে।
সম্ভাব্য প্রভাব: চট্টগ্রামের দিকে নজর
- বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতা:
চট্টগ্রাম নগরের নিম্নাঞ্চল, যেমন হালিশহর, চকবাজার, বাকলিয়া ও পতেঙ্গায় ভারি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। - সাগর উত্তালতা ও জলোচ্ছ্বাস:
কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী এলাকা, বিশেষ করে সন্দ্বীপ ও মহেশখালীতে ৩ থেকে ৪ ফুট উঁচু ঢেউয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। - বিদ্যুৎ ও যোগাযোগব্যবস্থা:
বাতাসের তীব্রতায় বিদ্যুৎ লাইন ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) জরুরি টিম প্রস্তুত রেখেছে। - কৃষি ও মৎস্যক্ষেত্র:
বাঁশখালী ও আনোয়ারা অঞ্চলের ধান ও সবজি ফসল ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। পাশাপাশি চিংড়ি ও মাছের ঘেরগুলোতে প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ও জনসচেতনতা
চট্টগ্রাম জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব জানিয়েছেন, “সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জনগণকে আতঙ্কিত না করে সচেতনতা বাড়াতে। প্রতিটি ইউনিয়নে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল ও রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট সক্রিয় রয়েছে।”
সিটি করপোরেশনের মেয়র জানান, নগরের জলাবদ্ধতা রোধে পাম্প ও ড্রেনেজ টিমগুলো প্রস্তুত রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জনসচেতনতা প্রচারে মাইকিং শুরু হয়েছে।
জনগণের জন্য নির্দেশিকা
- আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত আপডেট শুনুন।
•অপ্রয়োজনে সাগরে বা নদীপথে যাত্রা থেকে বিরত থাকুন।
• শুকনো খাবার, পানীয় ও ওষুধ মজুত রাখুন।
• বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে নিজ উদ্যোগে মেরামত না করে কর্তৃপক্ষকে জানান।
• বয়োবৃদ্ধ, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিদের আগে নিরাপদ স্থানে সরান।
সীমাবদ্ধতা ও বাস্তবতা
ঘূর্ণিঝড় “শক্তি” এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়নি। তাই সম্ভাব্য পথ, গতি ও প্রভাব নিয়ে মডেলগুলোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এখনই আতঙ্ক নয়, প্রস্তুতিই সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা।”