০৮:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫
একটি নতুন কবিতা শোনার জন্যে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইউরোপ সফর: ইতালি ও সুইজারল্যান্ডে নতুন কূটনৈতিক গতি ডিফেন্স বাজেটের মাধ্যমে বিশ্ব সেবার তথ্য ভুল প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অর্থায়নের প্রস্তাব চীনের পৃথিবীতে সর্ববৃহৎ ফ্লোটিং উইন্ড টারবাইন সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে  ঢাকার শেয়ারবাজারে সূচক পতন, চট্টগ্রামে উত্থান চীনা খনন কোম্পানির বিরুদ্ধে ৮০ বিলিয়ন ডলারের মামলা: জ্যাম্বিয়ার সরকারের জন্য কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব মালয়েশিয়ায় হুইস্কি পরিবেশনের ঘটনায় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পদত্যাগের দাবি বিটকয়েনের ১ লাখ ২৫ হাজার ডলারের উত্থান: আস্থার নতুন ইঙ্গিত ১০২ বছরের ইয়োগাশিক্ষকের প্রাণশক্তি: ইয়োগচর্চায় দীর্ঘ জীবনের রহস্য

অভিনয়ের মঞ্চে মানবতার প্রতিধ্বনি

মানবতার গভীর উপলব্ধি

বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিনেত্রী প্যাট্রিসিয়া রাউটলেজ ছিলেন এক বিরল প্রতিভা, যিনি সমান দক্ষতায় অভিনয় করেছেন মিউজিক্যাল, ক্লাসিক নাটক ও আধুনিক ড্রামায়। তাঁর অভিনয়ের মূল শক্তি ছিল মানুষকে গভীরভাবে বোঝার ক্ষমতা—বিশেষ করে সমাজের ব্যতিক্রমী ও একাকী মানুষদের মানবিক দৃষ্টিতে দেখার সক্ষমতা।

রাউটলেজের এই গুণ স্পষ্ট ছিল তাঁর জনপ্রিয় চরিত্র ‘হায়াসিন্থ বাকেট’ (যা তিনি নিজে উচ্চারণ করতেন ‘বুকে’)। টিভি সিরিজ কিপিং আপ অ্যাপিয়ারেন্সেস-এ তাঁর সূক্ষ্ম হাস্যরস ও চরিত্রের মানবিকতা দর্শকদের কাছে তাঁকে অমর করে তোলে। একইভাবে, থিয়েটারে দ্য রাইভালস নাটকের ‘মিসেস মালাপ্রপ’-এর ভূমিকাতেও তিনি দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলেন।

তিনি একবার মাইকেল পার্কিনসনকে বলেছিলেন, “অভিনয় কেবল পর্যবেক্ষণ নয়, এটি মানুষের ভেতর ঢুকে তাদের অনুভব করা, আমি অনেক শুনি।” এই মনোযোগী শোনা ও মানুষকে বোঝার দক্ষতাই তাঁর অভিনয়কে জীবন্ত করে তুলেছিল।

নিঃসঙ্গতা ও মানবিক সংবেদন

অ্যালান বেনেটের টকিং হেডস সিরিজে রাউটলেজের মানবিকতার প্রকাশ ছিল গভীর। এ ওম্যান অব নো ইম্পর্ট্যান্স নাটকে তিনি অভিনয় করেছিলেন এমন এক কর্মচারীর চরিত্রে, যিনি জীবনের একঘেয়েমি ও নিঃসঙ্গতায় শেষমেশ হাসপাতালে একা পড়ে থাকেন। অন্যদিকে এ লেডি অব লেটার্স-এ তিনি এমন এক চিঠি লিখে মানুষকে বিরক্ত করা মহিলার ভূমিকায় ছিলেন, যিনি শেষ পর্যন্ত কারাগারে গিয়ে এমন এক বন্ধুত্ব পান, যা বাইরের দুনিয়ায় কখনও পাননি।

এই দুটি চরিত্রে রাউটলেজ দেখিয়েছেন, একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গ মানুষের ভেতরে কী গভীর মানবিকতা লুকিয়ে থাকে।

মঞ্চে গানে ও নাটকে অসাধারণ বহুমুখিতা

রাউটলেজের প্রতিভা শুধু নাটক বা টেলিভিশনেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি মিউজিক্যালেও ছিলেন সমান দক্ষ। ১৯৬৮ সালে ডার্লিং অব দ্য ডে মিউজিক্যাল-এ তাঁর অভিনয়ের জন্য তিনি টনি পুরস্কার অর্জন করেন।

RIP Patricia Routledge: from Bernstein to Bucket, a life less ordinary

পরে ১৯৮৮ সালে ক্যান্ডিড-এর পুনরুজ্জীবিত সংস্করণে ‘ওল্ড লেডি’-র চরিত্রে তাঁর অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। আবার ১৯৯২ সালে নিকোলাস হাইটনারের পরিচালনায় ক্যারোসেল-এ ‘নেটি ফাউলার’ চরিত্রে তিনি ইউল নেভার ওয়াক অ্যালোন গানটি এমন আবেগময় সরলতায় পরিবেশন করেন যে তা দর্শকদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলে।

সম্মাননা ও উত্তরাধিকার

রাউটলেজকে ২০১৭ সালে ‘ডেম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যা ছিল তাঁর শিল্পসাধনার এক উজ্জ্বল স্বীকৃতি। তাঁর পুরো কর্মজীবনজুড়ে একটি বিষয় স্পষ্ট—মানুষের প্রতি তাঁর সীমাহীন সহানুভূতি ও গভীর উপলব্ধি।

