বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাম্প্রতিক নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানিয়েছেন, তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে নির্দ্বিধায় জয়ী হতেন। তবে এই নির্বাচন প্রকৃত অর্থে ছিল না প্রতিযোগিতামূলক—বরং সরকারি হস্তক্ষেপ, বিতর্কিত ভোটার তালিকা ও ই-ভোটিং ব্যবস্থার অনিয়মে আচ্ছন্ন ছিল বলে দাবি করেন তিনি। নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় সংগঠক মহল বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে, ফলে ঘরোয়া ক্রিকেট কার্যক্রম নতুন করে অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেননি তামিম
ঢাকা ক্লাব ক্রিকেট সংগঠক সমিতির ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তামিম বলেন, পরিষ্কার ও অবাধ ভোটের পরিবেশ না থাকায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর ভাষায়, ১৫টি ক্লাব থাকুক বা না থাকুক—ভোটাররা তাঁকেই সমর্থন দিতেন; কাউকে তোষামোদ করা বা সমঝোতায় যাওয়ার প্রয়োজন তাঁর ছিল না। তিনি কেবল ‘স্বচ্ছ নির্বাচন’ চেয়েছিলেন, ক্ষমতার সমীকরণ নয়।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ
তামিমের সঙ্গে আরও কয়েকজন প্রার্থী অভিযোগ করেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সরকারি হস্তক্ষেপ হয়েছে। বিএনপির নেতা আমিনুল হক অভিযোগ তোলেন—ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ প্রার্থীদের উপরে চাপ প্রয়োগ করেছেন। তবে এ বিষয়ে ওই উপদেষ্টার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন সংগঠকরা।
ভোটাধিকার ও ১৫ নতুন ক্লাব নিয়ে বিতর্ক
ভোটের আগে আদালত অস্থায়ীভাবে তৃতীয় বিভাগের নবপ্রমোশন পাওয়া ১৫ ক্লাবের ভোটাধিকার স্থগিত করেছিল; কিন্তু ভোটের আগমুহূর্তে ওই আদেশ প্রত্যাহার হয়ে যায়। এই আকস্মিক সিদ্ধান্তেই পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়া ঘিরে বিতর্ক আরও তীব্র হয়ে ওঠে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত
ভোটের ফল ঘোষণার আগেই সোমবার রাতে আমিনুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনরায় সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। সহ-সভাপতি পদেও শাখাওয়াত হোসেন ও ফারুক আহমেদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচিত হন। এতে অনেক সংগঠকের কাছে গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়াটি ‘প্রহসন’ বলে মনে হয়েছে।
সংগঠকদের বয়কট ঘোষণা
ঢাকার বড় কয়েকটি ক্লাবসহ সংগঠকদের জোট ঘোষণা দিয়েছে—পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা লিগ ও বিভাগীয় সব ক্রিকেট বয়কট করবে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান বলেন, তারা ‘অবৈধ সভাপতি’ মেনে নেন না এবং আলোচনার কোনো সুযোগ নেই।
ই-ভোটিং নিয়ে তামিমের প্রশ্ন
তামিম ই-ভোটিং ব্যবস্থাকেও প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর অভিযোগ, মোট ৪৩ ভোটের মধ্যে ৩৪টি ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে নেওয়া হয়—এমনকি প্রার্থীদের নিজেদের ভোটও ই-ভোটিংয়ে দিতে হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, যখন সবাই উপস্থিত ছিলেন, তখন সরাসরি ভোটগ্রহণের বদলে ই-ভোটিংয়ের প্রয়োজন কী ছিল?
অচলাবস্থায় ঘরোয়া ক্রিকেট
সংগঠকদের বয়কটে ঘরোয়া ক্রিকেট কার্যক্রম কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। তামিম স্বীকার করেন—এই অচলাবস্থায় খেলোয়াড়রা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে দায় তিনি বর্তমান নির্বাচনী আয়োজকদের ওপর চাপান। তাঁর ভাষায়, এমন নির্বাচন আয়োজনের আগে আয়োজকদেরই ক্রিকেটারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। ক্রিকেটাররা স্বচ্ছতা ও ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া প্রাপ্য—আড়ালের সমঝোতা নয়।
#BCB #TamimIqbal #BangladeshCricket #ElectionDispute #SportsNews #সারাক্ষণরিপোর্ট