কলম্বোতে ভারতের দাপট
রবিবার কলম্বোতে অনুষ্ঠিত আইসিসি নারী বিশ্বকাপের এক উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ভারতীয় দল পাকিস্তানকে ৮৮ রানে হারিয়ে টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত সূচনা করল। হারলিন দিওলের স্থিতিশীল ব্যাটিং ও ঋচা ঘোষের ঝড়ো ইনিংসের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রিত বোলিং ছিল ভারতের জয়ের মূল চাবিকাঠি।
দিওল ও ঋচার ব্যাটিংয়ে দৃঢ় ভিত্তি
ধীরগতির উইকেটে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারত দ্রুত উইকেট হারালেও হারলিন দিওলের ৬৫ বলে ৪৬ রানের ইনিংস দলকে স্থিতিশীল করে। ওপেনার স্মৃতি মান্ধানার (২৩) বিদায়ের পর প্রতিকা রাওয়াল (৩১) কিছুটা গতি এনে দিলেও দলের ব্যাটিং ভরসা হয়ে ওঠেন দিওল।
দিওল গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হরমনপ্রীত কৌর (১৯) ও জেমিমা রদ্রিগেজ (৩২)-এর সঙ্গে দুটি জুটি গড়েন—একটি ৩৯ রানের, অন্যটি ৪৫ রানের। এই ভিত্তির ওপর শেষদিকে ঋচা ঘোষের ২০ বলে অপরাজিত ৩৫ রানের ঝড়ো ইনিংস ভারতকে ২৪৭ রানে পৌঁছে দেয়।
ক্রান্তি গৌড়ের আগুনঝরা বোলিং
২৪৮ রানের টার্গেটে পাকিস্তানের শুরুটা ছিল ভয়াবহ। মুনিবা আলি মাত্র ২ রান করে দীপ্তি শর্মার সরাসরি থ্রোতে রানআউট হন। এরপর ক্রান্তি গৌড় ধারাবাহিকভাবে সাদাফ শামাস (৬) ও আলিয়া রিয়াজ (২)-কে ফিরিয়ে দেন। পাকিস্তান তখন মাত্র ২৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায়।
গৌড়ের পাশাপাশি স্পিনার দীপ্তি শর্মা (৩/৪৫) ও স্নেহ রানা (২/৩৮) পাকিস্তানের মিডল ও লোয়ার অর্ডার ভেঙে দেন। শ্রী চরানি ও অন্যান্য বোলাররাও নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেন্থে বল করে রান রেট আটকে রাখেন।
সিদরা আমিনের প্রতিরোধ, কিন্তু ফল একই
মাঝে সিদরা আমিন (৮১ বলে ১০৬) ও নাটালিয়া পারভেজ (৩৩)-এর ৬৯ রানের জুটি কিছুটা লড়াই ফেরানোর চেষ্টা করেছিল। তবে পারভেজ আউট হওয়ার পর পাকিস্তানের উইকেট পড়তে থাকে নিয়মিত ব্যবধানে। সিদরার একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট হয়নি; শেষ পর্যন্ত পুরো দল ৪৩ ওভারে ১৫৯ রানে গুটিয়ে যায়।
অধিনায়কদের প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর বলেন, “দারুণ জয়, বিশেষ করে আমাদের বোলাররা অসাধারণ কাজ করেছে। ক্রান্তির পারফরম্যান্স অসাধারণ ছিল, আর ঋচার ইনিংস আমাদের স্কোরকে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে।”
ম্যাচসেরা ক্রান্তি গৌড় উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, “বিশ্বকাপে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হওয়া গর্বের। আমার গ্রামে সবাই আজ আনন্দিত হবে।”
অন্যদিকে পাকিস্তান অধিনায়ক ফাতিমা সানা স্বীকার করেন, “আমাদের জুটি গঠনে ব্যর্থতা ছিল মূল সমস্যা। সিদরা ভালো খেলেছে, কিন্তু দলের সমর্থন পাইনি।”
১২-০: ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে ভারতের ধারাবাহিক আধিপত্য
এই জয়ের মাধ্যমে নারী ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের রেকর্ড দাঁড়াল ১২-০। ম্যাচটি আবারও প্রমাণ করল ভারতের নিয়ন্ত্রিত বোলিং, ধৈর্যশীল ব্যাটিং ও শেষের আক্রমণাত্মক মানসিকতাই তাদের সাফল্যের ভিত্তি। এই জয় তাদের বিশ্বকাপে গতি ও আত্মবিশ্বাস—দুটোই আরও বাড়িয়ে দিল।