ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার রাতে ফুটবলপ্রেমীরা দেখলেন এক অনবদ্য রোমাঞ্চ। সাত গোলের নাটকীয় ম্যাচে এগিয়ে থেকেও শেষ মুহূর্তে হংকংয়ের কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ। স্কোরলাইন ৪–৩—এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের আশা প্রায় শেষ হয়ে গেল জামাল ভূঁইয়াদের দলের।
শুরুর আনন্দ, শেষের কান্না
ম্যাচের ১৩ মিনিটেই দুর্দান্ত ফ্রি–কিকে গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে দেন হামজা চৌধুরী।
কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ সেকেন্ডে সমতা ফেরান হংকংয়ের ব্রাজিলীয় বংশোদ্ভূত ফরোয়ার্ড এভারটন কামারগো।
দ্বিতীয়ার্ধে পুরো চিত্র বদলে যায়। বাংলাদেশের রক্ষণভাগে একের পর এক ভুলে সুযোগ পান বদলি ফরোয়ার্ড রাফায়েল মেরকিচ—যিনি দ্বিতীয়ার্ধে হ্যাটট্রিক করেন।
বাংলাদেশের হয়ে শেখ মোরছালিন ৮৪ মিনিটে একটি ও শমিত সোম যোগ করা সময়ে (৯০+৯’) হেডে আরেকটি গোল করে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেন।
কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে (৯০+১১’) মেরকিচের তৃতীয় গোলেই শেষ হয়ে যায় সব আশা।
ফলাফল—হংকং ৪, বাংলাদেশ ৩।
রক্ষণভাগের ভাঙন, কোচের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন
বাংলাদেশের রক্ষণভাগের দুর্বলতা আবারও প্রকটভাবে ধরা পড়েছে।
জুনিয়র সোহেল রানার ভুল ব্যাক পাস থেকে আসে দ্বিতীয় গোল, আর সাদ উদ্দিনের পায়ের ফাঁক গলে তৃতীয় গোল।
শেষ মুহূর্তে রক্ষণে বিশৃঙ্খল অবস্থানই ম্যাচ নির্ধারণ করে দেয়।
কোচ হাভিয়ের কাবরো ম্যাচ শেষে বলেন,
“আমরা লড়েছি শেষ পর্যন্ত, কিন্তু রক্ষণে সামান্য ভুলের মূল্য দিতে হলো।”
তবে ফুটবল বিশ্লেষকদের মতে, দলে কৌশলগত পরিবর্তনে দেরি এবং মানসিক দৃঢ়তার অভাবই ছিল পরাজয়ের মূল কারণ।
উজ্জ্বল মুহূর্তগুলো
হামজা চৌধুরীর ফ্রি–কিক গোল ছিল ইউরোপীয় মানের;
মোরছালিন ও শমিত সোমের গোল দেখিয়েছে লড়াই করার মানসিকতা এখনো জাগ্রত।
তিন তরুণই প্রমাণ করেছেন—বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন আশার আলো এখনো নিভে যায়নি।
অন্যদিকে, হংকংয়ের রাফায়েল মেরকিচ তিন গোল করে ম্যাচের নায়ক হয়ে ওঠেন, এবং তাঁর নেতৃত্বেই হংকং টানা দ্বিতীয়বার এশিয়ান কাপের মূল পর্বের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়।
সমর্থকদের উল্লাস থেকে নিস্তব্ধতা
পুরো ম্যাচজুড়ে গ্যালারিতে ছিল উচ্ছ্বাস, স্লোগান আর ঢোলের শব্দ।
কিন্তু শেষ বাঁশি বাজতেই মাঠে নেমে আসে স্তব্ধতা।
এক দর্শক বলেন,
“শেষ মুহূর্তের সেই গোলটা যেন বুক ভেঙে দিল।”
আগামী পথ
তিন ম্যাচে বাংলাদেশের পয়েন্ট মাত্র এক—গ্রুপে সর্বনিম্ন অবস্থান।
ভারত ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জয় ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন,
“ফল নয়, এই ম্যাচের লড়াইটাই ভবিষ্যতের আশা।”
হয়তো একদিন, এই হারের বেদনা থেকেই জন্ম নেবে বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন জয়ের অধ্যায়।
#বাংলাদেশফুটবল #AsianCup2025 #HamzaChoudhury #RaphaelMerkich #ShamitShome #SarakkhonReport