বাগানচর্চার শিকড়: শৈশবের টোলাগা বে থেকে শুরু
নিউজিল্যান্ডের গিসবর্ন অঞ্চলের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত টোলাগা বে-তে বড় হয়েছেন অ্যাড্রিয়ান সাদারল্যান্ড। শৈশবে দাদু-দাদির বাগানে খেলাধুলার স্মৃতি আজও তাঁকে অনুপ্রেরণা দেয়। ছোটবেলা থেকেই গাছপালা ও বাগানচর্চার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল তাঁর। মাধ্যমিক স্কুল জীবন থেকেই তিনি যেখানেই থাকতেন, ছোট একটি বাগান তৈরি করতেন।
সাত বছর অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে খনিশিল্পে কাজ করার পর তিনি আবার প্রকৃতির কাছাকাছি ফিরতে চান। “সবুজ গ্রামীণ জীবনের প্রতি আকর্ষণই আমাকে আবার গাছ লাগাতে এবং চাষাবাদে ফিরিয়ে এনেছে,” বলেন সাদারল্যান্ড। স্ত্রী বং (Bong)-কে নিয়ে তিনি এখন গিসবর্নে এক চতুর্থাংশ একর জমিতে বাস করেন, যেখানে রয়েছে শতাধিক ফলগাছ, নানা ধরনের সবজি ও ভেষজ উদ্ভিদ।
পরিবারভিত্তিক ‘কাই’ চাষ: মেয়েকে শেখানো স্বাভাবিক জীবনধারা
অ্যাড্রিয়ানের মেয়ে লিলি মেলোডি যার বয়স পাঁচ হতে যাচ্ছে, নিয়মিত বাবার বাগানচর্চার ভিডিওতে দেখা যায়। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এই ভিডিওগুলোতে সে নিজেই বীজ বপন ও গাছের যত্নে অংশ নেয়। অ্যাড্রিয়ানের লক্ষ্য, “আমি চাই লিলির কাছে খাবার উৎপাদন যেন জীবনের স্বাভাবিক অংশ হয়—দাঁত ব্রাশ করার মতোই সহজ ও অভ্যাসগত।”
তিনি বলেন, “আমি চাই না সে মনে করুক বাগান করা কোনো বিশেষ কাজ। এটা আমাদের জীবনের সাধারণ অংশ, আমাদের বাড়িতেই আমরা খাদ্য উৎপাদন করি।”
‘ওয়ান মিনিট গার্ডেনিং’: সহজ ভাষায় শিক্ষার নতুন ধারা
অ্যাড্রিয়ান ফেসবুকে ‘One Minute Gardening’ নামে একটি পেজ চালু করেন, যেখানে তিনি এক মিনিটের ভিডিওতে সহজভাবে চাষাবাদের কৌশল শেয়ার করেন। বর্তমানে তাঁর পেজে প্রায় ৩৬,০০০ ফলোয়ার ফেসবুকে এবং ৮,০০০এর বেশি ইনস্টাগ্রামে।
“অনেক নতুন বাগানপ্রেমী আছে যারা অতিরিক্ত তথ্যের ভিড়ে হতাশ হয়ে পড়ে,” বলেন অ্যাড্রিয়ান। “তাই আমি ভিডিওগুলোকে যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত রাখি, যেন যে কেউ সহজে বুঝতে পারে। আমার উদ্দেশ্য হলো দেখানো—চাষাবাদ কোনো ‘জাদুকরি’ দক্ষতা নয়; ব্যর্থতা আসবেই, কিন্তু চেষ্টা করলেই শেখা যায়।”
তিনি নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই এই ধারণা পান। “যখন আমি ইউটিউবে বাগান শেখার ভিডিও দেখতাম, সেখানে দীর্ঘ ভূমিকা ও অপ্রয়োজনীয় আলাপ পেতাম। তখন ভাবলাম, আমি যদি এক মিনিটে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলতে না পারি, তাহলে সেটা অপ্রয়োজনীয় কথাই হবে।”
বাগানে স্বনির্ভরতা নয়, স্ব-সহায়কতা
সাদারল্যান্ড নিজেকে ‘স্বনির্ভর’ নয়, বরং ‘স্ব-সহায়ক’ মানুষ বলতে পছন্দ করেন। “আমরা কিছু খাবার নিজেরা উৎপাদন করি, তবে বাজারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই না,” বলেন তিনি। “যেমন কলা আমরা প্রচুর খাই। কিছু গাছে ফল আসে ঠিকই, কিন্তু আমাদের চাহিদা পূরণ হয় না। তাই আমরা সুপারমার্কেটেও যাই—শুধু শাকসবজির জন্য খুব বেশি নির্ভর করি না।”
অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষ ও মাটির যত্ন
অ্যাড্রিয়ান সম্পূর্ণভাবে রাসায়নিকমুক্ত পদ্ধতিতে তাঁর বাগান পরিচর্যা করেন। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে লিলির প্রথম শক্ত খাবার ছিল আমার লাগানো কুমড়া। স্তন্যপান শেষে তার প্রথম খাবার বাবার হাতে উৎপাদিত ফসল—এটা ছিল আমার জন্য গর্বের।”
গিসবর্নের হালকা উষ্ণ আবহাওয়া চাষের কাজের জন্য উপযোগী। শীতকালে কিছুদিন তুষারপাত হয়, তবে বাকি সময় মাটি উর্বর রাখতে তিনি নিয়মিত কম্পোস্ট, পাতার সার এবং ভেড়ার গোবর ব্যবহার করেন।
সমাজে বার্তা: বাগানচর্চাকে আবার ‘স্বাভাবিক’ করা
অ্যাড্রিয়ান বিশ্বাস করেন, নিউজিল্যান্ডে গত কয়েক দশকে বাড়িতে খাদ্য উৎপাদন অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। তাই তাঁর লক্ষ্য এই ধারণাটিকে আবার স্বাভাবিক জীবনের অংশ করে তোলা।
তিনি বলেন, “বাগান করা নিয়ে বড় কোনো পুরস্কার বা নাটকীয়তা প্রয়োজন নেই। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হওয়া উচিত—এক মিনিট সময় দিন, একটা বীজ লাগান, আর দেখুন কীভাবে জীবন বদলে যায়।”