তিনি প্রমাণ করেছেন, অভিনয় কেবল বিনোদন নয়; এটি মানবতার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার এক শিল্প। তাঁর প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি সংলাপ ও অভিব্যক্তিতে সেই মানবিকতার আলো আজও সমানভাবে ঝলমল করছে।

#প্যাট্রিসিয়া_রাউটলেজ, ব্রিটিশ_থিয়েটার, মিউজিক্যাল, মানবতা।

জনপ্রিয় সংবাদ

একটি নতুন কবিতা শোনার জন্যে

অভিনয়ের মঞ্চে মানবতার প্রতিধ্বনি

০৬:৩৫:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

মানবতার গভীর উপলব্ধি

বিখ্যাত ব্রিটিশ অভিনেত্রী প্যাট্রিসিয়া রাউটলেজ ছিলেন এক বিরল প্রতিভা, যিনি সমান দক্ষতায় অভিনয় করেছেন মিউজিক্যাল, ক্লাসিক নাটক ও আধুনিক ড্রামায়। তাঁর অভিনয়ের মূল শক্তি ছিল মানুষকে গভীরভাবে বোঝার ক্ষমতা—বিশেষ করে সমাজের ব্যতিক্রমী ও একাকী মানুষদের মানবিক দৃষ্টিতে দেখার সক্ষমতা।

রাউটলেজের এই গুণ স্পষ্ট ছিল তাঁর জনপ্রিয় চরিত্র ‘হায়াসিন্থ বাকেট’ (যা তিনি নিজে উচ্চারণ করতেন ‘বুকে’)। টিভি সিরিজ কিপিং আপ অ্যাপিয়ারেন্সেস-এ তাঁর সূক্ষ্ম হাস্যরস ও চরিত্রের মানবিকতা দর্শকদের কাছে তাঁকে অমর করে তোলে। একইভাবে, থিয়েটারে দ্য রাইভালস নাটকের ‘মিসেস মালাপ্রপ’-এর ভূমিকাতেও তিনি দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলেন।

তিনি একবার মাইকেল পার্কিনসনকে বলেছিলেন, “অভিনয় কেবল পর্যবেক্ষণ নয়, এটি মানুষের ভেতর ঢুকে তাদের অনুভব করা, আমি অনেক শুনি।” এই মনোযোগী শোনা ও মানুষকে বোঝার দক্ষতাই তাঁর অভিনয়কে জীবন্ত করে তুলেছিল।

নিঃসঙ্গতা ও মানবিক সংবেদন

অ্যালান বেনেটের টকিং হেডস সিরিজে রাউটলেজের মানবিকতার প্রকাশ ছিল গভীর। এ ওম্যান অব নো ইম্পর্ট্যান্স নাটকে তিনি অভিনয় করেছিলেন এমন এক কর্মচারীর চরিত্রে, যিনি জীবনের একঘেয়েমি ও নিঃসঙ্গতায় শেষমেশ হাসপাতালে একা পড়ে থাকেন। অন্যদিকে এ লেডি অব লেটার্স-এ তিনি এমন এক চিঠি লিখে মানুষকে বিরক্ত করা মহিলার ভূমিকায় ছিলেন, যিনি শেষ পর্যন্ত কারাগারে গিয়ে এমন এক বন্ধুত্ব পান, যা বাইরের দুনিয়ায় কখনও পাননি।

এই দুটি চরিত্রে রাউটলেজ দেখিয়েছেন, একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গ মানুষের ভেতরে কী গভীর মানবিকতা লুকিয়ে থাকে।

মঞ্চে গানে ও নাটকে অসাধারণ বহুমুখিতা

রাউটলেজের প্রতিভা শুধু নাটক বা টেলিভিশনেই সীমাবদ্ধ ছিল না; তিনি মিউজিক্যালেও ছিলেন সমান দক্ষ। ১৯৬৮ সালে ডার্লিং অব দ্য ডে মিউজিক্যাল-এ তাঁর অভিনয়ের জন্য তিনি টনি পুরস্কার অর্জন করেন।

RIP Patricia Routledge: from Bernstein to Bucket, a life less ordinary

পরে ১৯৮৮ সালে ক্যান্ডিড-এর পুনরুজ্জীবিত সংস্করণে ‘ওল্ড লেডি’-র চরিত্রে তাঁর অভিনয় ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। আবার ১৯৯২ সালে নিকোলাস হাইটনারের পরিচালনায় ক্যারোসেল-এ ‘নেটি ফাউলার’ চরিত্রে তিনি ইউল নেভার ওয়াক অ্যালোন গানটি এমন আবেগময় সরলতায় পরিবেশন করেন যে তা দর্শকদের হৃদয়ে গভীর ছাপ ফেলে।

সম্মাননা ও উত্তরাধিকার

রাউটলেজকে ২০১৭ সালে ‘ডেম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়, যা ছিল তাঁর শিল্পসাধনার এক উজ্জ্বল স্বীকৃতি। তাঁর পুরো কর্মজীবনজুড়ে একটি বিষয় স্পষ্ট—মানুষের প্রতি তাঁর সীমাহীন সহানুভূতি ও গভীর উপলব্ধি।

তিনি প্রমাণ করেছেন, অভিনয় কেবল বিনোদন নয়; এটি মানবতার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার এক শিল্প। তাঁর প্রতিটি চরিত্র, প্রতিটি সংলাপ ও অভিব্যক্তিতে সেই মানবিকতার আলো আজও সমানভাবে ঝলমল করছে।

#প্যাট্রিসিয়া_রাউটলেজ, ব্রিটিশ_থিয়েটার, মিউজিক্যাল, মানবতা।