ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রকাশ, গত ছয় বছরে নিহত চালকদের প্রায় ৪০ শতাংশের রক্তে পাওয়া গেছে মারিজুয়ানার সক্রিয় উপাদান টিএইচসি। নিরাপদ গাড়ি ও কম অ্যালকোহল গ্রহণ সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুহার বাড়ছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে জনস্বাস্থ্যের জন্য এক নতুন সংকেত।
ওহাইওতে নতুন গবেষণায় উদ্বেগজনক তথ্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের মন্টগোমারি কাউন্টিতে চালকদের মৃত্যুর ঘটনায় করা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, গত ছয় বছরে নিহত চালকদের ৪০ শতাংশের রক্তে পাওয়া গেছে মারিজুয়ানার সক্রিয় উপাদান টিএইচসি (THC)। রাইট স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংগৃহীত ড্রাইভারদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে এই ফলাফল প্রকাশ করেছেন।
গবেষণায় দেখা যায়, গড়ে প্রতি নিহত চালকের রক্তে টিএইচসির মাত্রা ছিল ৩০.৭ ন্যানোগ্রাম—যা বেশিরভাগ রাজ্যের নেশাগ্রস্ততার সীমার চেয়ে ছয় গুণ বেশি। বর্তমান মারিজুয়ানা অতীতের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেশি শক্তিশালী হওয়ায়, সামান্য পরিমাণেও মানসিক ভারসাম্য হারানোর আশঙ্কা থাকে।
নিরাপদ গাড়ি, কম মদ্যপান—তবুও বাড়ছে মৃত্যুহার
গত এক দশকে গাড়ির নিরাপত্তা প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে এবং অ্যালকোহল গ্রহণ কমেছে, তবুও সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। গবেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন—এর পেছনে মারিজুয়ানার ব্যবহার কতটা ভূমিকা রাখছে?
একটি ফেডারেল সমীক্ষা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের প্রায় এক-চতুর্থাংশ গত এক মাসে মারিজুয়ানা ব্যবহার করেছে, আর ২৬ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে এই হার প্রায় ১৫ শতাংশ।
প্রশাসনের জন্য সতর্কবার্তা
এই গবেষণার ফলাফল আমেরিকান কলেজ অব সার্জনসের এক সম্মেলনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তথ্য ট্রাম্প প্রশাসনকে মারিজুয়ানার শ্রেণিবিন্যাস পরিবর্তনের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করা উচিত।
মারিজুয়ানাকে “কম ঝুঁকিপূর্ণ” মাদক হিসেবে ঘোষণা করা হলে, তা জনগণের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করবে যে এটি তেমন ক্ষতিকর নয়—যদিও বাস্তবে তা নয়।
শারীরিক ক্ষতির প্রমাণ
বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মারিজুয়ানা হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ও মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে।
‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলজি’-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছরের কম বয়সী মারিজুয়ানা ব্যবহারকারীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অব্যবহারকারীদের তুলনায় ছয় গুণ বেশি এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি চার গুণ বেশি।
বৈধতা পেলেও অবৈধ বাজার কমেনি
মারিজুয়ানা বৈধ করার অন্যতম যুক্তি ছিল—এতে অবৈধ বাজার কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ক্যালিফোর্নিয়ার কর্মকর্তারা গত মাসে ২০ হাজারেরও বেশি অবৈধ গাঁজা গাছ ধ্বংস করেছেন, যা পরিচালিত হচ্ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে।
অভিযানে তারা বিপজ্জনক কীটনাশক ও আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার করেছেন যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ।
সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজন
ক্যালিফোর্নিয়ার এক বন্যপ্রাণ কর্মকর্তা বলেন, “যখন অপরাধীরা প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করে ক্যালিফোর্নিয়ার জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করছে, আমরা তা প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর।”
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—মারিজুয়ানা ব্যবহারকারীদের নিজেদের ক্ষতির ব্যাপারে কে সতর্ক করবে?
দেশজুড়ে এমন একটি সংগঠনের প্রয়োজন, যার নাম হতে পারে “মাদারস এগেইনস্ট ড্রাগড ড্রাইভার্স”—যারা মাদকাসক্ত চালকদের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করবে।